ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
১২৭৯

মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮  

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাটি শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল তাদের মধ্যে চট্গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) অন্যতম।

১৯৬৬ সালের নভেম্বরে পথচলা শুরু করেছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। পথচলার কয়েক বছর না পেরুতেই ডাক আসে স্বাধীনতার। দীর্ঘ ২৩ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন, পরাধীনতার শৃঙ্খল, বৈষম্য আর নীপিড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে ওঠে চবিতে।

বয়সে নবীন হলেও মহান মুক্তিযুদ্ধে চবির অবদান অসামান্য। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে এনেছিল নতুন উদ্যম আর স্বাধীনতার তীব্র স্পৃহা।


সংগ্রাম পরিষদ গঠন:

রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আজিজুর রহমান মল্লিকের সভাপতিত্বে বাণিজ্য বিভাগের একটি কক্ষে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় গণিত বিভাগের অধ্যাপক ফজলী হোসেন ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব তালুকদারকে আহবায়ক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়ে “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ” গঠন করা হয়।

অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ:

সংগ্রাম পরিষদ গঠনের পর সবাইকে সংগঠিত করার পাশাপাশি ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. ইনামুল হকের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ কর্মসূচী হাতে নেয়া হয় যাতে সম্মুখ সমরে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। তাছাড়া পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল হক, এখলাস উদ্দিন আহমদ ও মিছবাহ উদ্দিন আহমদের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে মলোটভ ককটেল তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

চাকসুর প্রথম ভিপি মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও জিএস আবদুর রব সশ্স্ত্র বাহিনীর বাঙ্গালি সদস্যদের অস্ত্র জমা না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে মার্চে ১০ তারিখ একটি বিবৃতি দেন। জিএস আবদুর রব মুক্তিযুদ্ধাদের ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানোর কাজে লেগে পড়েন।


 
১৫ মার্চ লালদিঘি মাঠে অধ্যাপক আবুল ফজলের সভাপতিত্বে শিল্পী সাহিত্যিক সংস্কৃতিসেবী প্রতিরোধ সংঘের উদ্যোগে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ছাত্রদের পক্ষ থেকে চাকসুর জিএস আবদুর রব বক্তব্য রাখেন।


যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ:

চবির তৎকালীন গ্রণ্থগারিক শামসুল আলমের বাসায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন হারুন আহমেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন অলি আহমদ, ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান ও আওয়ামিলীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সারসহ সামরিক বেসমারিক গণ্যমান্য অনেক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে পাকিস্তানি বাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে করণীয় এবং যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হয়।

“স্বাধীনতার সংগ্রাম”

২৪ মার্চ, ১৯৭১ । চবি প্রাক্তন ছাত্র সমিতির উদ্যোগে চট্টগ্রাম নগরের প্যারেড মাঠে “স্বাধীনতার সংগ্রাম”শীর্ষক অনুপ্রেরণমূলক একটি নাটক পরিবেশিত হয়। দর্শক সংখ্যা ছিল প্রায় লাখের কাছাকাছি। নাটক চলাকালীন সময়েই খবর আসে পতেঙ্গা বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে পাকিস্তানি হানাদারদের অস্ত্র খালাসে বাধা দিচ্ছে সাধারণ জনতা। তাই পাক বাহিনী জনতার উপর গুলি ছুঁড়ছে। দাবানলের মতো মূহুর্তেই এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। তড়িগড়ি করে নাটক শেষ করে প্রায় দশ হাজার উপস্থিত দর্শক মিছিল সহকারে বন্দর পানে ছুটে গিয়েছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধের জন্য।


২৫ মার্চের পর…

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক বাহিনী ‘অপারেশণ সার্চলাইট’ নাম দিয়ে রাতের আধারে ঘুমন্ত, নিরস্ত্র, নিরীহ বাঙ্গালিদের উপর শুরু করে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা। শুরু হয়ে যায় মহান মুক্তিযুদ্ধ। এ প্রেক্ষিতে ‘চবি সংগ্রাম পরিষদ’ ২৬ মার্চ ভোরবেলা জরুরী সভা করে। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আজিজুর রহমান মল্লিক, ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম ও জিএস আবদুর রবসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সভায় আশংকা করা হয় পাকিস্তানি বাহিনী যে কোন সময় ক্যাম্পাস দখলে নেয়ার জন্য আক্রমণ চালাতে পারে। তাই পাক বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ইপিআর বাঙালি সেনা ও গ্রামবাসীর সমন্বয়ে ক্যাম্পাসের চতুর্দিকে পাহারা বসানো হয়।

পাক সেনাদের দখলে চবি:

সংগ্রাম পরিষদের আশংকা-ই সত্যি হলো। পাক বাহিনী এ দিনই বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নিতে আক্রমণ শুরু করে। সংগ্রাম পরিষদ ও আলাওল হলকে ঘাঁটি বানিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যদের আক্রমণের পাল্টা জবাব দিতে থাকে।শুরু হয় তুমুল লড়াই। চলে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ১০ দিন। আধুনিক অস্ত্র আর প্রশিক্ষিত পাক সেনাদের সাথে পেরে উঠতে পারেনি চবি স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদ । কোন উপায় ছিলনা, বাধ্য হয়েই তারা পিছু হটে। পাক সৈন্যরা দখলে নেয় চবি ক্যাম্পাস। গড়ে তোলে কনসেন্ট্রশন ক্যাম্প। সবুজ-শ্যামল ক্যাম্পাসটাকে তারা বানিয়েছিল মৃ্ত্যুপুরী, বানিয়েছিল তাদের অপকর্মের কেন্দ্রস্থল। দীর্ঘ নয় মাস ধরে এ অবস্থা চলতে থাকে। দেশ স্বাধীন হওয়া তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তখনো চবি ক্যাম্পসের ঘাঁটিতে অবস্থান করে পাক হানাদার বাহিনী তাদের হত্যাযজ্ঞ আর নানা অপকর্ম চালিয়ে যেতে থাকে ।

চূড়ান্ত বিজয়:

১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১। জাফর ইমামের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধারা চবিতে অভিযান শুরু করে। এবার আর পিছু হটা নয়। গড়ে তোলা হয় প্রতিরোদের দুর্ভেদ্য দেয়াল। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ বাংলার আকাশে উড়ছে বিজয় কেতন। পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ নামক সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া ছোট্ট একটি স্বাধীন দেশ।

চারদিকে জয় বাংলা ধ্বনি। কিন্তু তখনো চবিতে পাক বাহিনীর সাথে লড়াই করে যাচ্ছে বাংলা মায়ের একদল দামাল ছেলে। অবশেষে টানা এগার দিনের অভিযানের সমাপ্তি ঘটে ২৫ ডিসেম্বর। এ দিন মুক্তিযুদ্ধাদের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় পাক বাহিনী। দেশ স্বাধীনের নয় দিন পর চবিতে উড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা।


মুক্তিযুদ্ধে আত্নদানকারী চবির সূর্যসন্তানেরা:

মুক্তিযুদ্ধে চবির ১ জন শিক্ষক, ১৩ জন ছাত্র ও ৩ জন কর্মকর্তাসহ মোট ১৫ জন শহীদ হন। চাকসুর প্রথম জিএস এবং ইতিহাস বিভাগের ছাত্র আব্দুর রব, দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক অবনী মোহন দত্ত, বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তরের চেইনম্যান বীরপ্রতীক মোহাম্মদ হোসেন, উপ সহকারী প্রকৌশলী প্রভাস কুমার বড়ুয়া, ইংরেজী বিভাগের ছাত্র আশুতোষ চক্রবর্তী, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবুল মনসুর, বাণিজ্য অনুষদের ছাত্র খন্দকার এহসানুল হক আনসারী, ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ফরহাদ-উদ- দৌলা, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ, আলাওল হলের প্রহরী সৈয়দ আহমদ , অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র নাজিম উদ্দিন খান ও আবদুল মান্নান বাংলা বিভাগের ছাত্র মুহাম্মদ , মোস্তফা কামাল ও মনিরুল ইসলাম খোকা দেশের স্বাধীনতার জন্য বুকের তাজ রক্ত ঢেলে দেন।

স্মরণ :

মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্নদানকারী চবির ১৫ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির স্মরণে এ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ জিরো পয়েন্টেই ভাস্কর্যটির অবস্থান। স্মৃতিস্তম্ভটিতে ৭ জন শহীদের নাম ও ছবি রয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভটির স্থপতি চবির চারুকলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ সাইফুল কবীর।

জয় বাংলা ভাস্কর্য:

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ও বু্দ্ধিজীবী চত্ত্বরের মধ্যবর্তী স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ ভাস্কর্যের অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবাদী ও সংগ্রামী চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এ ভাস্কর্যের মাধ্যমে। এটির ভাস্কর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহরার জাহান।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার