বেনাপোল দিয়ে তিন মাসে ৫ লাখ টন পণ্য আমদানি

পদ্মা সেতু ব্যবহারের ফলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য সহজ ও সাশ্রয়ী হয়েছে। গত তিন মাসে এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৫ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। খরচ কমায় অনেক ভারতীয় রপ্তানিকারকের মধ্যে এখন বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতেও আগ্রহ বেড়েছে। এতে চলতি অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে বলে মনে করছেন বাণিজ্যসংশিষ্টরা। বন্দরের তথ্য মতে, বেনাপোল দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে প্রায় ৪শ ট্রাক পণ্য। আর বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হচ্ছে ৩শ ট্রাকের ওপরে। দ্রুত পণ্য খালাসে সহযোগিতা করা হচ্ছে। গত তিন মাসে ২৫ হাজার ৮৪৬টি ভারতীয় ট্রাকে প্রায় ৫ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এবং বন্দর থেকে ৩৯ হাজার ৭১৭টি বাংলাদেশি ট্রাকে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টন পণ্য খালাস হয়েছে।

বাণিজ্যসংশ্লিষ্টরা জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক শহর হিসেবে পরিচিত

কলকাতার দূরত্ব ৮৫ কিলোমিটার। দূরত্ব কম হওয়ায় দেশের বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর আগ্রহ বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে। দেশের শিল্পকলকারখানায় ব্যবহৃত কাঁচালের ৭০ ভাগ আমদানি হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। তবে বৈরী আবহাওয়ায় ঘন কুয়াশা আবার কখনো

যানজটে ট্রাকযোগে বেনাপোল থেকে ঢাকা পণ্য নিতে ৩ থেকে ৪ দিন লেগে যেত। এতে অতিরিক্ত সময় যেমন ব্যয় হতো তেমনি দ্রুত পণ্য না পৌঁছানোয় ব্যাহত হতো শিল্পকলকারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া। এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে বহুদিন ধরে মানুষের দাবি ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণের। আর ২০২২ সালের ২৫ জুন বাংলার ১৬ কোটি মানুষের সে স্বপ্ন পূরণ করে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে শেখ হাসিনার সরকার। এতে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-র্প্বূ অঞ্চলের যশোরসহ ২১ জেলা যুক্ত হয়। ফেরির যন্ত্রণা এড়িয়ে বেনাপোল বন্দর থেকে মাত্র ৫ ঘণ্টায় পণ্যবাহী ট্রাক এখন চলে যাচ্ছে ঢাকায়। ফলে বাণিজ্য সহজ হওয়ায় অন্য বন্দর ব্যবহারকারীরা বেনাপোল বন্দর ব্যবহার শুরু করেছে।

এদিকে পদ্মা সেতুর ওপর রেলপথের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সড়ক পথের পাশাপাশি রেলপথ ব্যবহার শুরু হলে বেনাপোল বন্দর দেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি ভূমিকা রাখবে মনে করছেন বাণিজ্যসংশ্লিষ্টরা।

পণ্য পরিবহনকারী ট্রাকচালক রহমত আলী জানান, পদ্মা সেতুর কারণে আমদানি পণ্য নিয়ে হাসতে হাসতে যেতে পারছি ঢাকায়। কাঁচামাল নিয়ে এখন আর চিন্তায় পড়তে হয় না।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সাহসিকতায় পদ্মা সেতুর কারণেই আজ আমাদের বাণিজ্য সহজ হয়েছে। আগামী দিনে আমদানি, রপ্তানি দুটাই বাড়বে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমসবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, পদ্মা সেতুতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ভারতীয়রা এখন এদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ঝুঁঁকছেন। এতে দেশে কর্মসংস্থান বেড়ে অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে।

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল জানান, পদ্মা সেতু কল্যাণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যে আরও উৎসাহিত হচ্ছেন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা।