ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৮৬

চিনি চোরাচালানে ছাত্রনেতারা

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্ত থেকে ২২৪ বস্তা ভারতীয় চিনি গতকাল শনিবার ভোরে উদ্ধার করে পুলিশ। এই চিনিগুলো ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আনা হয়েছিল। এ সময় চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটকও করা হয়।

এভাবে প্রতিদিন সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা শত শত বস্তা চিনি উদ্ধার করা হচ্ছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, যে পরিমাণ উদ্ধার করা হচ্ছে, তার চেয়ে বহু গুণ বেশি চিনি অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসছে।

সম্প্রতি চিনি চোরাচালানের নিরাপদ রুট হয়ে উঠেছে সিলেট। জেলার জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্তের শতাধিক স্থান দিয়ে চিনি দেশে প্রবেশ করেছে। অবৈধভাবে আসা এসব চিনিতেই এখন ছেয়ে গেছে সিলেটের বাজার।

অভিযোগ রয়েছে, এই চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় ছাত্রলীগ কিছুসংখ্যক নেতা। সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে নিয়ে আসা চিনির ট্রাক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা পাহারা দিয়ে নগরের বড় পাইকারি বাজার কালীঘাটে নিয়ে আসেন। ট্রাকের সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পাহারা দেয়ায় এসব ট্রাক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আটকায় না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও ছাত্রলীগ নেতারা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

১০ আগস্ট নগরের দাড়িয়াপাড়ায় এলাকায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা জজ কোর্টের এপিপি প্রবাল চৌধুরী পূজনের বাসায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। পূজনের অভিযোগ, সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়। ছাত্রলীগ নেতাদের চিনি চোরাচালানে জড়িত থাকার বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় এই হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেন পূজন। এ ঘটনায় ১৩ আগস্ট সিলেট মহানগর হাকিম প্রথম আদালতে ছাত্রলীগের ৫৫ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা করেন প্রবাল চৌধুরী পূজন।

মামলায় আসামি হিসেবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ এবং মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম আহমদ, সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মিছবাউল করিম ওরফে রফিক, জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুল আলমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে পূজন উল্লেখ করেন, অভিযুক্তরা চিনি চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত। বাদী ফেসবুকে চিনি চোরাকারবারি ও অছাত্র দিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রতিবাদমূলক স্ট্যাটাস দেন। এর জের ধরেই তাকে প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়। এতে তিনি আহত হন।

এ প্রসঙ্গে প্রবাল চৌধুরী পূজন বলেন, ‘সিলেট ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারাই চিনি চোরাচালানে জড়িত। তারা সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর ছাত্রলীগ নেতাদেরও এ কাজে সম্পৃক্ত করেছেন। চোরাইপথে আসা চিনি নিরাপদে নগরে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করেন তারা।’

এই ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রও চোরাচালান কাজে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়, ছাত্রলীগের কিছু কর্মী মোটরসাইকেল পাহারায় অবৈধ চিনিবাহী ট্রাক কালীঘাটে পৌঁছে দেন। এ জন্য ট্রাকপ্রতি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয় তাদের। সীমান্তরক্ষী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এসব ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

সিলেটে সম্প্রতি চিনি চোরাচালান বেড়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কেন এখন চিনি চোরাচালান বেড়েছে। এর সঙ্গে কারা জড়িত এগুলো দেখার জন্য প্রশাসন আছে। তারাই অপরাধীদের খুঁজে বের করবে। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম আহমদও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে চিনির কেজি ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা। অপরদিকে ভারতে প্রতি কেজি চিনি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতে চিনির দাম কম হওয়ায় বেড়েছে চোরাচালান। সিলেটের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এখানকার বেশির ভাগ সীমান্তই দুর্গম এলাকায়। ফলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর টহলও কম। এই সুযোগে সিলেট দিয়ে চিনি চোরাচালান বেড়েছে। চিনি চোরাচালানে সীমান্তবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ‘ম্যানেজ’ করে এ কাজ করছেন। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা।

জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী গত আগস্ট মাসে প্রায় দুই হাজার বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে।

সিলেটের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার কালীঘাটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালীঘাটে দৈনিক প্রায় কোটি টাকার চোরাই চিনি কেনাবেচা হয়। রাতে ট্রাকে করে এসব চিনি কালীঘাটে আসে। এসব চিনি দেশীয় নানা ব্র্যান্ডের স্টিকারযুক্ত বস্তায় ভরে পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন ২৫-৩০ ট্রাক চিনি কালীঘাটে আসে। একেকটি ট্রাকে গড়ে ৬৫ থেকে ৭০ বস্তা চিনি থাকে। এর বাইরে কালীঘাট ঘেঁষে থাকা সুরমা নদী দিয়েও প্রতিদিন অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ বস্তা চোরাই চিনি এখানে আনা হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতি বস্তা ভারতীয় চিনি ৫ হাজার ৯০০ টাকায় কেনেন। পরে তা বাজারদরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালীঘাটের এক চিনি ব্যবসায়ী বলেন, ‘দেশীয় চিনি আমরা ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ৬ হাজার ২৪০ টাকায় ক্রয় করি। ১০ টাকা লাভে বিক্রি করে দিই। আর চোরাচালানে আসা চিনি বিক্রিতে প্রতি বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা লাভ হয়।’

কদমতলী এলাকায় মুদি দোকানদার কয়েছ আহমদ বলেন, ‘দেশি চিনি বর্তমান ১৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর চোরাইপথে আসা ভারতীয় চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। দাম কম হওয়ায় ক্রেতারাও এটি কিনছেন।’

চিনি চোরাচালান বাড়ার কথা স্বীকার করে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, চিনি চোরাচালান বন্ধে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে। পুলিশ প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে চিনি চোরাচালানের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। প্রতিদিনই চোরাইপথে আনা চিনি জব্দ করা হচ্ছে। এই তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

এ প্রসঙ্গে বিজিবি সিলেটের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সেলিম হাসান বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থায় আছে বিজিবি। চোরাচালান রোধে নানা কৌশলে কাজ করছেন সদস্যরা। সীমান্তে নজরদারি ছাড়াও টাস্কফোর্স গঠন করে আমরা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন গুদামে অবৈধভাবে মজুত করা ভারতীয় চিনি জব্দ করছি। প্রতিদিনই আমরা হাজার হাজার কেজি চিনি জব্দ করছি।’

বৃষ্টি ও পানি বাড়ায় অনেক সময় টহল দেয়া যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সে সুযোগে মাঝেমধ্যে কেউ অবৈধভাবে ভারতীয় পণ্য নিয়ে আসতে পারে।’

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার