ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
২৪৫৯

সিলেটে বন্যায় দায়ী নারীদের উচ্চশিক্ষা ও বেহায়াপনা চলাফেরা!

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

৩৬০ আউলিয়ার পূন্যভূমি সিলেট। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে সিলেট এখনো অনেকটাই রক্ষণশীল সমাজে পরিণত হয়ে আছে। তার প্রমাণ মিলে নারীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে অভিভাবকদের আড়স্থতা, অনীহা ও সুযোগ সৃষ্টির অভাব। এর কারণ নারীদেরকে তারা ঘরের বাইরে বের হতে দিতে চাই না। অবরোধবাসিনীর মতো ঘরে আবদ্ধ রাখতে চাই এ অঞ্চলের মানুষ। তবে এ চিত্রের বাইরে এবার সিলেটে পরপর ভয়াবহ বন্যার কারণ হিসেবে দায়ী করছেন সিলেটে নারী শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলে-মেয়েদের অবাধ চলাফেরাকে, বিশেষ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রেক্ষিতে ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলামেশা ও বেহায়াপনা চলাফেরাকেই দোষছেন স্থানীরা।


স্থানীয়দের দাবী, বিগত ১০০ বছরেও এমন ভয়াবহ বন্যা সিলেটবাসী দেখে নি। বর্তমানে সিলেটে নারীদের অবাধ চলাফেরা বেড়ে গেছে। যা ইতিপূর্বে ছিলো না। বিশেষ করে সিলেটের পূণ্যভূমিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে মেয়েদেরেএ অবাধ চলাফেরা বেড়ে গেছে। ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য ৩৬০ আউলিয়ার এ অঞ্চল একটা পূন্যভূমি। অথচ এ পূন্যভুমিতে নারীদের এমন চলাফেরা আল্লাহ সহ্য করছে না বলেই এ ভয়াবহ বন্যার দেখা মিলেছে বলে দাবি এসব স্থানীয়দের।


তাদের আরও দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা অবাধে চলাফেরা করছে। ইসলাম বহির্ভূত কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পূণ্যভূমি সিলেটকে কলুষিত করছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলে এমনটা হতো না। এমনকি এখানে সিলেটের অভ্যন্তরের থেকে অন্য জেলা থেকে বেশি পরিমাণ মেয়ে পড়াশেনা করছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৭ সালের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ জাতীয় সংসদের পাশ হবার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো প্রশাসনকে। তার প্রধান অন্তরায় ছিলো এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েরা অবাধে চলাফেরা করবে। বেহায়াপনা করে বেড়াবে। নারীরা ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে। যা ধর্মীয় দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ কারণেই স্থানীয়রা এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় বাঁধা প্রদান করে। এমনকি এসব বাঁধা পার করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে সময় লেগেছিলো ৪ বছর। তবে তৎকালীন কিছু প্রগতিশীল সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবীদ ও গুণীজনের সহায়তায় ১৯৯১ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।


তবে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম কয়েকবছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের উপস্থিতি ছিলো একেবারেই নগন্য। সিলেটের স্থানীয় অভিভাবকেরা তাদের মেয়েদেরকে অনুৎসাহিত করতো এ বিশ্ববিদ্যালয় হতে শিক্ষা গ্রহণ থেকে। এমনকি সুযোগ পেলেও বৈবাহিক চাপ, পারিবারিক চাপ, সামাজিক অশান্তিসহ নানা বিষয় দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত ডিগ্রি শেষ করতে পারতো না।


এমন চরিতার্থ থেকে সিলেটের স্থানীয়রা এখনো এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি অবহেলার চোখে দেখে আসছে। এর প্রেক্ষিতে পরপর বিগত দুই বছরে সিলেটে ভয়াবহ বন্যার কারণ হিসেবে এ সিলেটে নারী শিক্ষার অগ্রসরতা, নারীদের ঘরের বাইরে বের হয়ে বেহায়াপনা চলাফেরাকে বিগত দুই বছর থেকে দায়ী করে আসছেন স্থানীয়রা।


নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় এক মৌলভী দাবি করেন, অবিবাহিত ছেলে-মেয়েরা অবাধে চলাফেরা করলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। তাছাড় যখন এর মাত্রা বেড়ে যায় তখন সেখানে আল্লাহ তার গজব দেন। আমি মনে করি, সিলেট একটা পূন্যভূমি। এখানে ৩৬০ আল্লাহর ওলি-আউলিয়া ঘুমিয়ে আছে। আর সিলেটে নারীদের এ বেহায়াপনা চলাফেরা আল্লাহ মেনে নিতে না পেরে বন্যারূপে এ গজব আমাদের উপর দিয়েছেন। আমরা চেয়েছিলাম এখানে (সিলেটে) নারী শিক্ষার অগ্রসরতার প্রয়োজন নেই। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন নেই। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দিন এ বিষয়টি বোঝার জন্য, এ দোয়া করি।


স্থানীয় সিএনজি চালক শরিফুল ইসলাম চাঁদ বলেন, নারীদের যতটুকু দরকার ততটুকু শিক্ষা নিবে। এজন্য মকতব, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা আছে। তবে এতো উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন নেই। তারা বাসা বাড়িত থাকবে। দিনশেষে তাদেরকে অন্যের সংসারে যেতে হবে, পরিবার সামলাবে, সংসার সামলাবে এইেো তাদের কাজ, এতো উচ্চশিক্ষা দিয়ে কি হবে!


তবে এর বিপরীতমুখী কথা বলছেন সমাজের প্রগতিশীল সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবীদ ও গুণীজনেরা। সিলেটের স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মী হাবিব রহমান বলেন, বন্যা হয়েছে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক কারণে। অতিবৃষ্টির কারণে অধিকমাত্রায় একসাথে পানি প্রবেশের কারণে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। যারা বলছে যে নারীদের অবাধ চলাফেরায় বন্যায় হয়েছে তারা ধর্মান্ধ্যতায় নিমজ্জিত রয়েছে।


তিনি আরও বলেন, নারীরা সমাজের বোঝা নয়। তাদেরকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখার এখন আর সযোগ নেই। তাদের প্রাপ্ত অধিকার তাদেরকে দিতে হবে। এসময় সিলেটের সকল অভিভাবকদেরকে সামাজিক গোড়ামি ও ধর্মান্ধ্যতা থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানান এ সংস্কৃতি কর্মী।

 

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম রকি বলেন, বন্যার কারণ হিসেবে নারীদেরকে দায়ী করা বিষয়টা হাস্যকর। পুরুষের সাথে কাধ মিলিয়ে নারীরাও সকল কাজে অংশগ্রহণ করবে, এইটা সকল ধর্মতে বলা হয়েছে।


“আর দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে নিরক্ষর অবহেলিত অদক্ষ রেখে দেশের উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই সংবিধান নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করেছে। নারীর অগ্রগতি শিক্ষা অর্জন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষাকে অগ্রধিকার দিয়ে নানা ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। অথচ সিলেটের স্থানীয়দের এমন কুরূচিপূণ্য ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনের সংস্কার কবে হবে? বলে প্রশ্ন রাখেন এ সচেতন শিক্ষার্থী।

 

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, সিলেট বিভাগের ৭৮ শতাংশ নারীই পারিবারিক কাজের বাইরে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কোনো কাজে অংশ নেন না। স্বল্প পরিসর কুটির শিল্পের কাজ, স্বল্প পরিসরে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করে চাকরীতে কর্মরত আছেন। এমনকি বিবিএস এর তথ্য মতে, সিলেটের যেসব নারীরা উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেনও তাদের অধিকাংশই সিলেটের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত আছেন। সিলেটের বাইরে কর্মস্থল হলে তেমন যায় না বা যেতে দেওয়া হয় না।  


কিছুদিন আগে সিলেটে নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন হয়েছে। সেখানে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সিলেটের নারীরা পিছিয়ে ছিলো। সামাজিক রীতির বাইরে আসতো না। তবে বর্তমানে সিলেটের নারী জাগরণে আমি অভিভূত। সিলেটে তারা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন ভবিষ্যতে পুরুষ ও নারী আলাদা করে দেখার সুযোগ থাকবে না। আমরা আশাবাদী, এই ভেদাভেদ অচিরেই দূর হবে।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার