বিশ্বে ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার প্রাণ নিল করোনা

চলমান মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে আগের দিনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে প্রাণঘাতী ভাইরাসে নতুন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যাও। গেল ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে কোভিড শনাক্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১০ হাজারের অধিক মানুষ। নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে রোগটিতে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখে পৌঁছেছে।

সর্বশেষ এক দিনে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এ দিকে দৈনিক প্রাণ হারানোদের তালিকায় এখনো দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। আর প্রাণহানির তালিকায় এরপরই রয়েছে যথাক্রমে ব্রাজিল, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, আর্জেন্টিনা এবং কাজাখস্তানের নাম। এতে বিশ্বব্যাপী রোগটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ কোটি ২৯ লাখের ঘর ছাড়িয়েছে। অপর দিকে মৃতের সংখ্যাও এরই মধ্যে ৫৬ লাখ ৪৪ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে মৃত্যু, আক্রান্ত ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডো মিটারস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে কোভিড সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১০ হাজার ২২১ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় প্রাণহানির সংখ্যা আট শতাধিক বেড়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৮ জনে পৌঁছে গেছে।

নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৩৪ লাখ ৯৯ হাজার ৭৮ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় নতুন আক্রান্ত বলে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন লাখ বেড়েছে। এতে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৩৬ কোটি ২৯ লাখ ছয় হাজার ৬১১ জনে দাঁড়িয়েছে।

এ দিকে গেল ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মহামারি করোনার থাবায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু দেখেছে যুক্তরাষ্ট্রে জনগণ। একই সময়ে মার্কিন ভূখণ্ডে নতুন করে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ৬১ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন দুই হাজার ৭৬২ জন। করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটিতে এ পর্যন্ত সাত কোটি ৪১ লাখ ৬৯ হাজার ১৫১ জন রোগটিতে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন আট লাখ ৯৮ হাজার ২৯৯ জন।

অন্য দিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় এখনো দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়ার নাম। গত এক দিনে রুশ ভূখণ্ডে করোনার থাবায় সংক্রমিত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫৭ জন। আর নতুন করে রোগটিতে সংক্রমিত হয়েছেন ৭৪ হাজার ৬৯২ জন। এছাড়া মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে এক কোটি ১৩ লাখ ১৫ হাজার ৮০১ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ২৮ হাজার ১০৫ জনের।

ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে নতুন করে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন চার লাখ ২৮ হাজার আট জন। এই সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ২৫৮ জন। মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত এক কোটি ৭৭ লাখ ৩০ হাজার ৫৫৬ জন রোগটিতে শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ৭৪৭ জনের।

গত ২৪ ঘণ্টায় ইউরোপের অন্য দেশ স্পেনে নতুন করে মহামারি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এক লাখ ৩৩ হাজার ৫৫৩ জন। এই সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ২১৫ জন। একই সময়ে অঞ্চলটির আরেক দেশ ইতালিতে নতুন করে কোভিড আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ ৬৭ হাজার ২০৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৬২ জন।

এছাড়া গেল ২৪ ঘণ্টায় ব্রিটেনে নতুন করে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এক লাখ দুই হাজার ২৯২ জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪৬ জন। মহামারির শুরু থেকে যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত এক কোটি ৬১ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৯ জন রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে এক লাখ ৫৪ হাজার ৭০২ জন মারা গেছেন। একই সময়ে কলম্বিয়ায় নতুন করে প্রাণঘাতী রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৮৮৯ জন। একই সময়ে মারা গেছেন ২৮২ জন।

এছাড়া আরেক ইউরোপীয় দেশ জার্মানিতে নতুন করে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এক লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৯ জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ১৮৪ জন। করোনা মহামারির তাণ্ডব শুরুর পর থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত ৯১ লাখ ৪৫ হাজার ২৭৪ জন রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন এক লাখ ১৭ হাজার ৮৮৩ জন। একই সময়ে ইউক্রেনে নতুন করে কোভিড শনাক্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ৩২১ জন এবং প্রাণ দিয়েছেন ১৪১ জন।

করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও প্রাণ হারানোদের সংখ্যায় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে কোভিড সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৬০৬ জন। আর নতুন করে রোগটিতে শনাক্ত হয়েছেন দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৭৮ জন। অপর দিকে মহামারির তাণ্ডব শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দুই কোটি ৪৫ লাখ ৫৩ হাজার ৯৫০ জনে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ছয় লাখ ২৪ হাজার ৫০৭ জনের।

এ দিকে কোভিড সংক্রমিতদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ভারত। যদিও প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানোদের সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান এখন তৃতীয়। মহামারির তাণ্ডব শুরুর পর থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চার কোটি তিন লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছেন চার লাখ ৯১ হাজার ৭২৯ জন।

এছাড়া কোভিড সংক্রমিত হয়ে গেল এক দিনে ইউরোপের মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্কে ১৮৮ জন, কাজাখস্তানে ৩১১ জন, পোল্যান্ডে ২৭৬ জন, কানাডায় ২২৬ জন, আর্জেন্টিনায় ৩১৬ জন, গ্রিসে ১১৮ জন, হাঙ্গেরিতে ৬৯ জন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৯৪ জন এবং ভিয়েতনামে ১৫৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। অন্য দিকে নির্ধারিত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোতে মারা গেছেন ৪৭৫ জন। মহামারির তাণ্ডব শুরুর পর থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ তিন হাজার ৭৭৬ জনের।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এশিয়ার পরাশক্তি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের ১১ মার্চ প্রাণঘাতী ভাইরাসটিকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে।