ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৫০

শেখ কামাল : অবিনাশী নাম, অন্তহীন স্বপ্ন

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ৫ আগস্ট ২০২৩  

তারা ভেবেছিল, স্টেনগানের বুলেটে শরীর ছিন্নভিন্ন করে চিরতরে মুছে ফেলা গেছে শেখ কামালের নাম। ভুল। তারা ভেবেছিল, গোয়েবলসীয় কৌশলে মিথ্যার ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে সত্যকে সরিয়ে দেওয়া গেছে। কলঙ্কে ঢেকে দেওয়া গেছে শেখ কামালের নাম। মহা ভুল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আবুল ফজল। এরপরে কোনো এক অনুষ্ঠানে তিনি শেখ কামালের প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘শেখ কামাল ছিলেন আদর্শবান মানুষ। তার কোনো অহংকার ছিল না। অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী ছিলেন তিনি।’ এই মন্তব্যের কয়েকদিনের মধ্যেই আবুল ফজল জিয়ার উপদেষ্টার পদ থেকে অপসারিত হন।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় এসেই ক্রীড়াঙ্গনে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করে। ঢাকার কমলাপুরে নির্মিত হয় একটি স্টেডিয়াম, যার নামকরণ হয় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের নামে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আসার পর ওটার নাম আংশিক বদলে করা হয় শহীদ সিপাহী মোস্তফা স্টেডিয়াম।

কেন এমন করা হলো, জানতে চাইলে সেই সময়ের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটল বলেছিলেন, ‘আমরা অনেক খোঁজখবর করে জানতে পেরেছি মোস্তফা কামালের আসল নাম মোহাম্মদ মোস্তফা। সুতরাং নামটা সংশোধন করেছি মাত্র।’

আসলে কামাল নামটিতেই তখনকার শাসকদের যত জ্বালা ছিল। ওই নামটিকে তারা ভয় পান, সহ্য করতে পারেন না। শেখ মুজিব নামে যেমন ভয়, তার জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল নামটাও তো তেমন ভয়েরই কারণ।

তবে শেখ কামালকে মুছে ফেলা যায়নি। সব অপচেষ্টাই নিষ্ফল হয়ে গেছে ইতিহাসের অমোঘ সূর্যালোকে।

ইতিহাসকে কেউ কখনো নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারে না। সবসময় সত্যের ফল্গুধারাতেই ইতিহাস বয়ে চলে। আর ইতিহাস তার নায়কদেরই মনে রাখে চিরকাল। শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল একজন নায়ক হয়েই চিরকাল বেঁচে থাকবেন বাঙালির স্মৃতিতে।

দিন যত যাচ্ছে, বাঙালি জাতির সামনে সুদর্শন শেখ কামালের দীর্ঘ শরীরের ছায়াটা দীর্ঘতর হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের আধুনিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এই পথিকৃৎ স্বল্পায়ু জীবনে যতটুকু কাজ করে গেছেন, সেইটুকুই নিশ্চিত করে দিয়েছে তার অমরত্ব।

মেধা-মনন ও জীবনীশক্তির সবটুকু নিংড়ে আবাহনী নামের যে ক্লাবটি গড়ে গেছেন, সেইটিই শেখ কামালকে বাঁচিয়ে রাখবে অনন্তকাল। বারবার যে কথাটি নতুন করে বলতে হয়, তা হলো, আবাহনীই এই দেশের ফুটবলে নতুন ধারার প্রবর্তক। আবাহনীই এই দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ছড়িয়েছে নতুন সৌরভ।

শেখ কামালের প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘শেখ কামাল ছিলেন আদর্শবান মানুষ। তার কোনো অহংকার ছিল না। অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী ছিলেন তিনি।’ এই মন্তব্যের কয়েকদিনের মধ্যেই আবুল ফজল জিয়ার উপদেষ্টার পদ থেকে অপসারিত হন।

ক্রীড়ামনস্কতার কারণে সেই শৈশবেই আবাহনী নামটির সঙ্গে পরিচয়। তখন থেকেই মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগত, একটি ক্রীড়া সংগঠনের এত সুন্দর নামও হতে পারে! এই নামেই মূর্ত বাঙালির ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা। শেখ কামালের বন্ধুরা বলেন, নামটি দিয়েছিলেন লালমাটিয়া কলেজের বাংলার অধ্যাপক মতিউর রহমান। তা নিয়েও আছে চমকপ্রদ এক গল্প।       

ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে কেডিএস ফার্মাসিউটিক্যালস ল্যাবরেটরির সামনে ছিল বড় এক ফাঁকা মাঠ। ধানমন্ডি এলাকার কিশোর-তরুণেরা সেইখানে খেলত। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এটি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৬৬ সালে শেখ কামাল ও তার বন্ধুদের দীর্ঘ আন্দোলন সরকারের সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। ওই মাঠই আজকের আবাহনী মাঠ। কিন্তু ওখানে একটা স্থায়ী ক্লাব গড়ে তোলার জন্য ধানমন্ডি এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে একটি ভালো নাম চান শেখ কামাল ও তার বন্ধুরা।

শেষ পর্যন্ত আবাহনী নামটি নির্বাচিত হলো-আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দ্বিতীয় বিভাগের দল ইকবাল স্পোর্টিং ক্লাবকে কিনে নিয়ে যা হয়ে ওঠে আবাহনী ক্রীড়াচক্র। পত্রপল্লবে বিকশিত হয়ে যা আজকের মহীরুহ আবাহনী লিমিটেড।

বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব, স্ত্রী সুলতানা কামাল, ভাই লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ভ্রাতৃবধূ রোজী জামাল, ছোট ভাই শেখ রাসেলসহ আত্মীয় পরিজন মিলিয়ে ঘাতকচক্র ১৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে।

বঙ্গবন্ধু ছাড়া পরিবারের অন্যদের সঙ্গে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত শেখ কামাল। কিন্তু এখনো ধানমন্ডির আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে গেলে মনে হয়, (সম্প্রতি আবাহনী কমপ্লেক্স তৈরির কাজ শুরু হয়েছে, ক্লাবের সেই পুরোনো আদল আর নেই) সবুজ গাছগাছালির ছায়াঘেরা নিজের স্মৃতিবেদীতে লুকিয়ে আছেন শেখ কামাল।

বুলেটে বুলেটে ঝাঁঝরা শেখ কামালের বুকের ওপর ফুটে উঠেছে যে মানচিত্র, সেইটাই যে আসলে আবাহনী। কিংবা তার প্রতিটি রক্তের ফোঁটায় যে ভালোবাসার কথা লেখা, তারই নাম আবাহনী। তার অশ্রুর জলসেচ আর হাড়ের ফসফেটে বোনা হয়েছে যে অন্তহীন ধান ও গানের স্বপ্ন, তার নাম আবাহনী।

শেখ কামাল নেই, কিন্তু তাকে ঘিরে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে গল্প-ফুলের মালা গাঁথার জন্য রয়ে গেছেন কত বন্ধু-সহচর। সালমান এফ রহমান, হারুনুর রশিদ, তানভীর মাজহার তান্না, কাজী সালাউদ্দিন, আবদুস সাদেকরা।

    ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে থাকা শেখ কামাল বেশকিছু নাটকে অভিনয় করে লোকপ্রিয়ও হয়ে উঠেছিলেন। ছায়ানট থেকে শিখেছিলেন সেতার। ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা...

নানা সময়ে এই বন্ধুদের মুখেই শোনা, মোহামেডানের চেয়ে ভালো ক্লাব গড়ে তোলার মানসেই আবাহনীকে আবাহন শেখ কামালের। তাই স্বাধীনতার পরপরই যখন অনেক উন্নত দেশও বিদেশি ফুটবল কোচ আনার কথা ভাবতে পারেনি, তিনি আধুনিক ফুটবলের চাষাবাদ করতে আবাহনীতে নিয়ে আসেন আইরিশ কোচ উইলিয়াম বিল হার্টকে।

ক্ষমতার বলয়ে থেকে কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সন্তান অবৈধপথে গড়েছেন টাকার পাহাড়। আর তিনি শেখ কামাল কি না গড়লেন একটি ক্লাব। ব্যবসা-বাণিজ্যের অবারিত সুযোগ ছিল সামনে, দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসেন নানা প্রস্তাব আর প্রলোভনের সম্ভার। কিন্তু তিনি পড়ে থাকেন আবাহনী নিয়ে। থাকেন খেলার মাঠজুড়ে।

কখনো ধানমন্ডি ক্লাবে খেলেন ফুটবল। কখনো উদিতি ও আবাহনীতে ক্রিকেট। কিংবা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে বাস্কেটবল। এমন কোনো খেলা নেই, যাতে শেখ কামালের নৈপুণ্য ছিল না। শাহীন স্কুলে মাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় ছিলেন দুর্দান্ত এক অ্যাথলেট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের দ্রুততম মানব ভলিবল খেলেছেন, হকি খেলেছেন।

তবে তার কয়েকজন বন্ধু বলেন, চাইলে ক্রিকেট বা বাস্কেটবলে ক্যারিয়ার গড়তে পারতেন। ছিলেন মিডিয়াম পেসার। বোলিংয়ে অ্যাকুরেসি ছিল, তার সুইং সামলাতে হাঁসফাঁস করতেন ব্যাটসম্যানরা। ১৯৭৪ সালে আবাহনীকে লিগ চ্যাম্পিয়ন করার পথে এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেওয়ার দৃষ্টান্তও আছে তার।

চাইলে পেশাদার অভিনেতা হতে পারতেন। ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে থাকা শেখ কামাল বেশকিছু নাটকে অভিনয় করে লোকপ্রিয়ও হয়ে উঠেছিলেন। ছায়ানট থেকে শিখেছিলেন সেতার। ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, ২১ বছর বয়সে জীবনের মায়া তুচ্ছ করে ভারতে গিয়ে মিলিটারি ট্রেনিং নিয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বরের সেক্টরের মধ্য থেকে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত ৬১ প্রশিক্ষণার্থীর অন্যতম তিনি। প্রথম ওয়ার কোর্সের এই সদস্য ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানীর এডিসি। সবার সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে মিশে যাওয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তার মধ্যে। সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল ঈর্ষণীয় পর্যায়ের।

বন্ধুরা এখনো শেখ কামালের কথা ভেবে বিস্মিত হন। এমন সব্যসাচী, বহুমুখী প্রতিভা তারা দ্বিতীয়টি দেখেননি!

ক্রীড়া ও সংস্কৃতিই ছিল তার জীবন। যে জীবনের ব্যাপ্তি মাত্র ২৬টি বসন্ত। তারই মধ্যে স্বপ্নচারী শেখ কামাল অজস্র স্বপ্ন বুনেছেন, বুনতে শিখিয়েছেন। আরও ৪৮টা বছর তার সঙ্গ পেলে এই মানচিত্র এখন হয়তো পরিণত হতো ফলভারানত এক স্বপ্নবৃক্ষে।

পবিত্র কুন্ডু ।। স্পোর্টস এডিটর, এটিএন নিউজ
 

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার