ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
১৩৮

শ্রীমঙ্গলে পানির অভাবে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

‘হয় বিষের বোতল দেন। না হলে লাংলিয়া গাঙ্গের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেন’। চোখের সামনে এত কষ্টের ফসল জ্বলে পুড়ে নষ্ট হচ্ছে। ঋণ কইরা ১০ কিয়ার (৩০ শতাংশে ১ কিয়ার) জায়গা করেছি। কিন্তু পানির অভাবে সব ক্ষেত চোখের সমানে নষ্ট অই যার। সব জায়গা ফাইট্টা এই অবস্থা। এখন যদি ক্ষেতে পানি না পাই সব জায়গার হালি জ্বলি যাইবোগি। এই ক্ষতি কে দিবো। কার কাছে গিয়া কইমু। এখন আমরা কি করমু স্যার এসব কথা বলে হাউমাউ করে আর্তনাদ করছিলেন-আশিদ্রোণ ইউনিয়নের মতিগঞ্জ এলাকার কৃষক জিতেন্দ্র সরকার (২৮)। তিনি চোখের পানি টলটল করে ফেলে অভিযোগ করেন- ৪নং সিন্দুরখান ইউনিয়নের লোকমান মেম্বার লাংলিয়া ছড়া গাঙ্গের স্লুইস গেটে পানি আটকে রেখেছেন। বাড়তি পানিটাও তারা পাচ্ছেন  না।

সে কারণে তাদের জায়গা-জমিন সব শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। ধানের চারাও জ্বলে যাচ্ছে। এ অবস্থা শুধু কৃষক জিতেন্দ্র সরকারের নয়। শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর, শ্রীমঙ্গল সদর ও আশিদ্রোণ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের শত শত বিঘা জমির ফসল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। জমির ফসল বাঁচাতে এলাকার কৃষকরা স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও কৃষি বিভাগের  দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না।  ভুনবীর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রিয়ন সরকার জানান, ৩টি ইউনিয়নের মানুষ লাংলিয়াছড়া গাঙ্গের পানির উপকারভোগী। এর মধ্যে রস্তমপুর, লইয়ারকুল, উত্তরসুর, ভুজপুরসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে এ বছর বোরো চাষাবাদ হয়েছে। কিন্তু উজানের পানি আটকে রাখায় ফসলের বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি দ্রুত সুরাহার জন্য  ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সরজমিন রোববার (১৯শে ফেব্রুয়ারি) ফসলের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার উজানে সেচের পানি আটকে দেয়ায় চলতি বোরো ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। বৃষ্টির দেখা নেই। রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে জমি। রোদে পুড়ে বিবর্ণ হয়েছে বোরো ধানের চারা। জমি চাষ, শ্রমিকের মজুরি, তেলের দাম বৃদ্ধি, সার ও কীটনাশকের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ। ফলে ধান উৎপাদনে কৃষকের স্বপ্ন পূরণ হবে সে আশা এখন গুড়েবালি।

ক্ষেতে বোরো চারা রোপণের পর এখন পানির অভাবে মাটি ফেটে চৌচির হওয়ায় স্থানীয় কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। বৃষ্টির দিকে চেয়ে আছে মানুষসহ প্রাণীকুল। লাগানো জমিতে ধান বাঁচাতে মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষক। মাঘে মেঘে বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষক সময়মতো জমিতে বোরো রোপণ করতে পারছে না। দেরি করে ছড়া, গাঙ্গ, ডোবা, খাল-নালার পানি সেচ পদ্ধতি ব্যবহার করে রোপণ করলেও লোডশেডিং ও রোদে পুড়ে বিবর্ণ হয়েছে বোরো ধানের চারাগুলো। ফেটে চৌচির হচ্ছে আবাদি জমি। উপজেলার ভুনবীর, শ্রীমঙ্গল ও আশিদ্রোণ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, উজানের পানি না আসায় এ বছর বোরো ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে আছে। কোথাও বৃষ্টির ছিটেফোঁটা নেই। এ সময় রোপণকৃত জমি বৃষ্টির পানিতে জলমগ্ন থাকার কথা থাকলেও আবাদি জমি ফেটে চৌচির হয়েছে। বৃষ্টির জন্য দিন গুনছেন তারা। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন কখন হবে বৃষ্টি। কয়েকজন আবার সেচ পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপণ করলেও এখন লোডশেডিং এর কারণে সময়মতো পানি দিতে পারছেন না। ফলে উৎপাদন খরচ বাড়লেও ভালো ফলনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন কৃষকরা। অনেক কৃষক জমি চাষ করে রাখলেও পানির অভাবে রোপণ করতে পারছেন না।

সেচ ব্যবস্থা না থাকায় পানির অভাবে জমিগুলো পতিত রয়েছে। বোরো রোপণের জন্য তৈরি বীজতলায় ধানের চারা নষ্ট হচ্ছে। অনেক কৃষক এসব ধানের চারা গবাদিপশুকে খাওয়াচ্ছেন। রোববার বিকালে বিলাসের পাড় গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে দেখা হয় তার ফসলের ক্ষেতে। তিনি তার ক্ষেত পানির অভাবে ফেটে যাওয়ার দৃশ্য দেখিয়ে বলেন, উজানে লাংলিয়াছড়া রাবারড্যামে পানি আটকে রেখেছে সিন্দুরখান ইউনিয়নের লোকমান মেম্বার। রাবারড্যামের (ওভার) অতিরিক্ত পানিটা বিলাস গাঙ্গে তারা  আসতে দিচ্ছে না। আটকে রেখেছে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের এলাকার ধানি জমিনে গিয়ে দেখবেন ধানের চারার নাকে নাকে পানি। অথচ আমরা চাচ্ছি একটা সপ্তাহের জন্য পানি দেন। তারা কথা শুনছেন না। বাড়তি পানি ছাড়েন না। আমি ঋণ করে ৮ একর জমিন করেছি। জমিনে একফোঁটা পানি নেই। সব জমিন ফাইট্টা বিনাশ। পানি না পেলে ক্ষেত (অইত)  হবে না।

সবেরই একই অবস্থা।’ বিলাসের পাড়ের কৃষক ওসমান আলী (৩৫) বলেন, আমরার এই হাইল হাওরের সব জায়গাজমিন পানির লাগি শুকনা পড়ি থাকছে। আমরা এই সমস্ত জমিনে পানি দিতাম পারছি না। সব জায়াগা শুকনা। অনেকে ফসল লাগাতে পারছে না। যারা কষ্ট করে কিছু জমিনে ধান লাগিয়েছে। এখন পানি দিতে না পারায় নষ্ট হচ্ছে। জমিন ৬ কিয়ার করেছি। এর মাঝে এ কের ক্ষেতে পানি লাগাইতে পারছি। আর সব শুকনা। বড় সমস্যা হলো  উজান থেকে পানি বন্ধ করে রাখি দিছে। লাংলিয়া গাঙ্গের রাবার ড্যাম বিলাসের গাঙ্গের মাথা। সেখান থেকে পানি আমরা একেবারেই পাচ্ছি না। চেয়ারম্যান মেম্বার অনেকেরই জানিয়েছি কোনো সমাধান পাচ্ছি না। আনীত অভিযোগ প্রসঙ্গে ৪নং সিন্দুরখান ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার লোকমান বলেন, আমি পানি দেয়ার কেউ নই। লাংলিয়াছড়া ও জাসমী রাবারড্যামের দুটি মিলে পাবস সমবায় সমিতি আছে। এ সমিতির আমি কিছু না। 

বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কা
উপজেলার ভুনবীর বন, গোপালপুরের বন, রস্তমপুর, আলীসারকুলের বন, উদনারপাড়ের বন, বিলাসের পাড়ের উত্তর-দক্ষিণ পাশ, মতিগঞ্জের উত্তর, দক্ষিণ পাশের বন, উদনার গাঙ্গে ওপার, আশিদ্রোনের বন, তিতপুরের বন, শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের আমনাতপুরের বন, উত্তর উত্তসুরের বন কয়েকশত বিঘা জমিতে এখন ধানের জমি সবুজে ভরে গেছে। তবে, পানির অভাবে অধিকাংশ ধানক্ষেত ফেটে এখন চৌচির। সদ্য রোপণ করা ধানের চারা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। অনেক কৃষক মোটর ও শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি দিয়ে ধান রোপণ করছেন। কিন্তু জমিতে পানি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবার জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। তেলের দাম বৃদ্ধিতে  এখন পানি দেয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় কৃষক। এতে তাদের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ১০ হাজার ৯৫১ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৯ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়া ও পানি সংকটের কারণে লক্ষমাত্রা অর্জনে সমস্যা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মহিউদ্দিন জানান, গতকাল দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সিন্দুরখান ইউপি চেয়ারম্যানসহ আমি নিজে জামসী ও  লাংলিয়াছড়া রাবারড্যামের সভাপতি সম্পাদকদের নিয়ে সরজমিন লাংলিয়াছড়া স্লুইস গেটে পরিদর্শনে যান। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে- আপাতত: লাংলিয়াছড়া ও জামসি স্লুইস গেটে ৩টি করে মোট ৬টি প্লাস্টিকের পাইপ বসানো হবে। তবে এ সিদ্ধান্তে পানি সমস্যর কতোটা লাঘব হবে- এ নিয়ে তিনি আশার বাণী শোনাতে পারেননি। তিনি বলেন, এ চলতি মৌসুমে তুলনামূলক কম বৃষ্টি হওয়ায় বোরো চাষ করার বিষয়ে কৃষকদের সম্পূরক সেচের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।
 

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার