ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৯৬

শেখ হাসিনা : বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়ক

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

আজ বঙ্গবন্ধু-কন্যার জন্মদিন। জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বপ্ন, সম্ভাবনা ও সক্ষমতার প্রোজ্জ্বল প্রতীক হয়ে তিনি আজ বাংলার আপামর মানুষের ভরসা ও নির্ভরতার নাম। হেনরি কিসিঞ্জারের বিদ্রূপাত্মক সেই ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ বিশ্বকে বিস্মিত করে আলোকোজ্জ্বল এক স্বপ্নের সরণি ধরে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে।

বহুদিনের বহু ঘাত-প্রতিঘাতে বিপর্যস্ত এই জাতির মননে তিনি গেঁথে দিয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ এক লক্ষ্যের পানে এগিয়ে যাওয়ার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা। আর এই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে তিনি প্রত্যয়দৃঢ় কাণ্ডারি। তিনি স্বপ্ন দেখান এবং সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটান।

বঙ্গবন্ধুকন্যা তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন এই দেশ ও দেশের মানুষের সামগ্রিক কল্যাণে। সমস্ত জীবন ধরে কণ্টকাকীর্ণ এক দীর্ঘ পথ হেঁটে, সহস্র বাধা মাড়িয়ে তিনি আজকের শেখ হাসিনা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের গণনন্দিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এই পথের বাঁকে বাঁকে ছিল জীবনের ঝুঁকি। শত্রুর শ্যেনদৃষ্টি তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখে, এটি এদেশের প্রতিটি মানুষই উপলব্ধি করে।

দিনে দিনে শেখ হাসিনার জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য। তার সুদক্ষ ও আন্তরিক নেতৃত্বের কারণে এদেশের মানুষ একটি উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচবার স্বপ্ন দেখে। কেননা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তথা ত্রিশ লাখ শহীদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়েই তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনা করছেন। এদেশের প্রতিটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটিয়ে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার এক প্রত্যয়দীপ্ত নতুন লড়াইয়ে আজ তিনি অবতীর্ণ। সেই নিরিখে রূপকল্প ২০৪১-কে সামনে রেখে দেশ গড়ার এক সুনিপুণ ও সুদক্ষ প্রকৌশলী হিসেবে তিনি বিরামহীনভাবে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন।

তার এই লড়াইয়ের সুচিন্তিত ও সুদূরপ্রসারী প্রতিটি পদক্ষেপ বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাবে। তারই সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণে আমরা আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছি। বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃত। তিনি বলেন, আমার প্রথম পরিচয় আমি বঙ্গবন্ধু-কন্যা। তাইতো পিতার সুমহান হৃদয়বৃত্তিকে ধারণ করে এক মহীয়সী জননী হিসেবে আমরা তাকে আবিষ্কার করি দেশের সাধারণ মানুষের নানা দুর্যোগে ও সংকটে।

১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে রাজনীতি তার রক্তে প্রবহমান। পারিবারিক আবহের কারণেই, পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের নানা কর্মসূচি নিয়ে আলাপচারিতা ও কর্মতৎপরতা প্রত্যক্ষ করে তার মধ্যে একটি রাজনীতি সচেতন মনন তৈরি হয়ে যায়।

এরই প্রভাবে দেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবনার এক দুর্নিবার তাড়না তার মননে গেঁথে গিয়েছিল ছোটবেলা থেকেই। সেই চেতনা ও তাড়না থেকে স্বাভাবিক কারণেই, স্কুলজীবন থেকেই তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এবং তখন থেকেই সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

তৎকালীন সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমানে বদরুন্নেসা কলেজ) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৬৬ সালের ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে শেখ হাসিনা ওই কলেজের ছাত্রী সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিক সংগ্রামের তিনি একজন নিবিড় ও প্রত্যক্ষ সাক্ষী। মুজিব-কন্যা হওয়ার কারণেই পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে বহু ঘাত-প্রতিঘাত ও সংকটময় পরিস্থিতি তাকে পার করতে হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের প্রায় সব সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সেই ক্ষত বাংলাদেশকে বয়ে যেতে হবে চিরকাল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষতি কোনোদিনই পূরণ হওয়ার নয় এবং সেই শোক আমাদের বহন করে যেতে হবে আজীবন।

