ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
১০৯১৪

রোগমুক্তির ওসমানীতে সবচেয়ে বড় রোগের নাম সাদেক!

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪  

ইসরাইল আলী সাদেক। পেশায় সিনিয়র স্টাফ নার্স। কর্মস্থল সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তবে রোগমুক্তির ওসমানী হাসপাতালে এখন সবচেয়ে বড় রোগের নাম সাদেক! এই হাসপাতালে শুধুমাত্র নার্সের চাকরি করেই গাড়ি-বাড়ি সবকিছুর মালিক সে। যার সবকিছুই অবৈধ পন্থায়।   

২০১৩ সালে সাদেক চাকরিপ্রাপ্ত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন ইসরাইল আলী সাদেক। সেখান থেকে তার অবৈধ কর্মকাণ্ড শুরু। প্রভাবশালীদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ধূর্ত সাদেক এই দশ বছরেই সাদেক প্রায় শত কোটি টাকার মালিক। সিলেটে নামে-বেনামে তার চল্লিশটিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স। রয়েছে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। টেন্ডার বাণিজ্যের কমিশন পেয়ে তিনি স্ত্রীকে কিনে দেন ত্রিশ লক্ষ টাকার গাড়ি, নিয়োগ বাণিজ্যে শুধু লাখ লাখ টাকাই কামিয়ে নেননি, সিওমেকে ঢুকিয়েছেন নিজের অসংখ্য আত্মীয়কেও। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সরকারি জমিতে তার লিজ নেওয়া ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান নামের ফার্মেসিটিও কাগজে কলমে তার ভাইয়েরই, যেখানে মূল দামের তিন গুণ দামে অস্ত্রোপচারের যন্ত্রাংশ বিক্রি করে করে সাদেক গড়েছেন টাকার পাহাড়।

আরও পড়ুন >> ওসমানী মেডিকেল কলেজে ত্রাসের নাম ‘টাকলা’ নাজমুল

শুধু যন্ত্রাংশ বিক্রির সিন্ডিকেটই নয়, নিজের চল্লিশটিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে তিনি একচ্ছত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন ওসমানীর এম্বুলেন্স সেবা। যেখানে তার সিন্ডিকেটকে টাকা না দিয়ে হসপিটাল থেকে লাশ বের করাও অসম্ভব মৃতের স্বজনদের জন্য।

এই সাদেক স্টাফ নার্স ২০১৩ সালে হাসপাতালে যোগদানের পর হতে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত হন। তিনি বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত হয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গকে মেনেজ করে নার্সিং শাখা, হিসাব শাখাসহ বিভিন্ন শাখাকে নিজের আয়ত্ত্বে রেখেছেন। প্রশাসন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, ওয়ার্ড মাস্টার সবার মাঝে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন সাদেক। হাসপাতালে ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন না করে নার্সিং শাখায় বসে বসে বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নার্সিং শাখার প্রশাসনিক কাযক্রম নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।  

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রায় ৮০০ জন নার্স কর্মরত রয়েছেন। নার্সদের পদায়ন, ডিউটি রোস্টার, রাত্রীকালীন ডিউটি (নাইট ডিউটি), নার্সদের বিভিন্ন প্রকারের ছুটি, বদলীসহ বিভিন্ন আবেদন, বদলীসহ বিভিন্ন ছাড়পত্র প্রদান ইত্যাদি সকল কাজকর্মই চলে তার নিয়ন্ত্রণে। প্রতিজন নার্সের বদলীর আবেদনের কাগজপত্র অধিদপ্তরে প্রেরণ করতে হলে তাকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা দিতে হয় অন্যথায় বদলীর আবেদন অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয় না।

অন্যদিকে অধিদপ্তর হতে নার্সের বদলীর আদেশ দিলেও ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা না দিলে বদলীর ছাড়পত্র প্রদান করা হয় না, এমনকি নানাভাবে হয়রানি করা হয়। ইসরাইল আলী সাদেকের  ক্ষমতা এত বেশি যে, যারা তার এই সকল কুকর্মের প্রতিবাদ করেছে তাদেরকে অন্যায়ভাবে বিভিন্ন প্রকার হয়রানি এবং ঝামেলায় ফেলে দেয়। ফলে তার সকল অপকর্ম মুখ বুজে সহ্য করতে হয় সবাইকে।

শুধু তাই নয়, চাঁদাবাজিতেও সিদ্ধহস্ত এই সাদেক। বিভিন্ন অজুহাতে নার্সিং কর্মকর্তা, অন্যান্য কর্মচারীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজির পাশাপাশি প্রতি বছর অডিট আসলেই চলে অডিটের নামে চাঁদাবাজি, রমজান মাসে ইফতারি আয়োজনের নামে চাঁদাবাজি, বিভিন্ন পূজার নামে চাঁদাবাজি, বিভিন্ন দিবস উদযাপনের নামে চলে চাঁদাবাজি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের (সংর্বধনা ও শুভেচ্ছার নামে) নাম ভাঙ্গিয়ে, বিভিন্ন সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে, বিভিন্ন দুর্যোগের সময় অসহায় মানুষকে সাহায্যের নামে তার চাঁদাবাজি হাসপাতালে সবারই জানা। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে পড়তে হয় হয়রানির মুখে।   

এভাবে আরও নানা প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে রেখেছে ইসরাইল আলী সাদেক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আউট সোর্সিং ঠিকাদারের সাথে মিলে মিথ্যা ও প্রতারণার মাধ্যমে নিয়োগ প্রার্থীদের কাছ থেকে ১ থেকে ২ লক্ষ করে টাকা আদায় করছেন। এছাড়া সাদেক সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে সুদের ব্যবসা করে আসছেন দীর্ঘদিন যাবত। তিনি কতিপয় ব্যক্তির মাধ্যমে উচ্চ সুদে শুধুমাত্র ব্যাংক চেক জামানতের মাধ্যমে গরীব কর্মচারীদের ঋণ প্রদান করে আসছেন। ঋণ বা সুদ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক চেকে ইচ্ছামত টাকা বসিয়ে উক্ত ব্যক্তিকে ব্ল্যাক মেইল করেন সাদেক।
 
তিনি এ যাবত অনিয়ম, দুর্নীতি, দালালী, আত্মসাৎসহ বিভিন্নভাবে জালিয়াতি করে বিপুল অর্থ এবং সম্পদ অর্জন করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্যান্য দপ্তরে তার বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে দীর্ঘদিন সিলেটের বিভিন্ন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নাম ভাঙিয়ে পার পেয়ে গেলেও এবার ফেঁসে যাচ্ছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নানা অনিয়ম জালিয়াতির মূল হোতা বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) সাধারণ সম্পাদক আলোচিত নার্স ইসরাইল আলী সাদেক।

ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাদেককে প্রধান আসামি করে একই ঘটনায় পূর্বে আটককৃত সহ মোট তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মামলার আসামিরা হলো, ইসরাইল আলী সাদেক, মো. আমিনুল ইসলাম ও সুমন চন্দ্র দেব। তারা তিনজনই ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত আছেন।

মঙ্গলবার (০৯ জানুয়ারি) রাতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হানিফ বাদি হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন।  

এর আগে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ঘুষের ৬ লাখ টাকাসহ নার্স মো. আমিনুল ইসলাম ও সুমন চন্দ্র দেবকে আটক করেন ডিজিএফআই সদস্যরা।

ওসমানী হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এই তিনজনের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়া, বদলি করানো, আউটসোর্সিং নিয়োগ দেওয়া, সরকারি ওষুধ বাইরে পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করে মামলা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স গীতা রানী হালদারের গত আট বছরের প্রাপ্য ৩৪ লাখ টাকা বকেয়া বিল করে দেওয়ার বিনিময়ে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন সাদেক। পরে গীতাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও চাপ দিয়ে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি করান। এর পরে গীতা তাকে অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা দেন। পরে ৯ জানুয়ারি দুপুর ১২টার সময় সাদেকের দাবি করা বাকি ৬ লাখ টাকা আমিনুলের কাছে জমা দেন গীতা। তখন ডিজিএফআই সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমিনুলকে নগদ ৬ লাখ টাকাসহ আটক করেন। পরে আমিনুলের দেওয়া তথ্যমতে সুমনকে আটক করা হয়।

আটকদের পুলিশে সোপর্দ করা হলে তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সাদেকের নির্দেশনায় ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবত এসব অবৈধ কাজ করে আসছেন তারা।

চলবে...

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার