ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৬০

সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন : কেন দ্রুত পাস করা উচিত?

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০২৩  

প্রতি বছর বাংলাদেশে ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের মধ্যে প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। এদের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পরোক্ষ ধূমপানজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

অধূমপায়ীদের মধ্যে যারা বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের সংস্পর্শে আসেন তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। আর স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ।

পরোক্ষ ধূমপানের এসব ক্ষতিকারক দিকের বিবেচনায় বিদ্যমান ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত)’-এ পাবলিক প্লেস ও পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ধূমপান নিষিদ্ধ করা আছে। তবে এর পাশাপাশি এই আইনে কোনো কর্তৃপক্ষ চাইলে পাবলিক প্লেস বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা (Designated Smoking Area, DSA) রাখতে পারে—এমন বিধান রাখা আছে।

এর ফলে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলো পুরোপুরি ধূমপানমুক্ত করা যাচ্ছে না। অথচ এই ধূমপানের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থান বা ডিএসএ বাতিল করা গেলে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারকারীদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা ৮৫ শতাংশ কমানো সম্ভব বলে দাবি করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বলাবাহুল্য, পাবলিক প্লেস ও ট্রান্সপোর্টে ডিএসএ বাতিল করা গেলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে আগামী প্রজন্ম। এতে করে কিশোর/তরুণদের মধ্যে নতুন করে ধূমপান শুরু করার প্রবণতা কমবে। আগামী প্রজন্মের নাগরিকদের ধূমপানের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার ক্ষেত্রে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের আরও একটি সীমাবদ্ধতা হলো—এই আইনে সুস্পষ্টভাবে তামাক পণ্যের বিক্রয়স্থলে আকর্ষণীয় প্রদর্শনী বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই।

    পাবলিক প্লেস ও ট্রান্সপোর্টে ডিএসএ বাতিল করা গেলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে আগামী প্রজন্ম। এতে করে কিশোর/তরুণদের মধ্যে নতুন করে ধূমপান শুরু করার প্রবণতা কমবে।

এই সুযোগে তামাক পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দোকানে তাদের পণ্যগুলোর আকর্ষণীয় প্রদর্শনী করার সুযোগ পাচ্ছে। এতে করে কিশোর-তরুণদের মধ্যে অনেকে তামাক পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছেন।

বাংলাদেশে তামাক পণ্যের এহেন প্রদর্শনীর ফলে কতটা ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়ে কোনো জরিপ হয়নি। তবে অস্ট্রেলিয়ায় পরিচালিত একটি জরিপের ফলাফল এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। জরিপে দেখা গেছে যে, যারা ধূমপান ছাড়তে চাইছেন তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ তামাক পণ্যের আকর্ষণীয় প্রদর্শনীতে প্রভাবিত হয়ে আবার ধূমপান শুরু করার চাপ অনুভব করেন, আর এদের মধ্যে ৬০ শতাংশই এই চাপে পড়ে সিগারেট কিনতে বাধ্য হন।

দেখা যাচ্ছে যে, বিদ্যমান আইনে ধূমপানের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থান বা ডিএসএ রাখার সুযোগ থাকায় এবং বিক্রয়স্থলে তামাক পণ্যের আকর্ষণীয় প্রদর্শনী নিষিদ্ধ না হওয়ায় দেশের নাগরিকদের বিশেষ করে কিশোর-তরুণদের তামাক পণ্যের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেওয়া চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটেই সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি অধিকতর সংশোধনীর মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই সংশোধনীতে ডিএসএ বাতিল, বিক্রয়স্থলে তামাক পণ্যের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি আরও কিছু নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে যার ফলে দেশে তামাক ব্যবহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমতে পারে।

এর মধ্যে রয়েছে—দেশে ই-সিগারেট আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা, সিএসআর কার্যক্রমের মাধ্যমে তামাক কোম্পানির প্রভাব বিস্তারের সুযোগ বন্ধ করা, সিঙ্গেল স্টিক সিগারেট/বিড়ি বিক্রির সুযোগ না রাখা এবং তামাক পণ্যের প্যাকেটের গায়ে সচিত্র সতর্ক বার্তার আকার বৃদ্ধি করার নির্দেশনা।

তামাকবিরোধী নাগরিক সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের দাবিগুলো এই সংশোধনীতে প্রতিফলিত হয়েছে বলে এই প্রস্তাবনাগুলো ইতিমধ্যেই ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছে। শুধু তাই নয়। বৃহত্তর জনস্বার্থের প্রতি সংবেদনশীল এই সংশোধনীর পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ দেশের শীর্ষ নীতি-নির্ধারকদের অনেকে।

মাননীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে ১৫৫ জন ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সংশোধনের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি শক্তিশালীকরণের এই উদ্যোগ স্বাগত জানিয়ে লিখিত বক্তব্য/বিবৃতি দিয়েছেন।

এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, স্বার্থান্বেষী মহল তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের এই প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে নানাবিধ অপপ্রচারে লিপ্ত আছে। যেমন—বলা হচ্ছে আইনটি প্রস্তাবনা অনুসারে সংশোধন করলে যে ছোট দোকানদাররা সিগারেট/বিড়ি বিক্রি করেন তারা বিপাকে পড়বেন। সিগারেট/বিড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা কর্মসংস্থান হারাবেন বলেও কথা ছড়াচ্ছেন কেউ কেউ। সত্যি বলতে ক্ষুদ্র দোকানদার/ব্যবসায়ীরা কেবল সিগারেট বিক্রি করেন না, বিক্রি করার মতো আরও পণ্য তাদের আছে।

    ধূমপানজনিত কারণে রোগাক্রান্ত হওয়ার ফলে যে চিকিৎসা ব্যয় হয় তা বেঁচে গেলে সেই অর্থ অনেক উন্নয়নমুখী কাজে ব্যবহার করা যাবে...

অন্যদিকে সিগারেট/বিড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা দেশের আনুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমিক সংখ্যার এক শতাংশও নয়। আর বর্ধিষ্ণু অর্থনীতিতে বিনিয়োগের চাকা চলমান থাকলে এই তুলনামূলক কম সংখ্যক শ্রমিকের বিকল্প কর্মসংস্থান খুব চ্যালেঞ্জিং হওয়ার কথা নয়। কাজেই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধনীর মাধ্যমে শক্তিশালী করলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় বা শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ঐ অর্থে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বললেই চলে।

বরং এই সংশোধনী বাস্তবায়ন করা গেলে জনস্বাস্থ্যের ওপর যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে তার সুফল ভোগ করবে পুরো সামষ্টিক অর্থনীতি। ধূমপানজনিত কারণে রোগাক্রান্ত হওয়ার ফলে যে চিকিৎসা ব্যয় হয় তা বেঁচে গেলে সেই অর্থ অনেক উন্নয়নমুখী কাজে ব্যবহার করা যাবে।

এই প্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ২০১৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন তামাকমুক্ত দেশ গঠন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন সেই সময়ই তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে যে পথনকশা সেই সময় তিনি হাজির করেছিলেন সেখানে তামাক পণ্যে কার্যকর করারোপের পাশাপাশি বিদ্যমান আইনগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন ও টোব্যাকো কন্ট্রোলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে’ আবার সংশোধনের কথা বলেছিলেন।

প্রত্যাশার চেয়ে ধীর গতিতে হলেও তামাক পণ্যে কর বাড়ছে। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় নির্দেশনাও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়াটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা-সংশ্লিষ্ট সবাই সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাস করানোর জন্য যথাসাধ্য সচেষ্ট হবেন। ভুলে গেলে চলবে না—প্রতিদিন তামাকজনিত কারণে এই দেশে প্রায় সাড়ে চারশো মানুষ মৃত্যুবরণ করছেন। তাই দেরি করা মানেই আরও কিছু প্রাণ হারিয়ে ফেলা।

ড. আতিউর রহমান ।। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
 

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার