ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
২৫০০৭

ওসমানীর সেই সাদেক কোথায়?

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪  

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘুষের টাকাসহ দুই সিনিয়র স্টাফ নার্স আটকের ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ধরা পড়েনি ঘুষকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশনের (বিএনএ)) সিওমেক শাখার সাধারণ সম্পাদক নার্স ইসরাইল আলী সাদেক। আটক হওয়া দুই নার্স ৩ দিনের রিমান্ডে কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে সাদেকসহ তার অপকর্মের সহযোগী নার্স আসমা, মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসানসহ অন্যদের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেও, সাদেক আজও অধরা। এতে অভিযোগের তীর উঠছে পুলিশের দিকে। 

জানা গেছে, ৯ বছর ধরে বরখাস্ত অবস্থায় ছিলেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক স্টাফ নার্স। সম্প্রতি তিনি কর্মক্ষেত্রে যোগ দেন। এত বছরে তাঁর বেতন-ভাতাসহ প্রায় ৩৬ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে। নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল বকেয়া বেতন-ভাতার টাকা দ্রুত তুলে দেওয়ার জন্য। বিনিময়ে তাঁদের ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। পরে দর-কষাকষিতে সাড়ে ৬ লাখ টাকায় রফা হয়েছিল। ৯ জানুয়ারি সকালে ওই স্টাফ নার্স নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে তাঁদের কথামতো টাকা নিয়ে আমিনুল ইসলামের কাছে যান। এ সময় পুলিশ আমিনুলকে টাকাসহ আটক করে। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সুমন চন্দ্র দেবকে আটক করা হয়।

এ  ঘটনায় ওই রাতেই হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ বাদী হয়ে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিনজনের নামে মামলা করেন। মামলার তিন আসামি হলেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র স্টাফ নার্স ইসরাইল আলী সাদেক, সিনিয়র স্টাফ নার্স আমিনুল ইসলাম ও সুমন চন্দ্র দেব।

এজাহারে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ উল্লেখ করেছেন, প্রধান আসামি সাদেকের নির্দেশনায় দীর্ঘদিন ধরে চাকরি দেয়া, বদলি করানোর কথা বলে এবং নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি স্বীকার করেছে। ব্রাদার সাদেক অনিয়ম, দুর্নীতি, দালালি, অর্থ আত্মসাত করে অঢেল সম্পদ অর্জন করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ চলমান রয়েছে।

 মামলার পর আটক আমিনুল ইসলাম ও সুমন চন্দ্র দেবকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ইসরাইল আলী সাদেক এখনো পলাতক। হাতেনাতে আটক দু’জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রমাণ থাকার পরেও সাদেককে এখনো বহিস্কার করা হয়নি। এর আগেও ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ মাদক প্যাথেডিনসহ র‌্যাবের হাতে আটক হন ইসরাইল আলী সাদেক। সে সময়ও তাকে বহিস্কার করা হয়নি। মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে।


এদিকে আলোচিত সাদেকের দুই সহযোগী আমিনুল ও সুমনকে ১৪ জানুয়ারি তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সাদেকের নিশানা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ ছাড়া ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে শেকড় গেঁড়ে বসা দুর্নীতির আদি-অন্ত জানতে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেটের কোতোয়ালি থানার এসআই রাশেদ ফজল জানিয়েছেন- আসামিদের আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড চাইলে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। রোববার দুপুরে সিলেট মেট্রোপলিটন-১ আদালতের বিচারক মো. সুমন ভূঁইয়া ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। 

এ ঘটনার পরে একের পর এক বেরিয়ে আসছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্রাদার সাদেক চক্রের নানা অপকর্ম। তার দাপটের কাছে অসহায় ছিল খোদ হাসপাতালের প্রশাসনও। নানাভাবে দলীয় প্রভাব বিস্তার করে সাদেক নিজেকে প্রভাবশালী দেখিয়ে সবখানেই বিচরণ করেন। রয়েছে তার শক্তিশালী বাহিনীও। হাসপাতালের ঝাড়ুদার থেকে শুরু করে প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তা পর্যন্ত ছিল তার চক্রের ব্যাপ্তি। ফলে সাদেক ও বাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। ঘুষের ৬ লাখ টাকাসহ সাদেকের দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানিয়েছেন- সাদেক ও তার লোকজনের অপকর্মের খবর তাদের কাছে আসতো। কিন্তু প্রমাণের অভাবে কিছু করা যায়নি। এখন যেহেতু প্রমাণ মিলেছে তাদের বিরুদ্ধে সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে; গোয়েন্দা অভিযানকালে দেখা গেছে; ওসমানীতে ব্রাদার সাদেকের সিন্ডিকেটে শুধু নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীরাই নয়; ওখানে ডিউটিতে থাকা বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা নানাভাবে জড়িত। ঘটনার পর থেকে তারা বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালান। এছাড়া, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রলীগের নেতারাও একই চক্রের সঙ্গে জড়িত। পরে ছাত্রলীগ নেতার কাছ থেকে মুচলেকাও আদায় করা হয়েছে। 

সাধারণ নার্সরা জানিয়েছেন- সাদেক নিজেকে মন্ত্রী গ্রুপের লোক পরিচয় দিয়ে সে দাপট দেখাতো। এবারের নির্বাচনে তার নেতৃত্বে সাধারণ নার্সদের ভোট প্রচারণায় নামানো হয়। একইসঙ্গে ভোটের দিন শতাধিক নার্সকে দুর্গা কুমার পাঠশালাতে নিয়ে ‘ডামি’ ভোটার হিসেবে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এর আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও সে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। তার প্রভাবের কারণে সাধারণ নার্সরা ভয়ে তটস্থ থাকেন। তিনি নার্সদের নানাভাবে হয়রানিও করেন। নার্সেস এসোসিয়েশনের কেন্দ্র পর্যন্ত তার দাপট থাকার কারণে কেউ ভয়ে কোনোদিন প্রতিবাদ করেননি। মঙ্গলবার ওসমানীর নার্সেস এসোসিয়েশনের সভাপতি শামীমা আক্তারও হাসপাতালের প্রশাসনের সামনে এসব কথা স্বীকার করেছেন। এবং তিনি নিজেও তার অপারগতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। একইসঙ্গে হয়েছেন অনুতপ্তও। এ কারণে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন- হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে লিজ নেয়া ফার্মেসি ছিল সাদেকের। ওই ফার্মেসিতে গিয়ে নানাভাবে প্রতারিত হয়েছে রোগীর স্বজনরা। বেশি দামে ওষধ বিক্রি, রোগীদের স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ থাকলেও হাসপাতালের প্রশাসন ছিলেন নির্বিকার। হাসপাতালের পার্কিং এলাকায় সাদেকের লোকজন চাঁদাবাজি করে। হাসপাতাল প্রশাসন বারবার ব্যক্তি মালিকানাধীন এম্বুলেন্সকে বাইরে বের করার চেষ্টা করলেও সাদেকের কারণে পারেনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যতবারই উদ্যোগ নিয়েছে ততবারই হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ঘেরাও সহ নানা ঘটনা ঘটানো হয়েছে। হাসপাতালের ট্রলি সিন্ডিকেট, দালাল সিন্ডিকেটও নিয়ন্ত্রণ করে সাদেক ও তার সহযোগীরা। সাদেকের লোক হলে দালালরা অবাধে ওয়ার্ড পর্যন্ত যেতে পারে। বাইরে ফার্মেসির কেউ এক্ষেত্রে সুযোগ পান না। হাসপাতালের আউট সোর্সিংয়ে লোক নিয়োগের নামে বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে সাদেক। টাকা দিয়ে নিয়োগ পাওয়ার পরও প্রতি মাসে বেতন থেকে একটি টাকা সাদেককে দিতে হতো তাদের। 


এ নিয়ে আগের পরিচালকের কাছে একাধিক অভিযোগ দেয়া হলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অপারেশন থিয়েটারে নানা ঘটনায় সম্পৃক্ত সাদেক ও তার লোকজন। কানাইঘাটের খসরু নামের এক রোগীর কিডনি চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর খসরু মামলা করলেও কোনো প্রতিকার পাননি। ওসমানীর ওই ভুক্তভোগী নার্স অদিতি রানী (ছদ্ম না) ঘটনার পর জানিয়েছিলেন; ঘুষের ৬ লাখ টাকা তার কাছ থেকে সাদেককে নিজেই এসে নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু চালাক সাদেক নিজে না এসে পাঠায় তার সহকর্মী আমিনুলকে। তবে; সাদেক আশপাশেই ছিল। ধরা পড়ার পর থেকে সে গা ঢাকা দিয়েছে। এদিকে- ঘটনার পর থেকে সাদেককে ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকটি টিম অভিযানে রয়েছে। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চতুর সাদেক আড়ালে থেকে নিজেকে রক্ষা করতে নানাভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তদন্তে থাকা কোতোয়ালি পুলিশ জানিয়েছে; সাদেককে ধরতে তারা সক্রিয় রয়েছে। তাকে খুব দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।


 

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার