গণ ইফতার নিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা শাবির ছাত্রদল-শিবিরের!

সম্প্রতি ইফতার পার্টি আয়োজন নিয়ে পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়ে সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে গণ ইফতার কর্মসূচি আয়োজন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ধর্মীয় ইস্যুকে পুঁজি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজকতা সৃষ্টি ও বিষয়টিকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই। এমনকি ঘটনার বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে এখনো বিষয়টি নিয়ে সুযোগ সন্ধানীরা সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে আসন্ন রমজান মাসে ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টির আয়োজন না করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো” উল্লেখ করে গত ১১ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি দেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই দিনে একই বিষয় উল্লেখ করে পৃথক বিজ্ঞপ্ততি দেয় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ইফতার পার্টি আয়োজনে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞায় ব্যপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এমনকি প্রথম রোজার দিনে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে গণ ইফতার কর্মসূচির আয়োজন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

তবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আরেক পক্ষের অভিযোগ, ধীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিবিরের আধিপত্য নেই। এক ধরণের কোণঠাসা হয়েই আছে। তবে ধর্মীয় ও স্পর্শকাতর বিষয়টিকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়েছে শিবিরের নেতা-কর্মীরা। শিবিরের অনেক পরিচিত মুখ ও পদধারী অনেকে গণ ইফতার কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ইফতার পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘গণ-ইফতার’ কর্মসূচি পালন করেছে।

তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশে ছাত্র শিবিরের পূর্বে ব্যপক প্রভাব ছিলো, বর্তমানেও তারা সক্রিয় হয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। সুত্র জানিয়েছে, প্রত্যেকটি ক্যাম্পাসে শিবিরের অবস্থান অনেকটাই ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে তাদের কর্মকান্ড বন্ধ রেখেছে। তবে তাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইফতার ইস্যুতে তারা ফের সক্রিয় হয়েছে। কেননা এ গণ ইফতার কর্মসূচিতে সামনে থেকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের অধিকাংশই শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত। তাছাড়া এ গণ ইফতার কর্মসূচিতে শিবিরের পক্ষ থেকেই অর্থ সরবরাহ করা হয়েছে বলেও এসব সুত্র জানিয়েছে।

সুত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করেই খাবারের অপচয় রোধে সরকারি অর্থায়নে ইফতার পার্টি আয়োজনের পরিবর্তে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণের আহ্বান জানান। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দুইটি বিজ্ঞপ্তি জারি করলে সুযোগ সন্ধানী ছাত্রদল ও শিবিরের নেতাকর্মীরা এ বিষয়টি নিয়ে শোরগোল সৃষ্টি করে। নিজেদের চরিতার্থ সফল করতে ইফতারের মতো ধর্মীয় ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে তারা।

তবে ইফতার নিয়ে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিটি একদল সুযোগ সন্ধ্যানী কুচক্রী মহল ভিন্ন অর্থে এটিকে ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বিজ্ঞপ্তিতে প্রচারের ক্ষেত্রে ভাষাগত ত্রুটি হয়েছে বলে ব্যাখ্যা দিয়ে ফের বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় দুইটি। বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাখায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকারি অর্থায়নে যেকোন ধরণের ইফতার পার্টি আয়োজনে নিরুৎসাহিত করতে এ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এখানে ইফতার পার্টি আয়োজনে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় নি। যেকোন ব্যক্তি বা সংগঠনের উদ্যোগে ইফতার পার্টির আয়োজন করতে পারবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে না। 

বিষয়টি নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনীয়ারিং এক শিক্ষক বলেন, এ ধরণের ভুল অনিচ্ছাকৃত। ভাষাগত ত্রুটির কারণে বোঝার ভুল হয়েছে।,আপনারা জানলে অবাক হবেন যে আমাদের বাংলা ভাষাটা কিন্তু খুব জটিল একটি ভাষা। তাই এটির ব্যবহারে আরো সতর্ক হতে হবে, তবে আমি এই বিষয়টিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো দায় দেখছি না।

তবে প্রশাসন জানিয়েছে, এ ধরণের ইস্যু নিয়ে যাতে কেউ তাদের রাজনৈতিক চরিতার্থ করতে না পারে সে জন্য সবাই সজাগ রয়েছে। তাছাড়া এ ধরণের বিষয়টির সাথে কে বা কার জড়িত তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।