জয় হলো শাবি শিক্ষার্থীদের; আন্দোলন স্থগিত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৬টি আশু দাবির অধিকাংশ প্রশাসন মেনে নেওয়ায় আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বছরের ৩৬৫ দিন হল খোলা রাখা, ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে গত ১৮ দিন যাবত আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা।

আজ রোববার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে বেশিরভাগ দাবি মেনে নিয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের সামনে লিখিত বক্তব্য দিলে আন্দোলন স্থগিত করে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে রোববার সকাল ১০টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এরপর বেলা দেড়টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সামনে প্রশাসনের সিদ্ধান্তগুলোর লিখিত বক্তব্য দেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম। এ সময় ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার তার সাথে ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে কোষাধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবিকে আমলে নিয়ে প্রশাসন বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তন্মধ্যে আছে- সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি বাদে বছরে ৩৬৫ দিনই হল খোলা রাখা, সমাবর্তনের সময় ৫-৮ জানুয়ারি হল বন্ধ না রেখে শুধুমাত্র ৮ তারিখ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হল বন্ধ রাখার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার সাথে কথা বলা, ছাত্রীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা রাত সোয়া ১০টা করা, রোড পেইন্টিং থেকে শুরু করে যেকোনো ধরণের কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়া, লাইব্রেরি রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা এবং রিডিং রুমের ব্যবস্থা করা, ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের মান বাড়িয়ে দাম কমানো, টংগুলোতে যেকোনো স্বাস্থ্যকর খাবারের অনুমতি দেওয়া এবং চাহিদা থাকার সময় পর্যন্ত টং খোলা রাখা, আইআইসিটি ও পরিসংখ্যান বিভাগের কক্ষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে অর্থ না নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করা প্রভৃতি।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের আরো বেশ কিছু দাবিও মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয় প্রশাসন। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের দেয়া ১০টি দীর্ঘমেয়াদি দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসন কাজ করবে বলে জানান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তগুলোকে স্বাগত জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন স্থগিত করে তাৎক্ষণিক ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল বের করেন তারা। তবে যেসব দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তা কার্যকর না করলে পুনরায় আন্দোলনে যাবেন বলে শর্ত দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে শীতকালীন ছুটিতে আবাসিক হল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলে গত ২০ নভেম্বর থেকে হল খোলা রাখার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। অনুমতি নেয়া হয়নি- এমন অযুহাতে ২০ নভেম্বরের মানববন্ধনে বাধা দেন প্রক্টর অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমদ। এ সময় শিক্ষার্থীদের সাথে প্রক্টরিয়াল বডির বাকবিতন্ডা হয় এবং মানববন্ধনে বাধা দেওয়ায় আন্দোলন আরও বেগবান হয়ে ওঠে।

পরবর্তীতে ১৬টি দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ৬টি আশু দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। মানববন্ধন, মশাল ও বিক্ষোভ মিছিল, সম্মিলিত গান এবং অর্বাচীন নামে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন তারা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হলেও দাবি না মানায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন এবং লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সাথে কয়েক দফা বৈঠকের পর রোববার দাবিগুলো মেনে নেয় প্রশাসন।