ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
২২২১

ফলের বিশ্বে সফল বাংলাদেশ

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০১৯  

আয়তনে বিশ্বের অন্যতম ছোট দেশ বাংলাদেশ ফল উৎপাদনে সফলতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এ মুহূর্তে বিশ্বে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হারের রেকর্ড বাংলাদেশের। আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ।

২০ বছর আগে আম আর কাঁঠাল ছিল এই দেশের প্রধান ফল। এখন বাংলাদেশে ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে। আগে হতো ৫৬ প্রজাতির ফল চাষ।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে। একই সঙ্গে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ চারটি ফলের মোট উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বের দ্বিতীয়, আমে সপ্তম ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে আছে বাংলাদেশ। আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে দশম। আম, কাঁঠালের বাইরে মৌসুমি ফলের মধ্যে আছে জাম, লিচু, কুল, কামরাঙা, পেঁপে, বেল, লেবু, আনারস, আতা, সফেদা, লটকন, তরমুজ, ফুটি ইত্যাদি। 

আয়তনে বিশ্বে ৯৪তম; কিন্তু জনসংখ্যায় অষ্টম বাংলাদেশ। সবচেয়ে কম জমি, আর বেশি মানুষের এই দেশ ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় উঠে এসেছে। একই সঙ্গে নিত্যনতুন ফল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ সফলতা পেয়েছে। এত কম আয়তনের দেশ হয়েও ফল চাষে জমি বৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। বছরে ১০ শতাংশ হারে ফল চাষের জমি বাড়ছে।

শুধু ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির দিক থেকে নয়, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু ফল খাওয়ার পরিমাণও গত এক যুগে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের মানুষ দিনে ৫৫ গ্রাম করে ফল খেত। চলতি বছর তা ৮৫ গ্রামে উঠে এসেছে। একসময় দেশে কাঁঠাল ও আম ছিল প্রধান ফল। এখন অন্তত ২২ প্রজাতির ফল বাংলাদেশের মানুষ নিয়মিত খায়।

গত ১০ বছরে দেশে আমের উৎপাদন দ্বিগুণ, পেয়ারা দ্বিগুণের বেশি, পেঁপে আড়াই গুণ এবং লিচু উৎপাদন ৫০ শতাংশ বেড়েছে। চার-পাঁচ বছরের মধ্যে নতুন ফল ড্রাগন ও অ্যাভোকাডো এবং দেশি ফল বাতাবিলেবু, তরমুজ, খরমুজ, লটকন, আমড়া ও আমলকীর মতো পুষ্টিকর ফলের উৎপাদনও ব্যাপক হারে বাড়ছে। এসব ফলের প্রায় পুরোটাই দেশে বিক্রি হচ্ছে।

 জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সাত্তার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ফল চাষে বাংলাদেশে রীতিমতো একটি বিপ্লব ঘটে গেছে। গত ১০ বছরে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফল চাষের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনা ও সড়কের পাশে ফলের গাছ রোপণের প্রবণতা বেড়েছে। বাংলাদেশ যে খাদ্যনিরাপত্তায় বিশ্বের অন্যতম সফল দেশ হয়েছে এবং বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে তিন বছরে ছয় ধাপ এগিয়েছে; তার পেছনে ধান, সবজি ও মাছের পাশাপাশি ফলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে জানান তিনি।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এক যুগ আগেও দেশে ৫৬ প্রজাতির ফলের চাষ হতো। বর্তমানে ৭২ প্রজাতির ফল চাষ হচ্ছে। আরও ১২ প্রজাতির ফল বাংলাদেশের চাষ উপযোগী করার জন্য গবেষণা চলছে। এর মধ্যে চার প্রজাতির ফল ইতিমধ্যে বাংলাদেশের মাটিতে সফলভাবে চাষ হয়েছে।

নতুন করে চাষ শুরু হওয়া ফলের মধ্যে ড্রাগন ফলের ২৩টি আলাদা প্রজাতি, খেজুরের ১৬টি, নারকেলের ২টি প্রজাতি, কাঁঠালের ১টি, আমের ৩টি নতুন প্রজাতি চাষের প্রাথমিক সফলতা পাওয়া গেছে। আগামী দু–এক বছরের মধ্যে তা কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মেহেদী মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমিত জমিতে আরও বেশি ফল উৎপাদনের জন্য আমরা উন্নত জাতের ফলের চারা উৎপাদনকে গুরুত্ব দিচ্ছি। ১১টি জাতের প্রায় ৩০ প্রজাতির ফলের চারা উৎপাদনের জন্য গবেষণা চলছে। এগুলো অবমুক্ত করলে আমরা খুব দ্রুত ফলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব বলে আশা করি।’

 কোন ফলে বাংলাদেশ কী অবস্থানে

কাঁঠাল

২০১৬ সালে বিশ্বের ফল উৎপাদনের মধ্যমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এফএও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে তারা বলেছে, অন্যতম পুষ্টিকর ফল কাঁঠালকে বলা হয় মাংসের বিকল্প। সারা বিশ্বে বছরে ৩৭ লাখ টন কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল হয় ভারতে, ১৮ লাখ টন। দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ, ১০ লাখ টন। পুষ্টিমানের দিক থেকে অন্যতম সেরা এই ফলের আমদানি খুব দ্রুত হারে বাড়াচ্ছে চীন। তারা মূলত উৎপাদনে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে কাঁঠাল আমদানি করে। জাপান, মালয়েশিয়ার মতো পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো কাঁঠাল আমদানির দিকে ঝুঁকছে।

এই দেশগুলোর বাংলাদেশ ও ভারত থেকে কাঁঠাল আমদানি না করার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এই দুই দেশের কাঁঠালে আঠা থাকে। আর এখানকার কাঁঠালে একধরনের বুনো গন্ধ থাকে, যা পূর্ব এশিয়ার মানুষের পছন্দ নয়।

তবে শীতকালীন কাঁঠালে এ ধরনের গন্ধ ও আঠা কম থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি রাঙামাটিতে একটি শীতকালীন কাঁঠালের জাত খুঁজে পেয়েছেন। এই জাত থেকে চারা উৎপাদনের জন্য গবেষণাও শুরু করেছেন তাঁরা। একই সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফল চাষ প্রকল্প থাইল্যান্ড থেকে আঠাবিহীন কাঁঠালের চারা আমদানি করেছে। বর্তমানে তা দেশের উপযোগী করার গবেষণা চলছে। আগামী দু–এক বছরের মধ্যে তা কৃষক পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারে ফল বিশেষজ্ঞ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফল প্রকল্পের পরামর্শক এম কামারুজ্জামান বললেন, ‘আঠাবিহীন কাঁঠালের চাহিদা বিশ্ববাজারে দিন দিন বাড়ছে। আমাদের দেশের মধ্যবিত্তদের মধ্যে আঠালো হওয়ার কারণে কাঁঠাল খাওয়া নিয়ে একধরনের নেতিবাচক মানসিকতা তৈরি হয়েছে। আঠাবিহীন ও সুগন্ধি কাঁঠালের চাষ বাড়লে অত্যন্ত পুষ্টিকর এই খাবার দেশের সব শ্রেণির মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পাবে।’

 আম

এফএওর হিসাবে, গত ১৮ বছরে বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হারে আমের চাষ বেড়েছে। বছরে ১৬ শতাংশ হারে আমের উৎপাদন বাড়ায় এর মাথাপিছু ভোগের পরিমাণ ১০ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। ১০ বছর আগে বিশ্বের আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দশম। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সপ্তম অবস্থানে উঠে এসেছে। দেশের ফল থেকে আসা পুষ্টির চাহিদার বড় অংশের জোগান দেয় আম।

আম ছিল শুধু বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ফল। বর্তমানে ৩০ জেলায় আমের চাষ হচ্ছে। ২০১৭-১৮ সালে দেশে প্রায় ২৪ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়। ১০ বছর আগে যা ছিল ১২ লাখ ৫৫ হাজার টন। তবে কাঁঠালের মতো আমও বাংলাদেশে মৌসুমি ফল হিসেবে চাষ হচ্ছে। সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থাইল্যান্ড থেকে বারো মাসের আমের জাত আমদানি করেছে। বাংলাদেশের উপযোগী করে এই জাতের চারা পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হচ্ছে।

তবে আমের ক্ষেত্রে দেশে একটি পরিবর্তন ঘটে গেছে। একসময় শুধু রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে হিমসাগর, গোপালভোগ, ল্যাংড়া ও ফজলি আমের ওপর দেশের চাষিরা নির্ভরশীল ছিলেন। এক যুগ আগে আম্রপালি আমের উদ্ভাবন আম চাষের সব ভৌগোলিক বাধা যেন গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এখন দেশের মোট উৎপাদিত আমের ৪০ শতাংশ এই জাতের। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে আম্রপালির চাষ ব্যাপক হারে বেড়েছে।

 পেয়ারা

এফএওর হিসাবে, পেয়ারা উৎপাদনে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে। এই অর্জন হয়েছে গত ১০ বছরে। ২০০৭-০৮ সালে দেশে পেয়ারা হয়েছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার টন। চলতি অর্থবছরে তা প্রায় ৫ লাখ ১৬ হাজার টনে উন্নীত হয়। একসময় শুধু দেশি পেয়ারার চাষ হতো। এক যুগ আগে আসে কাজি পেয়ারা। বিদেশি জাতের সঙ্গে মিশ্রণে উদ্ভাবিত ওই জাতের চাষ বেড়ে যাওয়ার পর থাইল্যান্ড থেকে বেশ কয়েকটি জাত আসে। গত ছয় বছরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টার থেকে উদ্ভাবিত হয়েছে ১০ প্রজাতির পেয়ারা, যার মধ্যে সাত প্রজাতির পেয়ারা থাইল্যান্ড থেকে আসা।

একসময় পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে সবচেয়ে বেশি পেয়ারা হতো। বর্তমানে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশির ভাগ জেলায় পেয়ারার চাষ হয়। দেশের মোট উৎপাদিত পেয়ারার ৭০ শতাংশই এখন থাই জাতের পেয়ারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বিচি ছাড়া পেয়ারার বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা করছেন। দেশের সাতটি কোম্পানি বর্তমানে পেয়ারার জুস তৈরির জন্য প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ থেকে পেয়ারা ও পেয়ারার জুস রপ্তানিও হচ্ছে।

নতুন ফলে নতুন আশা

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশে চলতি বছর ১ কোটি ২১ লাখ টন ফল উৎপাদিত হয়েছে। ১০ বছর আগের তুলনায় উৎপাদন ১৮ লাখ টন বেড়েছে। চাষের জমির দিক থেকে সবচেয়ে বেশি জমিতে চাষ হচ্ছে কলা। তারপর যথাক্রমে আম, পেঁপে ও কাঁঠাল। সবচেয়ে দ্রুত হারে বাড়ছে পেয়ারা ও লিচুর আবাদ।

এ ছাড়া বিশ্বের অন্যতম পুষ্টিকর ফল ড্রাগন ফ্রুট, অ্যাভোকাডো, রাম্বুটান, স্ট্রবেরি, ডুমুর, মাল্টা, বেল, নারকেল, জাম্বুরা, রংগন, সূর্য ডিম ও খেজুরের বেশ কয়েকটি জাতের চাষও দেশে দ্রুত বাড়ছে।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার