দোয়ারাবাজারে সবজি চাষে হাবিবুর রহমানের ভাগ্যবদল   

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হাবিবুর রহমান। ২০১৮ সালে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে বিএ পাশ করে ফিরে আসেন গ্রামে।

সরকারি চাকুরির পিছনে না ঘুরে মনোনিবেশ করেন সবজি চাষে। এভাবেই শুরু হয় তার আত্মকর্মসংস্থান। সবজি চাষ করে এখন লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। পাশাপাশি গ্রামের ৮-১০টি পরিবারের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি উদ্যোক্তা হাবিবুর রহমান উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের নিয়ামতপুর (উনগ্রাম) গ্রামের মরহুম হাজি কাচা মিয়ার সন্তান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কের গোয়ারাই ব্রিজের পাশেই গড়ে উঠা একখন্ড সবুজ শাকসবজির সমারোহ নজর কাড়ছে পথচারীদের। প্রায় ২ একর জায়গাজুড়ে শীতকালীন সবজি টমেটো, লতা বেগুন, কাঁচা মরিচ, লাউ ও কুমড়ার চাষ করা হয়েছে। আশানুরূপ ফলন হয়েছে টমেটোর। টমেটো গাছের শাখায় শাখায় দুলছে অসংখ্য টমেটো। সবকটি গাছেই ফুটেছে হলদে ফুল। ২-৪দিনের মধ্যেই পাকতে শুরু করবে। তখন থেকেই এগুলো বাজারজাত করা হবে। এক পাশে রয়েছে লতা বেগুন। এখানে পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনে পরিবেশ বান্ধব কৌশলের প্রয়োগ করা হয়েছে।  উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় জৈবিক কৃষি ও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনার এই প্রদর্শনীটি করা হয়েছে।

জানা যায়, বছরে মাত্র ২০ হাজার টাকার পুঁজিতে সবজি চাষ শুরু করেছিলেন স্বপ্নবাজ যুবক হাবিবুর রহমান। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে সবজি চাষাবাদে প্রায় ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে তার। বর্তমান বাজারমূল্য ঠিক থাকলে এখানের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে প্রায় ৫-৭ লাখ টাকা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। আগামিতে বানিজ্যিকভাবে থাই তরমুজের (রকমেল) চাষাবাদ করবেন বলেও জানান তিনি।

আলাপকালে হাবিবুর রহমান প্রতিবেদককে জানান, ‘কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে শৈশব থেকেই কৃষির প্রতি আগ্রহ ছিলো। পড়াশোনা শেষে যখন দেখলাম বাপ-দাদাদের বুনিয়াদি পেশা কৃষি থেকে গ্রামের অনেকেই হাত গুটিয়ে নিয়েছেন, তখন স্বপ্রণোদিত হয়েই আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করার প্রতি মনোনিবেশ করলাম।

এ ব্যাপারে পরিবার, বন্ধুবান্ধব, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসসহ সবাই আমাকে উৎসাহিত করেছে। শুরু থেকেই কৃষি অফিসের লোকজন সরেজমিনে এসে আমাকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এতে আমি সাহস পাচ্ছি। সতেজ ফরমালিনমুক্ত সবজি উৎপাদন করে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়েও দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। আর এজন্য সদিচ্ছার প্রয়োজন। আমার এই কৃষিখামার দেখে বন্ধু-বান্ধব ছাড়াও এলাকা ও এলাকার বাইরের অনেকেই সবজি চাষাবাদের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। প্রায়ই তারা আমার পরামর্শ নিচ্ছেন। আমি মনে করি পড়াশোনা শেষ করে বেকার না থেকে কৃষিতে নিয়োজিত হওয়া দরকার। এতে বর্তমান আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখা সম্ভব।’ কৃষি নিয়ে আমি অপার সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখি।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মহসিন জানান, ‘তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হাবিবুর রহমানের সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তাকে সব ধরনের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি এতো অল্প সময়ে যেভাবে কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন তা সত্যি প্রশংসনীয়। তার এই কৃষি খামার সম্প্রসারণে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’