সৌভাগ্যবশত পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন এবং বেঁচে গিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ পরিবারের সব সদস্যকে হারাবার দুঃসহ যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে হতে দীর্ঘ ছয় বছর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে প্রবাসে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে। সেই সময় মৃত্যু তাদের তাড়া করেছে প্রতিমুহূর্তে।

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতেই সর্বসম্মতভাবে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সেই বছর ১৭ মে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সেই দিনের এই সিদ্ধান্তটি পরবর্তীতে বাংলাদেশের ভাগ্যলিপিকেই বদলে দিয়েছে।

অন্ধকার সময় পার করে বস্তুত শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আবারও সম্ভাবনা ও স্বপ্নের পথে হাঁটতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। ১৯৯০-এর স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে সামরিক সরকার উচ্ছেদ করে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা থেকে সরে এসে সংসদীয় পদ্ধতির মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকার-ব্যবস্থা প্রবর্তনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠায় তিনি ভূমিকা রাখেন। 

১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর স্বৈরাচারী সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠার সব প্রক্রিয়া শুরু হয়। যুদ্ধোত্তর স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে অভিভাবকহীন ও নেতৃত্বশূন্য অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় না পেয়ে অসহায় ও দিশেহারা অবস্থায় নিপতিত হয়। জাতি প্রত্যক্ষ করে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের যেন বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে না হয়, সেই লক্ষ্যে বেঈমান খুনি মোশতাক কর্তৃক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

পরবর্তীতে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এই অধ্যাদেশ পার্লামেন্টের মাধ্যমে বৈধতা প্রদান করে। অধিকন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ খুনিদের বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করা হয়। তাদের অনেককে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব দিয়ে বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসিত করা হয়। পরবর্তীতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র ও বাধা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার সরকার ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করায়।

বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতা বিরোধীদের বিচার প্রক্রিয়া এখনো চলমান। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা-বিরোধীদের পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার যে প্রক্রিয়া এদেশে শুরু হয়েছিল, তার বিপরীতে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এই কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তার অঙ্গীকার পূরণে তিনি সবসময়ই অটল ও আপসহীন থেকেছেন।

শেখ হাসিনার ওপর ১৯ বার হত্যাচেষ্টা হয়েছে। ২০০৪ সালে সরাসরি রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে যে ন্যক্কারজনক ও ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়, এরকম নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেওয়ার এমন প্রচেষ্টা দেখে সেইদিন সমগ্র জাতি স্তম্ভিত হয়ে যায়। বৃষ্টির মতো একের পর এক গ্রেনেড হামলার পরও দলীয় নেতাদের তৈরি মানববর্ম ও স্রষ্টার সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। শেখ হাসিনার সাথে বেঁচে যায় বাংলাদেশ ও এদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ।

সেই হামলায় শ্রদ্ধেয় আইভি রহমানসহ ২৪ জন দলীয় নেতাকর্মী নিহত হন। আহত ও অঙ্গহীন হয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছে আরও অনেক দলীয় কর্মী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান লন্ডনে পলাতক আছেন।

জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দুরন্ত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, যোগাযোগ অবকাঠামোর অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক সাফল্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়ন, হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু নিয়ন্ত্রণ, বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার প্রচলন, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, নারী উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন, সরকারি ও বেসরকারি খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সর্বোপরি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তার অতুলনীয় সাফল্য একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।

জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতায় জর্জরিত বাংলাদেশে একটি সভ্য ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় তার নিরলস ও আন্তরিক প্রচেষ্টা সার্বক্ষণিক। বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখেন, একদিন একটি উন্নত রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এদেশের প্রতিটি মানুষ গৌরবের সাথে বিশ্বের কাছে নিজের পরিচয় দেবে। আর সেই লক্ষ্যেই দীর্ঘমেয়াদি নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে তিনি তার লক্ষ্যে দুর্বার গতিতে অগ্রসর হচ্ছেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সময়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নের ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। সারাদেশে একশোটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্ধারণ করে ইপিজেড স্থাপন করার কাজ চলমান আছে। সবগুলো অর্থনৈতিক অঞ্চলে আইসিটি পার্ক নির্মাণের কাজ চলছে।

বেশিরভাগ মহাসড়ককে চার লেন ও ছয় লেনে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এর সফল বাস্তবায়ন শেখ হাসিনা সরকারের একটি বিস্ময়কর সাফল্য। দেশের বড় বড় অর্থনীতিবিদরা মন্তব্য করেছিলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাদের ভবিষ্যতবাণী ভুল প্রমাণ করার সাথে সাথে তিনি এও প্রমাণ করলেন, দেশের অর্থনীতিকে তিনি কতটা মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছেন।

ঢাকায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং যানজটপূর্ণ অঞ্চলগুলোয় ফ্লাইওভার নির্মাণের মাধ্যমে যানজট কমানোর পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাকে একটি দৃষ্টিনন্দন নগরীতে রূপান্তরিত করেছেন। আংশিক চালু হলেও প্রকল্পগুলোর কাজ শিগগিরই সম্পন্ন হবে।

এছাড়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক মানের ও দৃষ্টিনন্দন তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ, রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, মাতারবাড়ি বহুমুখী প্রকল্পসহ তার সরকারের গৃহীত দশটি মেগা-প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পথে। এই সবগুলো প্রকল্প সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও অনেক বেশি গতি সঞ্চার হবে।

করোনার প্রভাবে যখন সারাবিশ্বের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছিল, জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে সবাইকে অবাক করে বাংলাদেশ তখনো উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৮২৪ ডলার। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ স্থাপন করে তিনি বাংলাদেশকে প্রথম নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপনের গৌরব এনে দিয়েছেন।

১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তিচুক্তির ব্যবস্থা নেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো তাকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তিপদকে ভূষিত করে। ওই সরকারের সময় ভারতের সাথে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা নদীর পানিবন্টন চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সাথে ৬৮ বছর ধরে বিদ্যমান সীমানা বিরোধ ও ছিটমহল সমস্যার নিষ্পত্তি করে।

মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে বাংলাদেশের যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার এই মানবিক ভূমিকার জন্য ব্রিটিশ মিডিয়া তাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ বলে আখ্যায়িত করে।

পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘের পরিবেশ-বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। যাদের নেতৃত্ব ও কর্মকাণ্ড একটি টেকসই বিশ্ব নিশ্চিত করতে এবং সবার জন্য মর্যাদাসম্পন্ন জীবন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তাদেরকে এই সম্মান দেওয়া হয়।

এখানে উল্লেখ্য, কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতি তিনি সবসময়ই আহ্বান জানিয়ে আসছেন। সদ্য অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ করে তিনি শান্তির সপক্ষে যুদ্ধমুক্ত বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।

করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহে বিশ্বের সব দেশ যখন মরিয়া হয়ে ওঠে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক দক্ষতা, দূরদর্শিতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন সংগ্রহে সবচেয়ে সফল দেশগুলোর মধ্যে সামনের সারিতে ছিল। করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সাথে সাথেই বাংলাদেশ এর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করেছে। ফলে করোনার প্রভাবে মহামারি ও বিপর্যয় এড়াতে বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়।

মুজিববর্ষে তিনি ভূমিহীন ও হতদরিদ্র মানুষদের জন্য গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫,৫৫,৬১৭টি পরিবারকে ঘর উপহার দিয়ে পুনর্বাসিত করেছেন। সমগ্র বিশ্বে এটি নজিরবিহীন। শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের অনেকগুলো খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন সম্মানসূচক ডিগ্রি ও পুরষ্কার প্রদান করেছে। এর সবগুলোর উল্লেখ করতে হলে নিবন্ধের কলেবর বৃদ্ধি পাবে।

বঙ্গবন্ধু-কন্যার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ একটি সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করার পথে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আজকের বাংলাদেশের এই সমস্ত অগ্রগতি শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। তিনি অবিকল্প।

বাংলাদেশের আপামর মানুষের অপার ভালোবাসা ও সমর্থন নিয়ে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে তিনি দেশের মানুষের ভাগ্য বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির চোখরাঙানি তোয়াক্কা না করে দেশের স্বার্থ ও মর্যাদাকে তিনি এক অনন্য উচ্চতায় সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।  

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিনে তার প্রতি আমার আনত শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন। তার সুস্থতা ও দীর্ঘজীবন দেশের মানুষের আরও সুন্দর ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার জন্য বড় বেশি প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার নিরলস অভিযানে শেখ হাসিনার এই অগ্রযাত্রায় তার একজন বিশ্বস্ত কর্মী হিসেবে আমি নিজেকে পরম সৌভাগ্যবান ও গৌরবান্বিত বোধ করি।

জয়তু বঙ্গবন্ধু-কন্যা। 

আব্দুর রহমান ।। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার