ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৯২

সিলেটের আবদুল জব্বার : বিপদ-আপদে ছুটে যান মানুষের পাশে

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

করোনাকালে ঘরবন্দী জীবনে নিম্নবিত্তের ঘরে তখন খাবারের সংকট। বিপাকে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ান তিনি। শুধু করোনাকাল নয়, ৪১ বছর ধরে তিনি দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষকে অর্থসহায়তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-মসজিদ-মন্দির সংস্কার, এলাকার অবকাঠামো নির্মাণসহ নানাভাবে মানুষকে সহযোগিতা করেন। 

প্রান্তিক, অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘জাতীয় মানবকল্যাণ পদক’। শিক্ষানুরাগী ও পরোপকারী মানুষটির নাম আবদুল জব্বার ওরফে জলিল (৬২)।

আবদুল জব্বার সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সুনামপুর গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৮২ সাল থেকে তিনি সমাজসেবামূলক কাজ করছেন। পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আবদুল জব্বার জলিল ট্রাস্ট’।
শিক্ষানুরাগী জলিল

দক্ষিণ সুরমার বৈরাগীবাজারে একসময় কোনো উচ্চবিদ্যালয় ছিল না। ১৯৮৫ সালে স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় সেখানে ‘বৈরাগীবাজার উচ্চবিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় জব্বারের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তিনি বিদ্যালয়ে জমিদানের পাশাপাশি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ভবন বানিয়ে দিয়েছেন। এমনকি শুরুর তিন বছর একমাত্র শিক্ষক হিসেবে বিনা মূল্যে শিক্ষকতাও করেছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টি পুরো উপজেলায় দ্যুতি ছড়াচ্ছে।

এ ছাড়া জব্বারের অনুদানে সিলেটের অন্তত ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ভবন, মিলনায়তনসহ অবকাঠামোগত সংস্কার হয়েছে। তিনি দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে মিলনায়তন, জালালপুর কলেজে ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একাডেমিক ভবন বানিয়ে দিয়েছেন। নিজস্ব অর্থায়নে শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার খরচ জোগানোর পাশাপাশি নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন সায়রা খাতুন হিফজুল কোরআন মাদ্রাসা।

দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামসুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে আবদুল জব্বার কাজ করছেন। দক্ষিণ সুরমা ডিগ্রি কলেজের মিলনায়তনটি তিনি কয়েক বছর আগে নির্মাণ করে দিয়েছেন।
গরিবের পাশে থাকেন

সমাজের অনগ্রসর ও বিপাকে পড়া মানুষের বিপদ-আপদের বন্ধু হিসেবে সব সময় পাশে দাঁড়ান জব্বার। কন্যাদায়গ্রস্ত বাবাকেও তিনি অর্থসহায়তা করেন। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ৩০ জন মেয়েকে একসঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া অসচ্ছল ১৬৫টি পরিবারের থাকার জন্য দুই কক্ষ ও এক রান্নাঘরবিশিষ্ট টিনশেডের পাকাঘর বানিয়ে দিয়েছেন। এর বাইরে আরও অন্তত দুই শ ঘর নির্মাণে ঢেউটিন ও নগদ টাকা দিয়েছেন তিনি।

দক্ষিণ সুরমার সুনামপুর গ্রামের দিনমজুর শাহেদ আহমদ বলেন, তাঁর নানি একসময় ভিক্ষা করতেন। তাঁদের ভাঙাচোরা একটি মাটির ঘর ছিল। পাঁচ-ছয় বছর আগে তাঁদের একটা টিনশেডের পাকা ঘর বানিয়ে দেন জব্বার।

নব্বইয়ের দশকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছিল যোগাযোগ-বিড়ম্বিত। প্রান্তিক জনগণের যাতায়াতের সুবিধা নিশ্চিতে তিনি একক ও যৌথ উদ্যোগে উপজেলার মোগলাবাজার ও জালালপুর ইউনিয়নে ২৩টি ছোট-বড় কালভার্ট ও সেতু নির্মাণ করে দিয়েছেন। এ ছাড়া উপজেলার নেগাল, রাঘবপুর, গাংচরসহ বিভিন্ন গ্রামের পাশে কাঁচা-পাকা সড়ক বানিয়েছেন।
কে এই জব্বার

ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত আবদুল জব্বার সিলেটের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, চ্যারিটি ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত। সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বর্তমান কমিটির প্রথম সহসভাপতি তিনি। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সিলেটের সাবেক সভাপতি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘জাতীয় মানবকল্যাণ পদক ২০২০’ পেয়েছেন।

১৯৮৬ সালে ‘যাত্রিক ট্রাভেলস’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জব্বারের ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু। ‘আনন্দ ট্যুরিজম’ নামে তাঁর আরেকটি প্রতিষ্ঠান আছে। তিনি সিলেটের জেলরোড এলাকার ১২ তলাবিশিষ্ট আনন্দ টাওয়ারের স্বত্বাধিকারী। ১৯৮৫ সালে শামীম আরা বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে আছে।

আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করতে আমার ভালো লাগে। মানুষের বিপদে-আপদে তাই পাশে থাকার চেষ্টা করি। কোনো ধরনের চাওয়া বা পাওয়া থেকে নয়, আমৃত্যু মানুষের জন্যই কাজ করে যেতে চাই।’
ভয় ঠেলে সবার পাশে

করোনাকালে যখন সবাই আতঙ্কিত, তখন ভয় ঠেলে মানুষের পাশে দাঁড়ান জব্বার। করোনার শুরু থেকেই চিকিৎসক-নার্সদের সুরক্ষিত রাখতে তিনি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে পিপিই, মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়েছেন। পাশাপাশি করোনা রোগীদের জন্য বিনা মূল্যে বাসায় বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছেন।

সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভার ব্যবসায়ী ইয়ামিন শাহরিয়ার বলেন, তাঁর বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। কোথাও অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় আবদুল জব্বারের মাধ্যমে বিনা মূল্যে তিনি তিনটি অক্সিজেন সিলিন্ডার পেয়েছেন।

আবদুল জব্বার বলেন, লকডাউনের সময় দরিদ্র ও কর্মজীবী মানুষকে খাদ্যসহায়তা দিতে একটি কল সেন্টার চালু করেছিলেন। নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করলে গোপনে তাঁর বাসায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হতো। কল সেন্টারের মাধ্যমে তিনি ১০ হাজারের বেশি পরিবারকে সহায়তা করেছেন। এ ছাড়া করোনায় বেকার হওয়া অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। গত বছর সিলেটে বন্যার সময় প্রায় ২০ হাজার মানুষকে খাবার দিয়েছেন তিনি।

আবদুল জব্বারের কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা হলো মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড সিলেটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার সুবল চন্দ্র পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন জব্বার। তিনি মানুষের বিপদ-আপদের বন্ধু। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের সমস্যার খবর পেলেই তিনি এগিয়ে যান। স্থানীয়ভাবে তিনি জনদরদি মানুষ হিসেবে পরিচিত।
 

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার