পেপারবুকে আটকা আপিলের শুনানি

দেড় দশক আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশে যে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়, তার বিচারে চলা মামলার শুনানি এখনো পর্যন্ত শুরু হয়নি। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপারবুক তৈরির পর পরই শুনানি শুরু হবে।

মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পেপারবুক তৈরি হলে আমার পক্ষ থেকে শুনানির পদক্ষেপ নেব। আদালতে প্রয়োজনীয় দরখাস্ত দেব।

 
চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি আলোচিত এই মামলায় আসামিদের পক্ষে আনা আপিল আবেদন গ্রহণ করে (অ্যাডমিশন) আদেশ দেন হাইকোর্ট।

এর আগে, ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে চালানো নাটকীয় হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ২১ জনকে চিহ্নিত করে।

এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়ে গত বছরের ১০ অক্টোবর রায় দেন বিচারিক আদালত।

এই রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে আপিল মামলা বর্তমানে শুনানির অপেক্ষায় আছে। বর্তমানে শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরির কাজ চলছে।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে যখন আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলা করা হয় তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। শুরুতে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে তৎকালীন সরকার বিভিন্ন রকম অপ-তৎপরতা শুরু করে। 

 
সে সময় ঘটনার তদন্তে বেশ কয়েকটি বিদেশি মিশন যেমন ব্রিটিশ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড, ইউএস ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এবং ইন্টারপোল বাংলাদেশি তদন্তকারীদের যোগ দিলেও এসব প্রতিষ্ঠানকে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন সহযোগিতা করা হয়নি।

আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে বিএনপি-জামায়াত তথা চার দলীয় জোট সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নৃশংসতম গ্রেনেড হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন নেতা সেদিন এই ভয়াবহ হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম আইভি রহমান ও অপর ২৪ জন নিহত হন।

এছাড়া এ হামলায় আরো ৪শ’ জন আহত হন। আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি। দেশের বৃহৎ এই রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে এ হামলা করা হয়েছিল।

 
এই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় উল্লেখযোগ্য নিহতরা হলেন- আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল অবসরপ্রাপ্ত মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা). মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন ও ইসাহাক মিয়া।

মারাত্মক আহতরা হলেন- শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রায়ত আব্দুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, এডভোকেট সাহারা খাতুন, মোহাম্মদ হানিফ, এএফএম বাহাউদ্দিন নাসিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা পারভীন, এডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক প্রমুখ।