ওসমানীতে ঘুষকাণ্ড : সাদেকসহ জড়িতদের শাস্তি চায় সিলেটবাসী

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুর্নীতিবাজ নার্স ইসরাইল আলী সাদেকের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে সিলেটবাসী। তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সিলেটের বিশিষ্টজনেরা। পাশাপাশি গ্রেপ্তারকৃত নার্স আমিনুল ও সুমনসহ এ ঘটনার নেপথ্যে থাকা গডফাদারদের চিহ্নিত করারও্র আহবান জানিয়েছেন তারা।

এক বিবৃতিতে দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী নাসির উদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মকসুদ হোসেন সম্প্রতি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঘুষ দুনীতির চিত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে তারা এক নার্সের বিল দ্রুত পাইয়ে দেয়াসহ নানা প্রতারণা ও দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার সিনিয়র নার্স স্টাফ আমিনুল ইসলাম, সুমন চন্দ্র দেব ও হাসপাতালের নার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেকের দুর্নীতি ও প্রতারণার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন। তারা বলেন, ঐতিহ্যবাহী হাসপাতালের সুনাম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কারণে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। হাসপাতালের সিট বাণিজ্য, ওষুধ সংকট ও সুচিকিৎসা থেকে রোগীরা মারাত্মকভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে ইদানিং সিলেটের স্থানীয়, জাতীয় পত্রিকা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের খবর প্রকাশ পেয়েছে। পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ন্যক্কারজনক ঘটনার দায়ভার কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। নেতৃবৃন্দ দুর্নীতি ও প্রতারণার দায়ে মূল অভিযুক্ত পলাতক ইসরাইল আলী সাদেককে দ্রুত গ্রেপ্তার দেখতে চায় এবং মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন- দুর্নীতি বন্ধ ও সুচিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সাদেকসহ ওই হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয় সম্পত্তির হিসাব সরকারের নিকট দাখিল করার উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়।

উল্লেখ্য, গত ৯ জানুয়ারি দুপুরের দিকে ঘুষের ৬ লাখ টাকাসহ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আমিনুল ও সুমনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে আটক করে গোয়েন্দা সংস্থার একটি দল।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে বাদী হায়ে কোতোয়ালি থানায় নগরীর কাজলশাহ এলাকার ১৭৬ নম্বর বাসার মৃত মজর আলীর ছেলে বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশনের (বিএনএ) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখার সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র স্টাফ নার্স ইসরাইল আলী সাদেককে প্রধান আসামি করে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার মেরাসানী গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে সিনিয়র স্টাফ নার্স আমিনুল ইসলাম ও হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার বিরাশী গ্রামের মৃত সুনীল কুমার দেবের ছেলে সিনিয়র স্টাফ নার্স সুমন চন্দ্র দেবের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা (নম্বর-১০) দায়ের করেন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হানিফ।

জানা গেছে, সম্প্রতি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ (নার্স) গীতা রানী হালদারের গত আট বছরের প্রাপ্য ৩৪ লাখ টাকা বকেয়া বিল করে দেওয়ার বিনিময়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন সাদেক। পরে গীতাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও চাপ দিয়ে সাড়ে ৬ লাখ টাকা দিতে রাজি করান। এরপরে গীতা তাকে অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা দেন। পরে মঙ্গলবার দুপুরে সাদেকের দাবি করা বাকি ৬ লাখ টাকা আমিনুলের কাছে জমা দেন গীতা। তখন গোয়েন্দা সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমিনুলকে নগদ ৬ লাখ টাকাসহ আটক করেন। পরে আমিনুলের দেওয়া তথ্যমতে সুমনকে আটক করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা পুলিশকে জানায়, সাদেকের নির্দেশনায় ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ এসব অবৈধ কাজ করে আসছেন তারা।

হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ‘সাদেকের কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ওসমানী হাসপাতাল। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্যান্য দফতরে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সাদেককে প্রধান আসামি করে থানায় ৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি। আমিনুল ও সুমনকে ইতিমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

এদিকে ঘটনার পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন সকল অপকর্মের মূল হোতা সিনিয়র স্টাফ নার্স ইসরাইল আলী সাদেক। তাকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি মঈন উদ্দিন সিপন।