সমুদ্র অর্থনীতি ও আমাদের গৌরবদীপ্ত অর্জন

সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। কৃষিকে বলা হয় দেশের অর্থনীতির ফুসফুস। কৃষি যখন এদেশের অর্থনীতির ফুসফুস তখন এদেশের হৃদপিণ্ড হিসেবে কাজ করে সমুদ্রপথ। কেননা এই সমুদ্র ঘিরেই আমদানি-রপ্তানি, শিল্প এলাকা, বন্দর কার্যক্রম এবং সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের সুযোগ তৈরি হয়। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

বঙ্গোপসাগরের উপকণ্ঠে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ায় এর বিরাট সুবিধা পাচ্ছি আমরা। চট্টগ্রাম বন্দরটি তো ইতোমধ্যে বিশ্বের ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে আয় বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রাজস্ব এসেছে ৩ হাজার ২৪৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

সরকারের বিভিন্ন কৌশল ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত এবং বৈদেশিক জাহাজ আসার সংখ্যা দিন দিন বাড়ার কারণে রাজস্ব আয় বাড়ছে বলে দাবি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের। এ ছাড়া প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৪ শতাংশ হারে বাড়ছে সমুদ্রপথে দেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন। আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে ২০২১ সালে এ বন্দর বিশ্বের ১০০টি কন্টেনার হ্যান্ডলিং পোর্টের মধ্যে ৬৭তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে।

আর বর্তমান সরকারের আমলে সমুদ্র বিজয় বাংলাদেশের জন্য সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে পথ উন্মুক্ত হয়েছে। নিয়মানুযায়ী সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পর প্রথম পাঁচ বছরে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের জন্য আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষকে কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয় না। মাছ ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে গুরুত্বারোপ করেছে সরকার। ইতোমধ্যে সাগরে প্রাকৃতিক গ্যাসের খনিও সন্ধান পেয়েছে।

এরই মধ্যে সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে অগ্রসর হতে শুরু করেছে সরকার। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র, নৌপরিবহন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বর্তমান সরকারের সময়পোযোগী এসকল উদ্যোগের কারণে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ইতালি সরাসরি রুট চালু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্দরে বন্দরে লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের ৮০টি মালবাহী জাহাজ।

এর বাইরেও নতুন করে আমেরিকা, ইউরোপ, চীনসহ বিভিন্ন দেশ ট্রান্সশিপমেন্টের বদলে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সরাসরি জাহাজের রুট খোলার বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। এতে করে আগামীতে স্পেন, চীন, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকার সঙ্গেও সরাসরি জাহাজ চলাচল রুট শুরু হওয়ার অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে সমুদ্রপথ আজ অর্থনীতির অপার খনি। বন্দর সুবিধা, কর্ম সংস্থান, বিনিয়োগের ক্ষেত্র এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপার আধার হয়ে উঠছে। এতে করে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। পাল্টে যাবে জীবন যাত্রার মান।