লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা

মোহাম্মদ অন্তর, এখনো শিশুকাল পেরোয়নি ছেলেটির। লাল-সবুজের পতাকার ফিতা মাথায় বাঁধা। হাতে রয়েছে একটা লাঠি। লাঠির সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত লাল-সবুজের পতাকা। একটি মাঝারি আকারের পলিথিন ব্যাগও সঙ্গে  রেখেছে।

ওর বাবাও পতাকা বিক্রি করেন। তাই বাবার সঙ্গে বিজয়ের মাসে লাল-সবুজের পতাকা বিক্রি করতেই হবিগঞ্জ থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছে অন্তর। তার বাবা বারোমাস ফেরিওয়ালার পেশায় থাকলেও বিজয় দিবস উপলক্ষে ব্যবসার যে চাপ তা সামাল দিতে তাকেও আসতে হয়েছে।

 
লাল-সবুজের পতাকা, স্টিকার, ফিতা ও ব্যাজ বিক্রি করতে পুরো স্মৃতিসৌধের এপাশ থেকে ওপাশে ঘুরে চলেছে বয়সে ১২ বছরের এই শিশুটি।

আবির ফয়সাল নামে একজন তার শিশু সন্তানকে নিয়ে অন্তরের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। পতাকা চাওয়াতেই একগাল হেঁসে দিলো অন্তর। এরপর ওই শিশুর হাতে একটি পতাকা ধরিয়ে দিলো অন্তর।

অন্তর জানালো, পতাকা বিক্রি করতে এ মাসের প্রথম সপ্তাহেই ঢাকায় তার বাবার কাছে চলে আসে সে। এরপর শুরু হয় তার পতাকা বিক্রি। এবারই প্রথম সে ঢাকায় এসেছে। আবার কয়েকদিন পরেই হবিগঞ্জে চলে যাবে সে।

পতাকা বিক্রি করে এই ক'দিন ভালোই সময় কেটেছে তার। সাথে কিছু অর্থও উপার্জন করতে পেরেছে। এই ভেবেই অনেক খুশি অন্তর।

এদিকে আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মানুষের ঢল নেমেছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সর্বস্তরের জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় স্মৃতিসৌধ। 

জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে একাত্তরে আত্মোৎসর্গকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন লাখো জনতা। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদনে ফুলে ফুলে ঢেকে গেছে স্মৃতিসৌধের মূল বেদী।

বিজয় দিবসে কুয়াশা ও ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে একাত্তরে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ। রাত থেকে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন লাখো মানুষ। এসেছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারাও। সবার চোখে-মুখে ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সোনার বাংলা বিনির্মাণের অবিচল আস্থার ছাপ। বিজয় দিবসের আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে স্মৃতিসৌধকে ঘিরে গোটা সাভার যেন পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে।