ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৫৫

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন?

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২৩  

করোনা মহামারি গোটা পৃথিবীতে ছিল নতুন, এমনকি বাংলাদেশেও কিন্তু তা সফলভাবে মোকাবিলা করা গিয়েছিল। যদিও মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানো এই ভাইরাস মোকাবিলা করা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট সবার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে করোনা ঠেকানো গিয়েছে।

তন্মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা পরিচিত শত্রু এডিস মশা এবং তার দ্বারা সংক্রমিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রতিবছরই কমবেশি অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গু এবং এর বাহক মশা সম্বন্ধে আমরা সবাই অবগত এবং এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও আমাদের জানা। তারপরেও আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কেন ব্যর্থ হচ্ছি?

২০১৯ সালের প্রথম ৫ মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩২৪ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। ২০২০ সালের প্রথম ৫ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩০৬ জন এবং ওই বছরও এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত কেউ মারা যাননি। ২০২১ সালে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রথম ৫ মাসে ১০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এই সময়ে কেউ ডেঙ্গুতে মারা যাননি। ২০২২ সালের প্রথম ৫ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩৫২ জন এবং তাদের মধ্যে কেউ মারা যাননি। ২০২৩ সালে এই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৬২০ জন এবং মারা গেছেন ১৩ জন। (দ্য ডেইলি স্টার বাংলা, ২৫ মে ২০২৩)

কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ। ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। কোনোভাবেই যেন ঠেকানো যাচ্ছে না এডিস মশা এবং তার ডেঙ্গু সংক্রমণ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত প্রায় দশ হাজার মানুষ ডেঙ্গু রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। যদিও এই পরিসংখ্যানটি সম্পূর্ণ নয়। কারণ এটি শুধুমাত্র যেসব হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে রিপোর্টিং করে তাদের তথ্য। এছাড়া অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে যার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে পৌঁছায় না। এরমধ্যে অনেক রোগী বাসায় থেকেও চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব গবেষণাগার সবসময়ই মশা ও মশা বাহিত রোগ নিয়ে গবেষণা করে। আমরা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, এডিস মশার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এই কয়েকটি বিষয় নিয়ে মাল্টিভেরিয়েট অ্যানালাইসিস করে ফোরকাস্টিং মডেল তৈরি করি। যার মাধ্যমে ডেঙ্গু সম্বন্ধে আগাম ধারণা দিতে পারি।

    পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১০০টিরও বেশি দেশে এই রোগটি এখন স্থানীয়। আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলো ডেঙ্গুর সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি…..

আমি আগেই বলেছিলাম ২০২৩ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে। আগামী দিনগুলোয় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে। শুধুমাত্র ঢাকায় নয় বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়বে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে।

ডেঙ্গু সংক্রমণ শুধুমাত্র বাংলাদেশের হচ্ছে ব্যাপারটি এমন নয়। এই বছর ইতিমধ্যে লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ব্রাজিল, বলিভিয়া, পেরু এবং আর্জেন্টিনায়। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে মালয়েশিয়া, ফিলিপিন, শ্রীলঙ্কায়ও আক্রান্তের সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি।

সাম্প্রতিক দশকে বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০০ সালে থেকে বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু রোগীর বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ গুণ। ফিলিপিনে ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩১ শতাংশ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষণবিহীন বা হালকা জ্বর ও বাসায় চিকিৎসা নেওয়ার কারণে রিপোর্টিং হচ্ছে কম। একটি গবেষণা অনুমান করে যে বিশ্বব্যাপী ৩৯০ মিলিয়ন ডেঙ্গু সংক্রমণ ঝুঁকিতে আছে।

আফ্রিকা, আমেরিকা, পূর্ব ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১০০টিরও বেশি দেশে এই রোগটি এখন স্থানীয়। আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলো ডেঙ্গুর সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। পৃথিবীর মোট ডেঙ্গুর ৭০ শতাংশ এশিয়ায়।

অপরিকল্পিত নগরায়ন, বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশগত কারণ ডেঙ্গু সংক্রমণের সাথে সংশ্লিষ্ট। জনসংখ্যার ঘনত্ব, মানুষের যাতায়াত, ব্যবহারযোগ্য পানির স্বল্পতা, বিভিন্ন পাত্রে পানি সংরক্ষণ এডিস মশার ঘনত্ব ও ডেঙ্গু বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণ।

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত খাবার ও বোতল জাত পানীয়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ফলে প্রচুর বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এসব বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থা করতে না পারার কারণে বৃষ্টির পানি জমে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।

    অপরিকল্পিত নগরায়ন, বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশগত কারণ ডেঙ্গু সংক্রমণের সাথে সংশ্লিষ্ট। জনসংখ্যার ঘনত্ব, মানুষের যাতায়াত, ব্যবহারযোগ্য পানির স্বল্পতা, বিভিন্ন পাত্রে পানি সংরক্ষণ এডিস মশার ঘনত্ব ও ডেঙ্গু বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণ।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে ডেঙ্গু ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা পরিবর্তিত পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ডেঙ্গু ভাইরাসের সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা না থাকলেও এটি অনুমান করা যায় যে করোনাভাইরাসের মতো এটিও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেকে পরিবর্তন করে নিতে সক্ষম।

ডেঙ্গু সংক্রমণ কম বা বেশি হওয়া নির্ভর করে, ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকার জনসাধারণের জ্ঞান, মনোভাব এবং এডিস মশার প্রজনন রোধে তাদের কার্যক্রম ও ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সঠিক ও সময়োপযোগী কার্যক্রম।

আগামী দিনগুলোয় ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম আরও বেগবান করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও প্রস্তুত থাকতে হবে অধিক ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনার।

অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার ।। কীটতত্ত্ববিদ, গবেষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected] 

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার