ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
১৬৩

নিজামী মুজাহিদের প্লট কেলেঙ্কারি

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২১  

জামায়াতে ইসলামী নিজেদের সব সময়ই প্রচলিত এই রাজনৈতিক ধারার বাইরে বলে দাবি করে। যদিও অসততা কত প্রকার ও কী কী সেই প্রমাণ তারা একাত্তরে দিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ক্ষমতার বাইরে থেকে আস্তে আস্তে নানা কৌশল-অপকৌশলে জামায়াত সংগঠিত হয়েছে। দেশের মানুষের মাঝে এই ধারণা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে যে, জামায়াতের নেতারা সৎ, যোগ্য...। তারা কোনো অসততা বা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। দেশের মানুষের একটি অংশ তাদের ছড়িয়ে দেয়া ধারণায় বিভ্রান্তও হয়েছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রে জামায়াত ব্যবহার করেছে পবিত্র ধর্ম ইসলামকে। তারা আল্লাহ্র আইন প্রতিষ্ঠা করার কথা বলে। তারা বলে সৎলোকের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা।

বিএনপির কাঁধে ভর করে চারদলীয় জোটের অংশ হিসেবে তারা ক্ষমতায়ও আসে। জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীকে প্রথমে দেয়া হয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে দেয়া হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। পরবর্তীতে দলীয়করণের অভিযোগে নিজামীকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়।

একাত্তরে বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নিজামী, মুজাহিদ গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানোর সুযোগ পায়। বিএনপি সেই সুযোগ করে দেয় এবং তখন থেকেই জামায়াতের ‘রূপ’, জামায়াত নেতাদের ‘প্রকৃত স্বরূপ’ প্রকাশ হতে থাকে।
২০০৬ সালের ২১ মে নিজামী একটি প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন। রাজউকের নিয়মানুযায়ী প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন তখনই করা যায়, যখন রাজউক প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেই বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হয়। নিয়ম এটাই। কিন্তু নিজামী রাজউকের জারি করা কোনো বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে আবেদন করেননি।

নিজামীর আবেদনপত্রের ওপর সেই সময়ের গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাস চেয়ারম্যান, রাজউককে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন’ লিখে আবেদনপত্রটি সরাসরি রাজউকে পাঠিয়ে দেন। সরকারি নিয়মানুযায়ী তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী যে সুপারিশ করেছিলেন, সেটিও নিয়মসিদ্ধ ছিল না। রাজউকের প্লট বিধি ১৯৬৯-এর অধিকতর সংশোধনীর ধারা অনুযায়ী সুপারিশ করা হয়নি। এই ধারায় না পড়ায় মন্ত্রীর সুপারিশ সরকারি সুপারিশ হিসেবে গণ্য হয়নি। কারণ রাজউকের বিজ্ঞপ্তির বাইরে যে কেউ আবেদন করলে রাজউক তা বিবেচনা করতে পারে না। কেবল সরকার নির্দেশ বা সুপারিশ করলে রাজউক সেটা করতে পারে। মতিউর রহমান নিজামীর আবেদনের প্রাথমিক পর্যায়েই অনিয়মের সূচনা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তির বাইরে নিজামী নিজেই খুঁজে বের করেন বনানীর আকর্ষণীয় একটি প্লট। বনানী ১৮ নং রোডের ৬০ নম্বর প্লটটির অবস্থান লেকের পাড়ে। আয়তন ৫ কাঠা ১৫ ছটাক ১৩ বর্গফুট। এই প্লটটি খালি আছে এটা তিনি বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছেন বলে আবেদনে উল্লেখ করেন।

অনিয়মের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া নিজামীর ফাইল সচল থাকে। কাজ আগাতে থাকে। বলা হয় একটি অনিয়মকে আড়াল করতে আরো দশটি অনিয়ম করতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত পার পাওয়া যায় না। প্রমাণ কোনো না কোনোভাবে, কিছু না কিছু থেকেই যায়। নিজামীর ফাইলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। প্রাথমিক আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজউক মতিউর রহমান নিজামীকে বনানী বা উত্তরায় ৫ কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়।
এই সিদ্ধান্তের পর নিজামী বনানীর ১৮ নং রাস্তার ৬০ নম্বর প্লটটি তাকে বরাদ্দ দেয়ার জন্য আবেদন করেন। কাজ চলতে থাকে। এর এক পর্যায়ে হঠাৎ করে জানা যায়, মতিউর রহমান নিজামীর ফাইলটি হারিয়ে গেছে। এই হারিয়ে যাওয়াটা খুবই রহস্যজনক। এর মধ্যে নিজামীর প্লটের দখলপত্র প্রদান করে রাজউক। দখলপত্রসহ পুরো ফাইলটি হারিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, ‘জনাব মতিউর রহমান নিজামীর প্লটের দখলপত্র প্রদানের পর তার প্রতিনিধি নথিটি রেখে নামাজে চলে যান। এরপর নথিটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

একজন মন্ত্রীর ফাইল কয়েক মিনিটের মধ্যে হারিয়ে গেল অথচ কোনো তদন্ত করা হলো না। কীভাবে হারাল, হারানোর জন্য কে দায়ী কিছুই চিহ্নিত করা হলো না কেন?

মতিউর রহমান নিজামীর মতো একজন মন্ত্রীর ফাইল গায়েব করার সাহস কী তখন রাজউকের কোনো কর্মকর্তার থাকার কথা? তাও আবার দশ-পনেরো মিনিটের মধ্যে?

প্রশ্নবিদ্ধভাবে হারিয়ে যাওয়া ফাইলের রহস্য অনুসন্ধানের কোনো চেষ্টা না করে ‘ছায়ানথি’ বা ফাইল খোলা হয়। নতুন ছায়া ফাইল খোলার জন্য মতিউর রহমান নিজামীর পূর্বে দাখিল করা কাগজপত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করা হয়। এই কাগজপত্র দেখতে গিয়েই ফাইল হারানোর রহস্য কিছুটা বোঝা যায়। রাজউকের প্লট পাবার যোগ্যতা কারো আছে কি না, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ হচ্ছে ‘হলফনামা’। যিনি আবেদন করেন এই ‘হলফনামা’য় তিনি পরিষ্কার করে বলেন, তার নিজের, স্ত্রী, সন্তান, পোষ্য কারো ঢাকায় কোনো জমি, প্লট, বাড়ি বা ফ্ল্যাট নেই। এ রকম একটি ‘হলফনামা’ নিজামীও দিয়েছেন। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি ‘হলফনামা’য় মতিউর রহমান নিজামীর স্বাক্ষর নেই! ‘ছায়া ফাইল’ খোলার কাগজপত্রে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। হলফনামার মূল কপিতে যদি স্বাক্ষর থাকত, তবে ফটোকপিতে তা অবশ্যই থাকত। তাছাড়া এটা খুব স্বাভাবিক বিষয় যে স্বাক্ষর ছাড়া কাগজ কেউ ফটোকপি করে সংগ্রহ করেন না। আর এটা ছিল রাজউকে দাখিল করা মূল কাগজের ফটোকপি। যা স্বাক্ষরবিহীন হতে পারে না।

নিজামীর ফাইল হারানোর প্রধান কারণ এই স্বাক্ষরবিহীন হলফনামা। কারণ স্বাক্ষরবিহীন হলফনামার ওপর ভিত্তি করে রাজউকের কর্মকর্তারা ফাইল উপস্থাপন করেছেন। হয় তারা চাপে পড়ে এমন কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন অথবা নিজামী বা তার প্রতিনিধির কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে কাজটি করেছেন। স্বাক্ষরবিহীন হলফনামার ভিত্তিতে তারা নিজামীকে লিজ দলিল সম্পাদন করে দিতে সহায়তা করে অন্যায় করেছেন। তাই হয়ত বাঁচার জন্য রাজউকের কর্মকর্তারা ফাইলটি গায়েব করে দিয়েছেন। ফাইল গায়েব করার এই কাজটি মতিউর রহমান নিজামী প্রতিনিধি পাঠিয়ে, রাজউকের কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়েই করেছেন। এবং সবই করেছেন স্বাক্ষরবিহীন হলফনামার অনিয়ম থেকে বাঁচার জন্য।

অনিয়ম এবং অনৈতিকতার প্রমাণ থাকলেও নিজামী ঠিকই বনানীতে প্লট পেয়েছেন। সেখানে ছয় তলা বিল্ডিংও করেছেন।

৩.
বিল্ডিং তৈরি করা নিয়েও আশ্রয় নেয়া হয়েছে অনিয়ম, অনৈতিকতার। পুরো প্রক্রিয়াটিতে অস্বাভাবিক রকমের তাড়াহুড়ো করা হয়েছে।
২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর নিজামী লিজ দলিল সম্পাদন করেছেন। একই তারিখে মিশন ডেভেলপার লিমিটেডকে প্লটটিতে বিল্ডিং নির্মাণ ও যাবতীয় কাজ সম্পাদনের জন্য আমমোক্তার নিয়োগ করেছেন। অর্থাৎ যে তারিখে (২২.১০.২০০৬) নিজামী নিজে লিজ দলিল সম্পাদন করে নিয়েছেন, একই তারিখে (২২.১০.২০০৬) অন্য একটি দলিল সম্পাদন করে আমমোক্তার নিয়োগ করেছেন। দু’টি কাজ একই তারিখে দ্রুততার সঙ্গে হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
নিজামী ও মিশন ডেভেলপারের সঙ্গে সম্পাদিত আমমোক্তার নামার দলিলে দেখা যায়, ওই দলিলের ‘নম্বর ও তারিখ’ উল্লেখ করা হয়নি। ‘নম্বর ও তারিখের’ স্থান দু’টি খালি রয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে এতই তাড়াহুড়া করা হয়েছে যে, স্থান দু’টি পূরণ করা হয়নি। তাড়াহুড়া করার থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে,

ক. নিজামী প্লটটি পেয়েছিলেন অনিয়মের মাধ্যমে।
খ. প্লটটি দ্রুত হস্তান্তর করে নিজের দুর্বলতা বা অনিয়ম আড়াল করার কৌশল নিয়েছেন।
রাজউক থেকে নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রেও হয়েছে অনিয়ম। মিশন ডেভেলপারকে রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে নিজামী আমমোক্তারনামা দিয়েছেন। তাই নিয়মানুযায়ী ওই প্লটে বিল্ডিং নির্মাণের নকশা মিশন ডেভেলপার কোম্পানির নামে হবে। অথচ ২০০৭ সালের ২ জানুয়ারি প্লটের নকশা অনুমোদন করে নেয়া হয় মতিউর রহমান নিজামীর নামে। আইন অনুযায়ী যেটা করা যায় না। নিজামীর নামে নকশা অনুমোদন করা যেত যদি পূর্বে মিশন ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে করা আমমোক্তারনামা দলিল বাতিল করা হতো। কিন্তু এই দলিল বাতিল না করেই নিজামী তার নিজের নামে নকশা অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন। যা অনৈতিক, অনিয়ম এবং বেআইনি। কাজটি নিজামী করেছেন।

প্রতিবেদনট সাপ্তাহিক ২০০০ এ প্রকাশিত, লিখেছেন: সাংবাদিক গোলাম মর্তুজা

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার