ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৭৪

জিকিরে মন প্রশান্ত হয়, কখন কীভাবে করবেন

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ৫ মার্চ ২০২২  

জিকির শব্দের অর্থ হলো স্বরণ করা, মনে করা, উল্লেখ করা, বর্ণনা করা। আর  শরীয়তের আলোকে জিকির বলা হয়, মুখে বা অন্তরে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা এবং প্রশংসা করা, পবিত্র কুরআন পাঠ করা, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা, তার আদেশ-নিষেধ পালন করা, তার প্রদত্ত নেয়ামত ও সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা।

ইমাম নববী (রহ.) বলেন, জিকির কেবল তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আনুগত্যের সাথে প্রত্যেক আমলকারীই জিকিরকারী হিসেবে বিবেচিত। আল্লাহ তাআলার জিকির এমন এক মজবুত রজ্জু যা সৃষ্টিকে স্রষ্টার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে। তার সান্নিধ্য লাভের পথ সুগম করে। মানুষকে উত্তম আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত করে। সরল ও সঠিক পথের উপর অবিচল রাখে। একারণে আল্লাহ তাআলা মুসলিম ব্যক্তিকে দিবা-রাত্রে গোপনে-প্রকাশ্যে জিকির করার আদেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর। (সূরা আহযাব ৪১,৪২) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, তোমরা প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশংকচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন হবে না। (সূরা আরাফ ২০৫)

জিকিরের ফজিলত ও উপকারিতা

ইবনুল আরবী (রহ.) বলেন, এ এক বড় অধ্যায়, যেখানে জ্ঞানীরা হয়রান দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কারণ, এর রয়েছে অনেক উপকারিতা, ইমাম ইবনুল কাইয়ুম রহ. তার এক কিতাবে ৭০-এর অধিক উপকার উল্লেখ করেছেন। নিম্নে কয়েকটির বিবরণ দেয়া হল-

এক. ইহকাল ও পরকালে অন্তরে প্রশান্তি ও স্থিরতা লাভ : আল্লাহ তাআলা বলেন—
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻭَﺗَﻄْﻤَﺌِﻦُّ ﻗُﻠُﻮﺑُﻬُﻢْ ﺑِﺬِﻛْﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻟَﺎ ﺑِﺬِﻛْﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻄْﻤَﺌِﻦُّ ﺍﻟْﻘُﻠُﻮﺏُ . ﺍﻟﺮﻋﺪ 28:
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয় ; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়। (সূরা রাদ : ২৮)

দুই. আল্লাহর জিকির সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম ইবাদত : কেননা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করা হচ্ছে ইবাদতের আসল লক্ষ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন—
ﻭَﻟَﺬِﻛْﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﻣَﺎ ﺗَﺼْﻨَﻌُﻮﻥَ ﴿ 45 ﴾ ﺍﻟﻌﻨﻜﺒﻮﺕ
আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন। [সূরা আনকাবুত ৪৫]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন—
ﻭَﺍﻟﺬَّﺍﻛِﺮِﻳﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻭَﺍﻟﺬَّﺍﻛِﺮَﺍﺕِ ﺃَﻋَﺪَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻬُﻢْ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺓً ﻭَﺃَﺟْﺮًﺍ ﻋَﻈِﻴﻤًﺎ ﴿ 35 ﴾ ‏( ﺍﻷﺣﺰﺍﺏ )
এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী – এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহা প্রতিদান। [সূরা আহযাব ৩৫]
আবুদ্দারদা রা. থেকে বর্ণিত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন—
ﺃﻻ ﺃﻧﺒﺌﻜﻢ ﺑﺨﻴﺮ ﺃﻋﻤﺎﻟﻜﻢ، ﻭﺃﺯﻛﺎﻫﺎ ﻋﻨﺪ ﻣﻠﻴﻜﻜﻢ، ﻭﺃﺭﻓﻌﻬﺎ ﻓﻲ ﺩﺭﺟﺎﺗﻜﻢ، ﻭﺧﻴﺮ ﻟﻜﻢ ﻣﻦ ﺇﻋﻄﺎﺀ ﺍﻟﺬﻫﺐ ﻭﺍﻟﻮﺭﻕ، ﻭﻣﻦ ﺃﻥ ﺗﻠﻘﻮﺍ ﻋﺪﻭﻛﻢ ﻓﺘﻀﺮﺑﻮﺍ ﺃﻋﻨﺎﻗﻬﻢ ﻭﻳﻀﺮﺑﻮﺍ ﺃﻋﻨﺎﻗﻜﻢ ، ﻗﺎﻟﻮﺍ ﺑﻠﻰ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ، ﻗﺎﻝ : ﺫﻛﺮ ﺍﻟﻠﻪ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ 3299: )
আমি কি তোমাদেরকে এমন এক আমল সম্পর্কে অবহিত করব না, যা তোমাদের অধিপতির নিকট সবচেয়ে উত্তম ও পবিত্র, এবং তোমাদের মর্যাদা অধিক বৃদ্ধিকারী, এবং তোমাদের জন্য স্বর্ণ-রূপা দান করা ও দুশমনের মুখোমুখি হয়ে তোমরা তাদের গর্দানে বা তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করার চেয়ে উত্তম ? তারা বলল,হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তিনি বললেন :-জিকরুল্লাহ (আল্লাহর জিকির বা স্মরণ)। (তিরমিজি:৩২৯৯)

তিন. আল্লাহর জিকিরকারী, তার নিদর্শনাবলী থেকে শিক্ষা লাভকারী: তারাই বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
ﺇِﻥَّ ﻓِﻲ ﺧَﻠْﻖِ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻭَﺍﺧْﺘِﻠَﺎﻑِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ ﻟَﺂَﻳَﺎﺕٍ ﻟِﺄُﻭﻟِﻲ ﺍﻟْﺄَﻟْﺒَﺎﺏِ ﴿ 190 ﴾ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻗِﻴَﺎﻣًﺎ ﻭَﻗُﻌُﻮﺩًﺍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺟُﻨُﻮﺑِﻬِﻢْ ﴿ 191 ﴾ ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ
আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকের জন্য, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে … [সূরা আলে -ইমরান ১৯০- ১৯১]

চার. আল্লাহর জিকির সুরক্ষিত দুর্গ: বান্দা এ-দ্বারা শয়তান থেকে রক্ষা পায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ইয়াহইয়া বিন জাকারিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসরাঈল-তনয়দেরকে বলেছেন :—
ﻭﺁﻣﺮﻛﻢ ﺃﻥ ﺗﺬﻛﺮﻭﺍ ﺍﻟﻠﻪ، ﻓﺈﻥ ﻣﺜﻞ ﺫﻟﻚ ﻣﺜﻞ ﺭﺟﻞ ﺧﺮﺝ ﺍﻟﻌﺪﻭ ﻓﻲ ﺃﺛﺮﻩ ﺳﺮﺍﻋﺎ، ﺣﺘﻰ ﺇﺫﺍ ﺃﺗﻰ ﻋﻠﻰ ﺣﺼﻦ ﺣﺼﻴﻦ ﻓﺄﺣﺮﺯ ﻧﻔﺴﻪ ﻣﻨﻬﻢ، ﻛﺬﻟﻚ ﺍﻟﻌﺒﺪ ﻻ ﻳﺤﺮﺯ ﻧﻔﺴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﺇﻻ ﺑﺬﻛﺮ ﺍﻟﻠﻪ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻓﻲ ﻣﺴﻨﺪﻩ 2790: )
এবং আমি তোমাদেরকে আল্লাহর জিকিরের আদেশ দিচ্ছি, কারণ এর তুলনা এমন এক ব্যক্তির ন্যায় যার পিছনে দুশমন দৌড়ে তাড়া করে ফিরছে, সে সুরক্ষিত দুর্গে প্রবেশ করে নিজকে রক্ষা করেছে। অনুরূপ, বান্দা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে শয়তান থেকে সুরক্ষা পায়। (আহমদ:২৭৯০)

পাঁচ. জিকির মানুষের ইহকাল ও পরকালের মর্যাদা বৃদ্ধি করে : আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন :-
ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺴﻴﺮ ﻓﻲ ﻃﺮﻳﻖ ﻣﻜﺔ، ﻓﻤﺮ ﻋﻠﻰ ﺟﺒﻞ ﻳﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺟﻤﺪﺍﻥ، ﻓﻘﺎﻝ : ﺳﻴﺮﻭﺍ – ﻫﺬﺍ ﺟﻤﺪﺍﻥ - ﺳﺒﻖ ﺍﻟﻤﻔﺮﺩﻭﻥ ﻗﺎﻝ : ﻭﻣﺎ ﺍﻟﻤﻔﺮﺩﻭﻥ، ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺍﻟﺬﺍﻛﺮﻳﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺜﻴﺮﺍ ﻭﺍﻟﺬﺍﻛﺮﺍﺕ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ 4834:
মক্কার একটি রাস্তায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁটছিলেন। জুমদান নামক পাহাড় অতিক্রম করার সময় বললেন: তোমরা চল,-এটা জুমদান-মুফাররাদুন অর্থাৎ একক গুণে গুণান্বিতরা এগিয়ে গেছে তিনি জিজ্ঞেস করলেন :ইয়া রাসূলুল্লাহ মুফাররদূন অর্থাৎ একক গুণে গুণান্বিত কারা ? জওয়াবে তিনি বললেন :-আল্লাহকে বেশি করে স্মরণকারী নারী-পুরুষ। (মুসলিম:৪৮৩৪)

ছয়. জিকিরের কারণে ইহকাল ও পরকালে জীবিকা বৃদ্ধি পায় : আল্লাহ তাআলা নূহ আ. এর কথা বিবৃত করে বলেন :—
ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﺍﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭﺍ ﺭَﺑَّﻜُﻢْ ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻏَﻔَّﺎﺭًﺍ ﴿ 10 ﴾ ﻳُﺮْﺳِﻞِ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻣِﺪْﺭَﺍﺭًﺍ ﴿ 11 ﴾ ﻭَﻳُﻤْﺪِﺩْﻛُﻢْ ﺑِﺄَﻣْﻮَﺍﻝٍ ﻭَﺑَﻨِﻴﻦَ ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞْ ﻟَﻜُﻢْ ﺟَﻨَّﺎﺕٍ ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞْ ﻟَﻜُﻢْ ﺃَﻧْﻬَﺎﺭًﺍ ﴿ 12 ﴾ ﻧﻮﺡ
বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। [১০] তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। [১১] তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। [১২] [সূরা নূহ]

উল্লেখ্য যে, ইস্তিগফার জিকিরের বিশেষ প্রকার হিসেবে বিবেচিত।

জিকিরের প্রকারভেদ

জিকির অন্তর দ্বারা হতে পারে, জিহ্বা দ্বারা হতে পারে, বা এক সঙ্গে উভয়টা দ্বারাও হতে পারে। এর বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, নিচে কিছু উল্লেখ করা হল—

এক. কুরআনে করিম পাঠ করা : এ হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর নাজিলকৃত আল্লাহ তাআলার কালাম। আল্লাহর কালাম বিধায় সাধারণ জিকির-আজকারের চেয়ে কোরআন পাঠ করা উত্তম। আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রা: থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন :-
ﻣﻦ ﻗﺮﺃ ﺣﺮﻓﺎ ﻣﻦ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻠﻪ ﺑﻪ ﺣﺴﻨﺔ، ﻭﺍﻟﺤﺴﻨﺔ ﺑﻌﺸﺮ ﺃﻣﺜﺎﻟﻬﺎ، ﻻ ﺃﻗﻮﻝ ‏( ﺃﻟﻢ ‏) ﺣﺮﻑ، ﻭﻟﻜﻦ ﺃﻟﻒ ﺣﺮﻑ، ﻭﻻﻡ ﺣﺮﻑ، ﻭﻣﻴﻢ ﺣﺮﻑ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ 2735: )
যে কিতাবুল্লাহর একটি অক্ষর পড়ল তার জন্য এর বিনিময়ে একটি নেকি অবধারিত। এবং তাকে একটি নেকির দশ গুণ ছাওয়াব প্রদান করা হবে। আমি বলছি না আলিফ লাম মীম একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, এবং লাম একটি অক্ষর, এবং মীম একটি অক্ষর। (তিরমিজি:২৭৩৫)

দুই. মৌখিক জিকির : যেমন তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদি পড়া, যা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।

তিন. প্রার্থনা : এটা বিশেষ জিকির, কেননা এ-দ্বারা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ হয়, ইহকাল ও পরকালের প্রয়োজন পূরণ হয়।

চার. ইস্তিগফার করা : আল্লাহ তাআলা নূহ আ.-এর কথা বিবৃত করে বলেন :-
ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﺍﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭﺍ ﺭَﺑَّﻜُﻢْ ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻏَﻔَّﺎﺭًﺍ ﴿ 10 ﴾ ﻧﻮﺡ
বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। [সূরা নূহ ১০]

পাঁচ. অন্তর দিয়ে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা : এটা অন্যতম বড় জিকির। আল্লাহ তাআলা বলেন :-
ﺇِﻥَّ ﻓِﻲ ﺧَﻠْﻖِ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻭَﺍﺧْﺘِﻠَﺎﻑِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ ﻟَﺂَﻳَﺎﺕٍ ﻟِﺄُﻭﻟِﻲ ﺍﻟْﺄَﻟْﺒَﺎﺏِ ﴿ 190 ﴾ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻗِﻴَﺎﻣًﺎ ﻭَﻗُﻌُﻮﺩًﺍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺟُﻨُﻮﺑِﻬِﻢْ ﻭَﻳَﺘَﻔَﻜَّﺮُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺧَﻠْﻖِ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻣَﺎ ﺧَﻠَﻘْﺖَ ﻫَﺬَﺍ ﺑَﺎﻃِﻠًﺎ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻓَﻘِﻨَﺎ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﴿ 191 ﴾
আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনা বলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে ও বলে হে আমদের প্রতিপালক ! তুমি এগুলো নিরর্থক সৃষ্টি করনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদেরকে অগ্নি-শাস্তি হতে রক্ষা কর। [সূরা আলে ইমরান১৯০,১৯১]

ছয়. রকমারি ইবাদতের অনুশীলন করা : যেমন সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান, পিতা-মাতার সাথে অমায়িক আচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা, জ্ঞানার্জন ও অপরকে শিক্ষাদান-ইত্যাদি। কেননা, সৎকর্মের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন—
َ ﺃَﻗِﻢِ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻟِﺬِﻛْﺮِﻱ ﴿ 14 ﴾ ﻃﻪ
এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর। [সূরা তা-হা ১৪]

সময়সূচি হিসেবে জিকির দু ভাগে বিভক্ত—

এক. সাধারণ জিকির : যার কোন নির্দিষ্ট সময় বা স্থান নেই। বিশেষ কিছু সময় বা স্থান ব্যতীত যে কোন সময়ে বা স্থানে এ সব জিকির করার অবকাশ আছে।

দুই. বিশেষ জিকির : যা বিশেষ সময়, অবস্থা ও পাত্র অনুসারে করা হয়। নিচে এমন কিছু সময়, অবস্থা ও স্থানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হল, যার সঙ্গে বিশেষ বিশেষ জিকিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে—

 • সকাল-বিকাল : এর সময় হচ্ছে ফজর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত, আছরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
• ঘুমানো ও ঘুম থেকে উঠার সময়।
• ঘরে প্রবেশের সময়।
• মসজিদে প্রবেশ ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়।
• অসুস্থতার সময়।
• বিপদাপদ ও পেরেশানীর সময়।
• সফরের সময়।
• বৃষ্টি বর্ষণের সময়।

জিকিরের কতিপয় নমুনা

এক. সাধারণ জিকির : সামুরা বিন জুনদব থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন :
ﺃﺣﺐ ﺍﻟﻜﻼﻡ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺭﺑﻊ : ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ، ﻭﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ، ﻻ ﻳﻀﺮﻙ ﺑﺄﻳﻬﻦ ﺑﺪﺃﺕ ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ 3985: )
আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কথা চারটি : সুবহানাল্লাহ, আলহাম্দু লিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর, যে কোন একটি দ্বারাই আরম্ভব করা যেতে পারে। (মুসলিম:৩৯৮৫)

দুই. সকাল-বিকালের জিকির : আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন :-
ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﺣﻴﻦ ﻳﺼﺒﺢ ﻭﺣﻴﻦ ﻳﻤﺴﻲ : ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺤﻤﺪﻩ ﻣﺎﺋﺔ ﻣﺮﺓ، ﻟﻢ ﻳﺄﺕ ﺃﺣﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﺑﺄﻓﻀﻞ ﻣﻤﺎ ﺟﺎﺀ ﺑﻪ ﺇﻻ ﺃﺣﺪ ﻗﺎﻝ ﻣﺜﻞ ﻣﺎ ﻗﺎﻝ ﺃﻭ ﺯﺍﺩ ﻋﻠﻴﻪ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ 4858:
যে সকাল এবং বিকালে সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহী একশত বার বলবে, যে এ-রকম বা এর অতিরিক্ত বলবে, কিয়ামত দিবসে এর চেয়ে উত্তম কেউ কিছু আনয়ন করতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম:৪৮৫৮)

তিন. বিপদের মুহূর্তে জিকির : আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপদের সময় বলতেন :-
ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻌﻈﻴﻢ ﺍﻟﺤﻠﻴﻢ، ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﺭﺏ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﺍﻟﻌﻈﻴﻢ، ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﺭﺏ ﺍﻟﺴﻤﻮﺍﺕ ﻭﺭﺏ ﺍﻷﺭﺽ ﻭﺭﺏ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ 4909: )
আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, যিনি সুমহান, সহিষ্ণুবান, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই যিনি মহান আরশের রব, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই যিনি আকাশসমূহের রব, এবং ভূমির রব এবং সম্মানিত আরশের রব। (সহীহ মুসলিম:৪৯০৯)

মোদ্দা কথা, বর্ণিত ফজিলত ও প্রতিশ্রুত পুরস্কার হাসিল করার অভীষ্ট লক্ষ্যে উল্লেখিত ও অনুল্লেখিত প্রয়োজনীয় জিকিরসমূহ মুখস্থ করে নিয়মিত পড়া প্রত্যেক মুসলমানের উচিত।

তবে মনে রাখবেন জিকির করতে গিয়ে এমন আচরন যেনো না হয় যে, ইসলামী শরঈ অনুযায়ী হয়। এবং লাফা লাফি, ফালা ফালি ও ঝাকা ঝাকি, বেপর্দা বেহায়াপনা সহ মহিলাদের উচ্চসুর, ভন্ডামি তবলা গান বাজনা করা সম্পূর্ণ ভাবে হারাম।

হে আল্লাহ, আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফীক দিন, আমিন।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার