ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
১০৮

সিলেটে বদলাচ্ছে স্থানীয় রাজনীতির সংস্কৃতি

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ৬ জানুয়ারি ২০২৪  

নানা কারণে জাতীয় রাজনীতিতে সিলেট গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, সিলেট-১ আসনে যে দলের প্রার্থী জয়ী হন, তারা সরকার গঠন করে স্বাধীনতার পর বারবার পুরাবৃত্তিতে এটি অনেকটা মিথ হয়ে উঠছে। কিন্তু সিলেটের রাজনীতিতে এখন বাঁক বদলের হাওয়া। প্রবাসের হাওয়ায় বদলাচ্ছে এখানকার দীর্ঘ রাজনীতির ধারা ও ঐতিহ্য।


তৃণমূলের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ আর থাকছে না তৃণমূলের হাতে। বড় দলগুলোর নীতি নির্ধারণী পদসহ জনপ্রতিনিধিদের আসনও অনেকাংশে চলে যাচ্ছে প্রবাসীদের নিয়ন্ত্রণে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত একই চিত্র। মূলত প্রবাসীদের ‘অর্থবিত্ত’ ও ‘যোগাযোগে’র সঙ্গে পেরে উঠছেন না স্থানীয়রা।

ফলে তৃণমূলে রাজনীতির প্রতি তৈরি হচ্ছে এক ধরনের অনীহা, বাড়ছে হতাশা, কমছে নিবেদিতপ্রাণ কর্মীর সংখ্যা। সংশ্লিষ্টদের মতে, ‘এতে সিলেটে রাজনীতির সংস্কৃতি ও সংজ্ঞাই বদলে যাচ্ছে।’
প্রবাসী আধিক্যের বড় উদাহরণ সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা। সিলেট-২ সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত এটি।


২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে এ আসন নির্বাচিত হন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমান চৌধুরী। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সিলেটে প্রবাসী জনপ্রতিনিধির উপস্থিতি পুরনো হলেও মূলত শফিকুর রহমানের হাত ধরে সংসদে পা রাখেন প্রবাসীরা। এরপর বিগত দুই সংসদ নির্বাচনে এই আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন আরো দুই প্রবাসী। ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া এবং ২০১৮ সালে গণফোরামের মোকাব্বির খান। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। কারণ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের এখানে ৭ প্রার্থীর সবাই প্রবাসী।

এই উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির ক্ষেত্রে একই চিত্র। বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া এবং পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান-দুজনই যুক্তরাজ্য প্রবাসী। খাজাঞ্চি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরশ আলী গণি সৌদি এবং অলংকারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান লিটন যুক্তরাজ্য প্রবাসী। বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সভাপতি গৌছ আলী যুক্তরাজ্য প্রবাসী। সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌছ খানও ছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী।

বিশ্বনাথের মতো জেলার প্রায় প্রত্যেক উপজেলায় এক বা একাধিক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রবাসী। সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রবাসী মো. হিরন মিয়া সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। 

সংসদ নির্বাচনে ১২ প্রার্থী প্রবাসী

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ছয়টি আসনে দলের মনোনয়ন চান ২৪ জনের অধিক প্রবাসী নেতা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮ জন মনোনয়ন চান সিলেট-২ আসনে। সবচেয়ে কম সিলেট-৩ আসনে ছিলেন ৫ জন। তবে শেষ পর্যন্ত দলের টিকিট পেয়েছেন ১২ জন। এর মধ্যে সিলেট-২ আসনে ৭ প্রার্থীর সবাই প্রবাসী। এ ছাড়া সিলেট-৫ ও সিলেট-৬ আসনে ২ জন করে প্রবাসী প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এ দিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের স্বজনরা দেশে এসেছেন এবারও। 

দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবীতে প্রবাসীরা

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী যুক্তরাজ্য প্রবাসী। জাতীয় পার্টির দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম উদ্দিন ও আতিকুর রহমান আতিক এবং দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়াও যুক্তরাজ্য প্রবাসী।

সংসদীয় রাজনীতিতে শক্তিশালী হয়ে উঠছেন প্রবাসীরা

সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। বড়ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাত ধরে রাজনীতিতে নেমে বিগত নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন। এবারও প্রার্থী তিনি। সিলেট-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাবিবুর রহমান হাবিব এবারও প্রার্থী। সিলেট-৫ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার কুতুব উদ্দিন শিকদার যুক্তরাজ্য প্রবাসী, জাতীয় পার্টির শাব্বির আহমদ ফ্রান্স প্রবাসী। যদিও শাব্বির দীর্ঘদিন ধরে দেশে রাজনীতিতে সক্রিয়। সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম উদ্দিনও যুক্তরাজ্য প্রবাসী। 

প্রবাসে থেকেও যারা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র

বিএনপির রাজনীতিতে যুক্তরাজ্য কানেকশন দেশবাসীর জানা। মূলত ওয়ান-ইলেভেনের সময় এর সূচনা। তবে তারও আগে সিলেটের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ হতো যুক্তরাজ্য থেকে। সেখানে বসে বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন কলকাঠি নেড়েছেন কমর উদ্দিন। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতির পাশাপাশি কমর উদ্দিন কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন। বর্তমানে সে ভূমিকায় যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক এবং সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ। সাত সমুদ্রের ওপার থেকে স্থানীয় রাজনীতিতে কলকাঠি নাড়েন এ দুই সিলেটি। 

সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও বরাবর যুক্তরাজ্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সত্তরের দশকে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা যুক্তরাজ্য প্রবাসী সমুজ খান একসময় নিয়ামক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে কিছুদিন শফিকুর রহমান চৌধুরী ছিলেন। তিনি সিলেটে রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত হলে দলের যুক্তরাজ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনে তাঁর বড় প্রভাব দেখা গেছে। সম্প্রতি সিসিকের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সিলেটে থিতু হয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের মিলটন কিংস আওয়ামী লীগের সভাপতি এলাইছ মিয়া মতিন বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রবাসীরা অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন। গৌছ খান, সমুজ খানের মতো নেতারা আওয়ামী লীগের চরম দুঃসময়ে ভূমিকা রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট ছিলেন। তবে তাঁরা সিলেটে রাজনীতিতে কখনো সক্রিয় হননি। পরবর্তী সময়ে অনেকে সিলেটের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়েছেন এবং দেশে ফিরে রাজনীতিও শুরু করেন।’ 

তিনি বলেন ‘শফিকুর রহমানের পরে আগ্রহ জন্মায়। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র হওয়ায় প্রবাসীদের রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ ব্যাপক বেড়েছে।’

সমাজ অনুশীলন সিলেটের সদস্য সচিব মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা বলেন, ‘সিলেটে রাজনীতিতে যে হারে প্রবাসীরা সক্রিয় হচ্ছেন, দলগুলোর নীতি নির্ধারণী পদসহ জনপ্রতিনিধিদের আসনেও তারা বসছেন, তাতে চিরাচরিত যে রাজনৈতিক ঐতিহ্য সেটি ম্লান হচ্ছে। তৃণমূল থেকে স্থানীয়ভাবে রাজনীতি করে, স্থানীয় সমস্যাকে ধারণ করে, ত্যাগ-তীতিক্ষা স্বীকার করে রাজনৈতিকভাবে যে একটা ভালো অবস্থানে যাবে, সে জায়গাগুলো হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এতে তৃণমূলের কর্মীরা হতাশ হচ্ছে, অনেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে।

ইতিবাচক দিকও আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে এসে এখানে ভালো করছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেক চেয়ারম্যান দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন। অনিয়ম-দুর্নীতিতেও তাদের কম দেখা যায়।’ 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘গত কয়েক বছরে যে হারে প্রবাসীরা দলীয় এবং জনপ্রতিনিধির পদে এসেছেন তাতে অবশ্যই স্থানীয় রাজনীতির ধারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটি দলীয় রাজনীতির শিকড় ও তৃণমূলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’ 

বর্তমান প্রবণতা রাজনীতিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে তেমনি প্রবাসীদের অতীতের স্বর্ণালী ভূমিকাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘দেখা যায় কোনো নেতা বিদেশ সফরে গেলে ধনী প্রবাসীরা তাদের দামি দামি উপঢৌকন দেন, দেখভাল করেন। পরবর্তীসময়ে তা কাজে লাগিয়ে তারা মনোনয়নসহ বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেন। এমন অভিযোগ রয়েছে।’ তাঁর মতে, ‘এমন চললে যারা দেশে ত্যাগ-তিতীক্ষা স্বীকার করেন তাদের জায়গা কেউ দখল করে নিলে তা রাজনীতির জন্য নেতিবাচক হবে।’

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার