ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
২৪৫

‘গহনা’ তৈরির গ্রাম, নারীরা ধরেছেন সংসারের হাল

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০  

সকালের হালকা রোদে তামা ও পিতলের মনোমুগ্ধকর নকশা তৈরিতে খুব ব্যস্ত ২০ বছর বয়সী খুশি বেগম। নিজের মেধাকে লাগিয়ে বানাচ্ছেন কানের দুল। তিনি অ্যান্টিকের গহনা তৈরি করেন। তার সঙ্গে কথা বলতেই ঘর থেকে বের হয়ে এলেন ২৮ বছর বয়সী তার জা (ভাসুরের স্ত্রী) ফেন্সি বেগম। কথা হয় তার সঙ্গেও। সীতাহারে নকশার কাজ করেন ফেন্সি। এসব কাজ করেই তারা সংসারের হাল ধরেছেন।

বগুড়া শহরের ধরমপুর গ্রামে ‘গহনা’ তৈরি করাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে মোকাম। এই বাজারে ২৩৮টি গহনার দোকান রয়েছে। শুধু বাজার মালিক-শ্রমিক মিলে রয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৭০০ জন। এখান থেকে তৈরি গহনা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কদর রয়েছে। এসব গহনা তৈরি করতে বগুড়ার ধরমপুর ও এর আশেপাশে অন্তত ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন।

গ্রামের নারীরা ব্যবসায়ীদের থেকে কাজের অর্ডার নিয়ে ঘরে বসেই গহনা বানান। এর মধ্যে কেউ কেউ ঘরেই গড়ে তুলেছেন ছোট কারখানা। সেখানে একসঙ্গে পাড়ার একাধিক নারীরা তৈরি করেন অ্যান্টিকের গহনা। শুরুটা ধরমপুরে হলেও এ শিল্পের বিস্তার ঘটেছে সদরের নিশিন্দারা, ঝোপগাড়ী, ফুলবাড়ী ও বারোপুরসহ আরো অনেক এলাকায়। এসব এলাকায় নারী-পুরুষ কারিগরদের কর্মসংস্থানের উৎস তৈরি হয়েছে। অ্যান্টিকের গহনা তৈরির আয় থেকে এ এলাকার নারীরা নিজেদের আর্থিকভাবে সাবলম্বী করেছেন। অনেকে সংসারের হাল ধরেছেন। গড়েছেন নিজের বাড়িঘরও। 

ব্যবসায়ীরা বলেন, ঘর কেন্দ্রিক এসব ছোটছোট কারখানা থেকে তৈরি হওয়া গহনাই তারা সরবরাহ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

কারিগরদের কাছে জানা যায়, বিয়ে-শাদিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে সোনার মতোই দেখতে এই অ্যান্টিক ও সিটিগোল্ড গহনার ব্যাপক চাহিদা। নারীদের পছন্দের সীতাহার, শাড়িমালা, কান্দা, লহর, হাশলি, জড়ো, টাইরা, টিকলি, চুড়, বালা, মানতাসা, নূপুর, বিছাসহ আরো বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন গহনা তৈরির কাজ করেন তারা। ধরমপুরে প্রায় ১০০ ধরনের গহনা পাওয়া যায় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

গহনার কারিগর খুশির বিয়ে হয়েছিল প্রায় সাড়ে চার বছর আগে। তখন থেকে দেখতেন পাড়ার সবাই এসব বানান। এরপর তিনিও রপ্ত করে নেন এই কাজ। স্বামীর সঙ্গে শুরু করেন গহনা তৈরি। শুরুতে স্বামী আবু বক্করের উৎসাহ ছিল না। তবে ২০১৮ সালে আবু বক্কর সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে সংসারের হাল ধরে খুশি। এরপর অ্যান্টিক গহনা তৈরির আয়ের দুই লাখ দিয়ে নিজেদের বাড়ি বানান তারা।

খুশি বেগম বলেন, সকালবেলা সংসারের কাজ শেষ করে শুরু করেন গহনা তৈরি। দৈনিক গড়ে ৪০০ টাকা রোজগার হয়। এ এলাকার সব নারীরা কাজের অবসরে এ কাজ করে বাড়তি আয় করেন।

খুশি বেগমের জা ফেন্সি বেগম অ্যান্টিক গহনার কাজ করছেন ছয় বছর ধরে। তার কাজ সীতাহারের তামার প্যান দিয়ে ঝালাই করা। তার স্বামী জহুরুল ইসলামও একই কাজ করেন। প্রতিদিন দুজনে এ কাজ করে প্রায় এক হাজার টাকা আয় করেন।

ধরমুপর, নিশিন্দারা, ঝোপগাড়ি, আটাপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে শুধু গৃহবধূরা নয়, অনেক শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি এই হাতের কাজ করছেন। সরকারি মুজিবর রহমান মহিলা কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আদুরী আক্তার জানান, তিনিও অ্যান্টিকের গহনা তৈরি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগান।

উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া পল্লী মঙ্গল এলাকার সাদিয়া বলেন, শখ থেকে মূলত এই কাজ শুরু। এখন সময় কাটে, টাকাও উপার্জন হয়।

নিশিন্দারার এলাকার মিম, জান্নাতী, সাথী, ছোট কুমিড়ার সানজিদা পড়াশোনার পাশাপাশি অ্যান্টিকের কাজ করেন। তাদের কথা বসে থেকে সময় নষ্ট করার চেয়ে এ কাজ করলে বাড়তি টাকা আয় হয়। তবে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, পুরুষের চেয়ে এ কাজে নারীদের আগ্রহই বেশি থাকে। এ কারণে অ্যান্টিকের গহনা তৈরির কারিগর তুলনামূলকভাবে পুরুষের চেয়ে নারী বেশি।

ব্যবসায়ীরা বলেন, এ এলাকার গহনার কারিগরদের ইতিহাস অনেক পুরোনো। প্রায় দেড়শ বছর আগে থেকে এখানে গহনার কাজ শুরু হয়। সে সময় পিতলের গহনা তৈরি হত। পরে একপর্যায়ে সোনার গহনার চাহিদা বাড়তে থাকে। কিন্তু ৮০ দশকের শেষে আবার সোনার গহনার চাহিদা পড়তে থাকে। তখন থেকে একটু একটু করে অ্যান্টিক শিল্পের দিকে ঝুঁকতে থাকে কারিগররা। এরপর ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালের দিকে পুরোদমে শুরু হয় অ্যান্টিকের গহনা তৈরি। পরে ধরমপুর বাজারে মোকাম গড়ে ওঠে।

এই বাজারের শফিক গোল্ড অ্যান্ড এন্টিক জুয়েলার্সের মালিক শফিকুল ইসলাম বাজারে ব্যবসা করেন ১৫ বছর হলো। তিনি সাধারণত পণ্যগুলো পাইকারি বিক্রি করে থাকেন। তার কাছ থেকে সারা দেশের ক্রেতারা এসে এসব গহনা কিনে নেন। 

শফিকুল বলেন, করোনার কারণে আপাতত ব্যবসা কমে গেছে। তারপরও যশোর, বরিশাল ও রংপুরে তিনি প্রতি মাসে প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পণ্য বিক্রি করেন।
শফিক গোল্ড অ্যান্ড এন্টিক জুয়েলার্সের কর্মচারী শহিদুল বলেন, এখানে কাজ করে সংসার ও দুই সন্তানকে স্কুলে পড়াশোনা করাচ্ছেন।

ধরমপুরের পাশেরই শহরতলীর মাটিডালি গ্রাম। এই এলাকার নারীপুরুষ মিলে আগে বিড়ির কারখানায় কাজ করতেন। এখন তারা এসব গহনা তৈরি করেন। তাদের মধ্যে একজন হলে শাহীন আলী। তিনি বলেন, তার কারখানায় প্রায় ২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে ১২ জন নারী।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার