ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
২৯৬

বিতর্ক ছাড়িয়ে আদৌ কি হবে শাবির মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য!

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর, এর মাঝখানে অর্ধনির্মিত একটি স্থাপনা রয়েছে। এখানে ‘একজন মা তার সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠানোর সময় মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করছেন এমন থিমে ‘মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও মা ভাস্কর্যটি নির্মাণের কথা ছিলো। কিন্তু নির্মাণের কাজ শুরুর বছর ২০১৩ সালেই ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর আপত্তি এবং এ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে সিলেটসহ দেশজুড়ে ক্ষোভের মুখে প্রশাসনকে কাজ বন্ধে আধ্য করে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীর আন্দোলনকারীরা।

 

ধীরে ধীরে নির্মাণ কাজ বন্ধের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও আর আলোর মুখ দেখে নি ভাস্কর্যটি। এমনকি সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ ভাস্কর্য নির্মাণের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসলেও এখনো কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয় নি। এর প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে জনে জনে গুঞ্জন চলছে যে আদৌ কি হবে শাবির মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য!

 

ভাস্কর্যটির বর্তমান অবস্থা জানতে সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরের পাশে গোলচত্বর হিসেবে পরিচিত জায়গায় ভাস্কর্যের জন্য নির্মিত ইট সিমেন্টের ভিত্তি এখনও রয়ে গেছে। জিআই পাইপের অংশ বেরিয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন অযত্নে পড়ে থাকার পর সমাবর্তন উপলক্ষে ২০২০ সালের শুরুতে এই জায়গার কিছুটা সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়। তবে ভাস্কর্যের অবস্থা পূর্বের ন্যায় রয়ে গেছে। তবে গোলচত্বরে রেলিংয়ের সাথে বসার জায়গা করে দেওয়াই নিয়মিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখানে বসে তাদের অবসর সময় পার করেন এবং আড্ডার ছলে সময় অতিবাহিত করেন।

 

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ইতোপূর্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও ‘চেতনা-৭১’ ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ভাস্কর্য নির্মাণের সময়ও একাধিকবার বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। এমনকি সর্বশেষ ২০১২ সালে ‘চেতনা-৭১’ ভাস্কর্যটি নির্মাণাধীন থাকা অবস্থায় একাধিকার ভেঙে ফেলা কিংবা ক্ষতি সাধন করে উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীর আন্দোলনকারীরা । তবুও কাজটি শেষ হয়েছিলো। যদিও এখনো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও ‘চেতনা-৭১’ ভাস্কর্যটির নিরাপত্তার স্বার্থে এখনো নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন থাকে।

 

২০১৩ সালের কথা, বছরের শুরুতেই তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে আহ্বায়ক করেই ক্যাম্পাসে এ ‘মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও মা নামে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মাণে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির উদ্যোগ অনুসারে এ ভাস্কর্য নির্মানের কাজও শুরুও করে। তবে হটাৎ সে বছরেই ভাস্কর্য স্থাপনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ এনে প্রতিবাদে মাঠে নামে উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীর আন্দোলনকারীরা। পরে তাদের সাথে যোগ দেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি। এদের প্রতিবাদের মুখে আটকে যায় ভাস্কর্য স্থাপন। ১০ বছরেও এই ভাস্কর্য আর হয়নি বলে জানা যায়।

 

নাম প্রকাশে অনিচছুক সিলেটের এক স্থানীয় ব্যাক্তি বলেন, ভাস্কর্যও তো এক ধরণের মূর্তি। এইটাকে স্মরণ করাও তো পুজা করা। এইটা যখন নির্মাণে বাঁধা দেয়া হয়েছিলো, আমি মনে করি সঠিক কাজ হয়েছে। এখানে কেন একটা মহিলার মুর্তি তৈরি করা হবে, মেয়েরা থাকবে পর্দার মধ্যে। আর এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজা করতে চাচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। এসসব মুর্তি পজা করে, এসব দেখে পড়াশেনা করে আমাদের সন্তানদের আলোকিত মানুষ হবার দরকার নেই বলে মন্তব্য করেন এ ব্যক্তি।

 

তবে বিগত কয়েকবছরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকার ‘ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করায় শাবিপ্রবির ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরুর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, ‘একজন মা তার সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠানোর সময় মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করছেন এমন থিমে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হচ্ছিল। ভাস্কর্যটির নকশা চূড়ান্ত করে নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু কাজ শুরুর পর প্রথমে ক্যাম্পাসের ভেতরের ডানপন্থি গোষ্ঠী এর বিরোধিতা শুরু করে। এরপর শহরের ডানপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এরপর শহরে ও ক্যাম্পাসে বিভিন্ন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের পাশপাশি তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধে স্মারকলিপি দেয়। এই গোষ্ঠীর তৎপরতা বন্ধে স্থানীয় প্রগতিশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেমন তৎপর ছিল না, একপর্যায়ে সরকারের উচ্চমহল থেকে ভাস্কর্য নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশনা আসে। এরপর আটকে যায় কাজ। আমি বলবো, এ ভাস্কর্য নির্মাণের ব্যর্থতা সবচেয়ে বেশি এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তারা উদ্যোগ নিলে অবশ্যই শেষ করা যেতো এ কাজ। তাদের গড়িমসিতে এ কাজ হয় নি এখনো।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুল হালিম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সুন্দর সুন্দর ভাস্কর্য আছে। আমাদের এখানেও চেতনা-৭১ রয়েছে। তাহলে গোলচত্বরের এ ‘মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও মা নামে এ ভাস্কর্য নির্মাণে সমস্যা কোথায়? এ ভাস্কর্যটি হতো মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তমত চর্চার কেন্দ্র, যেমনটা একটা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিৎ। অথচ এ অসমাপ্ত ভাস্কর্যটির কাজ করতেই চাই না প্রশাসন। আসলে এ ভাস্কর্যটির কাজ শেষ করতে প্রশাসনের এতো গড়িমসি কেন?

 

আওয়ামী ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ প্যানেলের এক শিক্ষক বলেন, ভাস্কর্য নির্মাণের সময় স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বিরোধিতা করে, পরিস্থিতির জন্য ভাস্কর্যটি নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে আওয়ামীলীগ সরকার বিগত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। অথচ এ ভাস্কর্যটির কাজ শুরু করতে পারলো না কেউ। প্রশাসন আদৌ এ ভাস্কর্য নির্মাণ কাজ করতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন এ শিক্ষক। 

 

সমাবর্তনের সময় ভাস্কর্যটির নিচের অংশ সংস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এ অসম্পূর্ণ ভাস্কর্যটির কাজ কেন করা হয় নি? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমে বলেছিলেন, যখন ভাস্কর্যটির কাজ শুরু হয় এবং বন্ধ হয়ে যায় তখন আমি ছিলাম না। আমি কাজ শুরু করতে গিয়ে জানতে পারি যে, কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ সবাই এর বিরোধিতা করে। পরে পরিস্থিতির কারণে তখনকার অর্থমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত ভাস্কর্যের কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। এখন ভাস্কর্যটির কাজ শুরু করতে হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে করতে হবে।

 

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় অসমাপ্ত এ ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ শেষ করার জোর দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কেননা ভাস্কর্যটি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তমত চর্চার কেন্দ্রকে আরও প্রসারিত করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার