ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৫৫৫

শাবিতে নাম্বারিংয়ে শিক্ষকদের পক্ষপাতিত্ব, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা!

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২৪  

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের বিভিন্ন সেমিস্টারের চুড়ান্ত মুল্যায়ন পরীক্ষাসমুহে পছন্দের শিক্ষার্থীকে নাম্বার দিতে শিক্ষকরা পক্ষপাতিত্ব করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে পছন্দের শিক্ষার্থীকে বেশি ও অপছন্দের শিক্ষার্থীদের কম নাম্বার দেওয়া, পরীক্ষা নীতি অনুসারে চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে টিউটোরিয়ালের ফল প্রকাশ না করা ও খাতা শিক্ষার্থীদের ফেরত না দেয়াসহ নানা অভিযোগ এসব শিক্ষার্থীদের।

 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগেই ফলাফল ভালো হয় না। কারণ এতে শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতা নাম্বার দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা যায়। যাকে ভালো লাগলো ভাল নাম্বার দিলো। পছন্দ হলো না কিংবা সামান্য পরিসরে সমস্যা থাকলে তাকে পরিকল্পিতভাবে নাম্বার কমিয়ে দিলো। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হবেন মুক্তচিন্তার, মুক্ত মানসিকতার। কিন্ত তা না, বরং পরীক্ষায় ভালো ফলাফল পেতে হলে শিক্ষকদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। এভাবে হয়ে ওঠা যায় শিক্ষদের প্রিয়। তখন শুরু হয় শিক্ষকদের নাম্বার নিয়ে গেম। চুড়ান্ত পরীক্ষাসহ অন্যসব মূল্যয়নে নাম্বারের ছড়াছড়ি থাকে এসব শিক্ষার্থীদের। এমনকি এসব শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগে তদবির, নিয়োগ লবিংয়েও জোরালো পদক্ষেপ নতুন কিছু না।

 

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে চুড়ান্ত ফলাফলে ন্যূনতম এ মাইনাস (৩.৫০) থাকতে হয়। অন্যথায় শিক্ষক হিসেবে একজন শিক্ষার্থী প্রাথমিকভাবেই আবেদন ও নিয়োগের জন্য বিবেচিত হবে না।

 

তবে শুধুমাত্র ৩.৫০ ফলাফলেই নিয়োগ পাওয়া কঠিন হয়ে যায় একজন শিক্ষার্থীর জন্য। প্রয়োজন পড়ে বিভাগের মেধাতালিকায় স্থান। শীর্ষ ১-৫ স্থানে থাকলেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগে সুযোগ পাওয়া অনেকাংশে সহজ হয়ে ওঠে একজন শিক্ষার্থীর জন্য। তখনই বিষয়টা মুখ্য হয়ে ওঠে শিক্ষকের তাবেদারি। এক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থী ঐ শিক্ষকের কাছে পছন্দের হয়ে ওঠে। শিক্ষকও নাম্বার টেম্পারিং করে পছন্দের শিক্ষার্থীকে নাম্বার বেশি দেওয়া শুরু করে। এমনকি শিক্ষকের তৈলমর্দন করতে না পারলে যতেষ্ট ভালো পড়াশোনা করলেও ফলাফল ভাল হয় না বলে অভিযোগ এসব শিক্ষার্থীদের। তাছাড়াএসব ক্ষেত্রে অনেকাংশে নারীরা এগিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ এসব শিক্ষার্থীদের।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা দেখেছি অনেক শিক্ষার্থী সারাদিন শিক্ষকদের তৈল মর্দনে ব্যস্ত থাকে। দেখা হলে স্যার, স্যার করতে করতে পাগলপ্রায় হয়ে উঠে। তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢালাওভাবে প্রতিনিয়ত প্রশংসায় বিভোর থাকে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শিক্ষকের ব্যক্তিগত কাজ করে দেয়া, বাজার সদায় করে দেয়া, কাপড় পরিষ্কার করা, বাচ্চাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসাসহ নানা ধরণের কাজ করে দিয়ে শিক্ষকের পছন্দের হয়ে ওঠে একজন শিক্ষার্থী।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যদিকে, অনার্সে সিজিপিএ ৩.৫০ বা তার বেশি ছিল কিন্তু মাস্টার্সে ৩.৫০-এর নিচে ফল হয়েছে এমন সাত জনের মধ্যে অন্যতম তিনজন  যাদের অনার্সে সিজিপিএ ছিল ৩.৫০ থেকে ৩.৫৫,অথচ তাদের মাস্টার্সে ফল এসেছে যথাক্রমে ৩.৪৩, ৩.৩৫ এবং ৩.৪৫। এ ছাড়া অনার্সে ৩.৫২ বা ৩.৫৭ ছিলো এমন একই বিভাগের দুইজন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে  মাস্টার্সে তাদের ফল হয়েছে যথাক্রমে ৩.৪২, ৩.৪০। একটি বিভাগের একজন শিক্ষার্থীর ফল ছিল ৩.৫১ যার মাস্টার্সে ফল হয়েছে ৩.৩১। এ বিষয়ে মাস্টার্সের সেই  শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা অনেকেই পরীক্ষা ভাল দিয়েছিলাম। অনার্সে ভাল ফলাফলে অনুপ্রাণিত হয়ে মাস্টার্সের পড়াশুনায় কোন ত্রুটি করিনি। আসলে আমরা এমন ফলাফলে খুবই হতাশ। এর বেশি কিছু বলার নেই।’

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, গত পাঁচ বছরে বিভাগে থেকে কিছু কিছু শিক্ষক কখনোই টিউটোরিয়াল পরীক্ষার খাতা কিংবা কোন অ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষার্থীদের ফেরত দেননি, অথচ এখানে থেকেই শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে জানতে পারত। শিক্ষার্থীরা বিভাগের শিক্ষকদের হাতে জিম্মি দশার কারণে অভিযোগও করতে পারেনি। কিন্তু কেনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ বিষয়ে খোঁজ নেননি তা জানতে চেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

 

কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ, অনেক শিক্ষক ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রভাব ফেলেন পরীক্ষায় নাম্বার দিতে। তোষামুদে প্রকৃতির শিক্ষার্থীরা এদের কাছে বাড়তি কদর পান, কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নারী শিক্ষার্থীও বাগিয়ে নেন অনৈতিক সুবিধা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থীর বরাতে উঠে আসে “ কিছু কিছু শিক্ষক কিছু কিছু নারী শিক্ষার্থীর সাথে দৃষ্টিকটু ধরণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও বজায় রাখেন। এসব বিষয় বিব্রতকর হয়ে উঠে অন্য শিক্ষার্থীদের জন্যে।

 

এক প্রথম স্থান অধিকারী এক মেয়ে শিক্ষার্থী বলেন “ কোনো শিক্ষার্থীর কমিউনিকেশন স্কিল ভালো থাকলে সে শিক্ষকদের সাথে কেনো, পৃথিবীর সব জায়গাতেই মূল্যায়ন পাবে। এসব নিয়ে অযথা বিষোদ্গার তারাই করে যারা নিজ যোগ্যতায় কিছু করতে পারে না।

 

এছাড়াও একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নাম্বারিং এ শিক্ষক রাজনীতিও প্রভাব পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাতে ইসলামপন্থী একাধিক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে, তারা স্বাধীনতার পক্ষের চেতনাকে ধারণ করে এমন শিক্ষার্থীদের সব সময়ই কড়া নজরে রাখেন। নাম্বার দেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যমূলক বৈষম্য সৃষ্টি করে। এদের এটেন্ডেন্স টিউটোরিয়াল থেকে শুরু করে প্রতিটি পদে পদে আটকে দেয়ার প্রবণতা এই শিক্ষকদের মধ্যে সব সময়ই বিদ্যমান রয়েছে। তবে এসব শিক্ষকরা প্রশাসনের সাথে লিয়াজো করে চলায় অভিযোগ থাকলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

 

সম্প্রতি একাধিক বর্ষের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের একটি বিভাগে। সে বিভাগের সভাপতির সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অনার্সে ভালো করলেই যে মাস্টার্সে ভালো করবে এমন নিশ্চয়তা তো নেই। তবুও আমি বিষয়টা দেখব। এ বিষয়ে একই  বিভাগের ওধ্যাপক ও মাস্টার্সের পরীক্ষা কমিটির সভাপতির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন রেজাল্ট ভাল খারাপ এটা পরীক্ষা কমিটি বা বিভাগ সভাপতির ওপর নির্ভর করে না। তবে কারও ফলাফল ভালো হইলে হইতে পারে। একটা ইয়ারে যেকোন কেউ ভালো করতে পারে। এটাকে আমি ওইভাবে কিছু দেখছি না। তবে কেউ যদি তার খাতা দেখতে চায় তাহলে তা দেখতে পারে।’ টিউটোরিয়াল খাতা না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা আগে জানালে আমি শিক্ষকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে পারতাম। এটা তো এখন জানালে তো কোন সমাধান হবে না।’

 

অভিযুক্ত শিক্ষকদের নামে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলতে চাইলে বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এপ্লাইড সায়েন্স অনুষদের এক শিক্ষক বলেন, যুগে যুগে এইটা হয়ে আসছে। আমার দেখা চোখে একজন শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে সারাদিন আলাপ করে, রুমে ঘন্টার পর ঘন্টা অবস্থান করে, ঐ শিক্ষক ও তার কাছের শিক্ষকদেরকে বলে এ শিক্ষার্থীর বিষয় একটু দেখতে। এক পর্যায়ে এমনও দেখেছি সেই শিক্ষার্থীই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। তবে কে না চাই একজন শিক্ষার্থী একজন শিক্ষকের কাছে আসুক, সম্মান করুক। কিন্তু শিক্ষকদের এমন আচরণে শিক্ষার্থীরা সম্মানও দেয় না। এর যথাযথ একটা বিহিত হওয়া দরকার বলে মনে করেন এ শিক্ষক।  

 

এ বিষয়ে এপ্লাইড সায়েন্সের ডীন বলেন, ‘ডিপার্টমেন্টের রেজাল্ট শিক্ষকরা দেখেন। আমরা দেখি কোন কোন বিভাগ পরীক্ষা নিতে বিলম্ব করছে বা ফল প্রকাশে দেরি হচ্ছে কিনা এসব। কিন্তু খাতায় মার্কিং করাটা একজন শিক্ষকের স্বাধীনতা। আর সেখানে তো আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না। এখন সেই ক্ষেত্রে যদি তারা জোটবদ্ধভাবে করে তাহলে তো আমার কিছু করার থাকে না। তবে নাম্বার টেম্পারিং এর সুস্পষ্ট অভিযোগ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

 

শুধু সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, এমন চিত্র দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বিরাজ করছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনের অবহেলা, শিক্ষক রাজনীতি ও সার্বিক পরিস্থিতির কারণে একেবারে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার