‘ফুরির বাড়ির ইফতার’, ঐতিহ্য যখন গলার কাঁটা!
সিলেট সমাচার
প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২৪
২০২১ সালে ০৮ মে শনিবার সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নে রমজান মাসে ইফতার সামগ্রীতে স্বামীর জন্য পৃথক থালা সাজানো না থাকা এবং ঈদুল ফিতরে নতুন জামা-কাপড় না দেওয়ায় স্বামী ও শাশুড়ির নির্যাতনে সাত মাসের অন্তঃসত্তা শরিফা বেগমের (২০) মৃত্যু হয়।
আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল ২০১৯ সালে ১১ মে, ইফতারি নিয়ে শাশুড়ি-বউয়ের ঝগড়ার জের ধরে সিলেটের জৈন্তাপুরে এক নববধূ আত্মহত্যার খবর পাওয়া গিয়েছিল। সিলিং ফ্যানের সাথে রশি দিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করেন নববধূ হেলেনা বেগম (২০)।
এই দুটি ঘটনার নেপথ্যেই ছিলো সিলেটের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রেওয়াজ “ পুরীর বাড়ি ইফতারি”। কিন্তু কীভাবে?
সিলেটের শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য- রমজান মাসের জাকজমকপূর্ন ইফতারি। পবিত্র রমজান মাসে মেয়ের শ্বশুর-বাড়িতে ইফতারি দেওয়ার প্রচলনকে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় “পুড়ির বাড়ি ইফতারি” বলা হয়।
যুগযুগ ধরে সিলেটে রমজান মাসে মেয়ের শ্বশুর-বাড়িতে ইফতারি দেওয়ার চর্চাটি একটি আদি প্রথা। নতুন বিয়ে হলে মেয়ের শ্বশুর-বাড়িতে পয়লা রমজানে একবার, রমজানের মাঝখানে আরেকবার এবং রমজানের শেষ দিকে নতুন জামাই-এর জন্য কিছু গিফট, জামা-কাপড় সহ একবার, মোট তিনবার ইফতারি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। অঞ্চল ভেদে এর ভিন্নতাও রয়েছে, অনেক এলাকায় অবশ্য শুধু একবার ইফতারি দেওয়া হয়। প্রথম রমজানে নতুন জামাই-এর জন্য বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী দিয়ে সাজিয়ে বড় থালা দেওয়া হয়। আর এই থালা কেনার জন্য প্রথম রমজানে সিলেটের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এবং মিষ্টির দোকানগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় থাকে। পুরো রমজান মাস জুড়ে ইফতারি দেওয়ার ধুমধাম থাকে। এমনকি রমজান মাসে মেয়ের শ্বশুর-বাড়ি ছাড়াও ফুফু, ভাগ্নী এবং ভাতিজিদের বাড়িতেও ইফতারি দেওয়ার রেওয়াজ আছে। ফুফুরা বুড়ো হয়ে গেলেও উনাদের বাড়িতে ইফতারি দেওয়ার প্রচলন এখনও আছে। মেয়ে যদি জামাই নিয়ে বিদেশও থাকেন তারপরও সম্মান রক্ষার্থে বাবা-মা মেয়ের শ্বশুর-বাড়িতে ইফতারি পাঠিয়ে থাকেন। এছাড়াও সিলেটে মেয়ের বিয়েতে একজন উকিল বাবা থাকেন, সেই উকিল বাবারও মেয়ের বাড়িতে ইফতারি দেওয়ার রেওয়াজ আজও আছে। সময়ের সাথে সাথে এখন ইফতারি দেওয়ার ধরনও অনেকটা বদলে গেছে!
রমজান হল রহমত-বরকতের মাস, সিয়াম-সাধনার মাস। রমজান মাসে কাউকে ইফতার খাওয়ানো অনেক বড় একটি ছওয়াবের কাজ। মেয়ের বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনরা উনাদের সামর্থ্য অনুযায়ী হাসিমুখে যদি মেয়ের শ্বশুর-বাড়িতে ইফতারি দেন তাতে দোষের কিছু নেই। নিঃসন্দেহে, এটি একটি ভালো কাজ। ইফতারি দেওয়ার মাধ্যমে আত্মীয়তার বন্ধন আরো মজবুত হয়। পারস্পরিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয়। ভাই-বোনের মধ্যেও অনেক দিন পর মিলন ঘটে।
রাসুল (সা.) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য রোজাদারের প্রতিদান সমান প্রতিদান দেওয়া হবে এবং রোজাদারের প্রতিদান থেকেও কোনো প্রতিদান কমানো হবে না।’
[তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭]
অথচ এখন আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ইফতারি নিয়ে নানা ধরনের অপসংস্কৃতি চলছে। বিশেষ করে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে মেয়ের শশুর বাড়িতে প্রথম রমজানে, দশ রমজানের পরে এবং শেষ রমজানের আগে ইফতার প্রদানের প্রচলন রয়েছে। এর কোনো যৌক্তিকতা ইসলামে ধর্মে নেই। চাহিদামতো ইফতার সামগ্রী না পেলে কিংবা দেরীতে ইফতারি গেলে মেয়েকে কটু কথা বা গালমন্দ শুনতে হয়। যা ইসলাম ধর্ম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। চরম দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে মুসলিম সমাজ ব্যবস্থায় রমজান মাসে মেয়ের শশুর বাড়িতে ইফতারি প্রদান নিয়ে বর্তমানে যে নিয়ম চলমান রয়েছে তা ইসলামের নামে অপসংস্কৃতি ছাড়া আর কিছু নয়। এই প্রথায় ধনী পিতা কর্তৃক নিজের আদরের মেয়ের প্রতি ভালোবাসা মনে হলেও মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারের বাবা-ভাইয়ের জন্য নানা সঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে ইফতারি নিয়ে অনেকটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, কে কত বেশি দিতে পারে! অনেক পরিবার বিশেষ করে বিত্তবানদের কাছে মেয়ের শ্বশুর-বাড়িতে ইফতারি দেওয়ার প্রথা ঐতিহ্য মনে হলেও অনেক মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারকে খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়।
সিলেটে যৌথ পরিবারের সংখ্যা বেশি। রমজান মাস আসলেই যৌথ পরিবারের বউরা বেশি দুশ্চিন্তায় থাকেন। যৌথ পরিবারে যদি তিন বউ থাকেন আর প্রথম দুই বউ-এর বাপের বাড়ির অবস্থা যদি ভালো হয়। তাহলে উনাদের বাপের বাড়ি থেকে বিভিন্ন ধরনের ইফতার সামগ্রী আসে। ইফতারি উপলক্ষে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়। খুবই ধুমধাম করে ইফতারির আয়োজন করা হয়। পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে ইফতারি বিতরণ করা হয়। ছোট বউ এর বাপের বাড়ির অবস্থা যদি ভালো না হয, পিতা-মাতা অনেক কষ্ট করে চলেন, সংসার কোনরকম চলে সে ক্ষেত্রে ইফতারি পরিমানে যদি একটু কম আসে বা ইফতারি আসতে একটু দেরী হয় তবে অনেক সময় শ্বাশুড়ি এবং ননদদের কটু কথা শুনতে হয়। কটু কথা না শুনার জন্য অনেক সময় মেয়ে তার বাবা-মা’কে আগে থেকেই বলে দেয় যে, বেশি করে যেন ইফতারি নিয়ে আসেন। মেয়ের সম্মান রক্ষার্থে, মেয়ের মুখ পরিবারের সবার কাছে যাতে উচু থাকে সেজন্য অনেক দরিদ্র পিতা-মাতা তাদের শেষ সম্বল গরু-ছাগল বিক্রি করে কিংবা কারো কাছ থেকে টাকা ঋণ করে মেয়ের শ্বশুর-বাড়িতে ইফতারি দিয়ে থাকেন। যা ইসলাম কখনও সমর্থন করে না। সামর্থ্য অনুযায়ী খুশি মনে মেয়ের শ্বশুড়-বাড়িতে ইফতারি দিতে ইসলাম কখনো বাধা দেয়না। ইসলামের দৃষ্টিতে ইফতারি দেওয়াটা অত্যাবশ্যকীয় নয়। আমরা এটাকে বাধ্যতামূলক বানিয়ে ফেলেছি, যা এক ধরনের জুলুম!
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ [তিরমিজি : ২৫১১]
খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি যে অনেক পিতা-মাতার সামর্থ্য না থাকায় মেয়ের শ্বশুড় বাড়িতে।
বাড়িতে ইফতারি দিতে অপারগতা, দেরীতে ইফতারি পাঠানো, কিংবা ইফতারি পরিমানে কম দেওয়া, এগুলো নিয়ে অনেক মেয়েকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়! এমনকি মৃত্যু পর্যন্তও ঘটে! যেমন দুটি ঘটনার কথা শুরুতে বলা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন -‘আর তোমরা তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবু তুমি যা অপছন্দ করছ আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবেন।’ [সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯]
“পুড়ির বাড়ি ইফতারি” অর্থাৎ মেয়ের শ্বশুর-বাড়িতে ইফতারি এটা সিলেটের শত বছরের ঐতিহ্য। এই ইফতারি দেওয়ার রীতি-নীতি আবহমানকাল ধরে চলে আসছে। এই ঐতিহ্যকে ধারণ এবং লালন করতে গিয়ে যেন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, ইফতারি নিয়ে যেন কোন বোন-কে আর কটু কথা শুনতে না হয়, কোন গালি শুনতে না হয়, কোন বাবা কিংবা ভাই-কে যেন গরু বা ছাগল বিক্রি করতে না হয়, টাকা যেন ঋণ করতে না হয়, কোন বোন-কে যেন আর আত্মহত্যা করতে না হয়, সেজন্যে আমাদের সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আর এজন্য আমাদের জামাইদেরকে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে। এই ফেতনার যুগে আল্লাহ আমাদের সবাইকে যেন সঠিকভাবে বুঝার তৌফিক দান করেন।
- শেরেবাংলার মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
- দেশে এই প্রথম চোয়াল প্রতিস্থাপন, বিশ্বে নজিরবিহীন
- এখন ওমরাহ করতে পারবেন বিশ্বের যে কোনো ভিসাধারী
- তাপমাত্রা কমাতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টি’ উদ্যোগের কথা জানালেন হিট অফিসার
- গরমে বারবার গোসল করা ভালো নাকি ক্ষতিকর?
- প্রতিবন্ধীদের মূল ধারায় আনতে প্রচেষ্টা চলছে: সমাজকল্যাণ মন্ত্রী
- নতুন ১১ জেলাসহ ৫৫ জেলা যুক্ত হচ্ছে রেল নেটওয়ার্কে
- ৭৬ বছরের রেকর্ড ভাঙল দেশের চলমান তাপপ্রবাহ
- সুবিপ্রবিতে ১ম ভর্তি পরীক্ষা, হাওরপাড়ে খুশির ঢল
- হবিগঞ্জে ৩ চা কারখানা বন্ধ, বিপাকে শ্রমিকরা
- সিলেটে ভারত-বাংলাদেশ টি২০ সিরিজ শুরু কাল, প্রস্তুতি সম্পন্ন
- সিলেটে আর্মড পুলিশের মসজিদের উদ্বোধন
- প্রবল বৃষ্টিপাতে মে মাসে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার শঙ্কা
- চোরাই পথে সিলেটে আনা তিন পিকআপ ভর্তি ১৮ গরু উদ্ধার
- বর্ণিল আয়োজনে সিলেট স্টেশন ক্লাবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান
- নির্বাচনে প্রার্থীতায় সিলেটের বিএনপির ৯ নেতৃবৃন্দ বহিষ্কার
- ডিবি পুলিশের অভিযানে সিলেটে ৭ জুয়াড়ি আটক
- সিলেটে নামলো স্বস্তির বৃষ্টি
- ‘পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বিএনপির শিক্ষা নেওয়া উচিত’
- ভিসা সহজ করতে যুক্তরাজ্যকে প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর আহ্বান
- থাইল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে: শেখ হাসিনা
- দুই দিনের সফরে নির্বাচনী এলাকায় আসছেন এমপি ইমরান
- চুনারুঘাটে বোরোর বাম্পার ফলন, ধান কা টা-মাড়াইয়ের উৎসব শুরু
- ধান কাটতে গিয়ে সাপের কামড়ে প্রাণ গেল জগন্নাথপুরের এক কৃষকের
- আবারও ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি
- শপথ নিয়েছেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
- বিশ্বমিডিয়ায় বাংলাদেশের তাপদাহ
- জিআই সনদ পেল দেশের ১৪ পণ্য
- ‘বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন ভিত্তিহীন’
- বিসিএস পরীক্ষা: শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বাস সেবা দিলো শাবিপ্রবি
- ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নি
- প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা আজ
- কালোজিরা খাওয়ার ৫ উপকারিতা
- ভুটানে যাচ্ছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী
- আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত
- মানুষের কষ্ট বৃদ্ধিতে বিএনপির নতুন সংস্করণ ভারত বিরোধিতা: নাছিম
- বসন্ত গায়ে মেখে রঙিন হয়ে উঠেছে শিমুল
- সিলেটের শাহপরাণে পুলিশের জালে দুই কারবারি, মাদকদ্রব্য জব্দ
- মাধবপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমানকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন
- পীরের বাজারে কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ সংঘর্ষে আহত ৬
- কানাডায় উচ্চশিক্ষা: সিলেটিদের যা জানা জরুরি
- খেলাধুলাও বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে উচ্চ করেছে : শফিক চৌধুরী
- সিলেট নগরীতে চোরাই মোটরসাইকেলসহ যুবক আটক
- এপ্রিলের গরমে সিলেটের জনজীবনে অস্বস্তি
- চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সম্পাদক ডিপজল
- ৩ দিনের হিট অ্যালার্টের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর
- এমপি হাবিব’র উদ্যোগ : প্রত্যেক ইউনিয়নে হচ্ছে মিনি স্টেডিয়াম
- পাগলা মসজিদের ৯ দানবাক্সে ২৭ বস্তা টাকা
- সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি না করানোর নির্দেশ
- একটি মহল দেশের উন্নয়ন চোখে দেখে না : এমএ মান্নান