ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৬৯৪

চশমাপরা হনুমানের টিকে থাকার যুদ্ধ

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

 


বাংলাদেশে ৩ প্রজাতির হনুমানের মধ্যে অন্যতম সুন্দর হনুমান হচ্ছে চশমাপরা হনুমান। এদের চোখের চারপাশে গোলাকার বৃত্তের মতো সাদা রং থাকে বলে এদের ‘চশমাপরা’ হনুমান বলে। তবে শরীরের বেশিরভাগ অংশই কালো রঙের।

ঘন চিরসবুজ বনের বাসিন্দা নিরামিষভোজী চশমাপরা হনুমান পাতা, ফুল ও ফল পোকামাকড় খায়। এরা দল নিয়ে চলাফেরা করে, সে দলে অনেকগুলো মেয়ে থাকে এবং দলের নেতৃত্বে থাকে এক শক্তিশালী পুরুষ। পুরুষটিই প্রজনন বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে। এ প্রাণি সাধারণত শব্দ করে কম। বিপদের সম্মুখীন হলে ভয়ংকর শব্দ করে থাকে, যেটাকে অ্যালার্ম কল বলা হয়ে থাকে।

চশমাপরা হনুমান বর্তমানে মহা বিপন্ন তালিকাভুক্ত প্রাণি। ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইইউসিএন এ প্রাণিকে পৃথিবীব্যাপী বিপন্ন এবং বাংলাদেশে মহাবিপন্ন হিসেবে উল্লেখ করে। তবে আশার কথা হচ্ছে, মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া, আদমপুর, পাথারিয়া ও সাগরনালবনসহ হবিগঞ্জের দুইটি বনে প্রায় ৪০০ চশমাপরা হনুমান প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো টিকে আছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একদল গবেষকের দুই বছরের গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. হাবিবুন নাহারের তত্ত্বাবধানে যুক্তরাজ্যের রাফর্ড ফাউন্ডেশনের আর্থিক অনুদানে একদল গবেষক মৌলভীবাজারের লাউয়াছাড়া, আদমপুর, পাথারিয়া এবং হবিগঞ্জের সাতছড়ি ও রেমা-কালেঙ্গা বনে দুই বছরব্যাপী (২০১৮- ২০১৯) বিপন্ন এই প্রাণির সংখ্যা জরিপ করেছেন। জরিপে মহাবিপন্ন এই প্রাণিকে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যের প্রথম ধাপ হিসেবে তাদের বর্তমান অবস্থা এবং কমে যাওয়ার কারণ নিয়ে গবেষণা চালানো হয়।

গবেষক দলের প্রধান তানভীর আহমেদ জানান, এ গবেষণায় সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের পাঁচটি বনে ৩৬টি ভিন্ন ভিন্ন দলে মোট ৩৭৬টি চশমাপরা হনুমান সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল বনেও চশমাপরা হনুমান পাওয়া গেছে। যদিও অনুদানের সীমাবদ্ধতার কারণে ওই বনে হনুমানের সংখ্যা জরিপ করা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে ধারণা করা হচ্ছে, এই বনে তিন থেকে চারটি দলে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫টি চশমাপরা হনুমান থাকতে পারে। সুতরাং কেবল সিলেট বিভাগেই প্রায় ৪০০ চশমাপরা হনুমানের বসবাস।

তিনি আরও জানান, গবেষণা চলাকালে সবচেয়ে বেশি চশমাপরা হনুমানের দেখা মেলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছাড়া জাতীয় উদ্যানে। সেখানে ১০টি দলে মোট ১২৬টি চশমাপরা হনুমানের দেখা মিলেছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য ও মৌলভীবাজারের বড়লেখার উপজেলার পাথারিয়া সংরক্ষিত বন। এ গবেষণা থেকে বুঝা যাচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশে চশমাপরা হনুমানের সংখ্যা আগের ধারণার থেকে ভাল আছে। যদিও বিভিন্ন কারণে এ সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।

গবেষক দলের সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের ওয়ালস ইউনিভার্সিটির গবেষক এসপি গিটিন্স ও বাংলাদেশ বনবিভাগের বন্যপ্রাণিবিদ এ ডব্লিউ আকন্দের গবেষণা অনুযায়ী ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে চশমাপরা হনুমানের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩০০টি। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফরিদ আহসান তার এমফিল গবেষণায় বাংলাদেশে এ হনুমানের সংখ্যা উল্লেখ করেছিলেন ১০৫০টি। কিন্তু ২০০৩ সালে ভারতের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে চশমাপরা হনুমানের সংখ্যা ১০০টিরও কম যার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হনুমানের সংখ্যা ৫০টিরও কম।

এর মানে দাঁড়ায়, তার আগের তিন প্রজন্মে (প্রতি প্রজন্ম ১০-১২ বছর) চশমাপরা হনুমানের সংখ্যা পৃথিবীব্যাপী ৫০ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যদিও ১৯৮২ এবং ১৯৮৪ সালের হিসাবের সঙ্গে বর্তমানের হিসাব মেলালে ২০০৩ সালে উল্লেখিত বাংলাদেশে চশমাপরা হনুমানের সংখ্যাকে ‘উল্লেখযোগ্যভাবে কম মনে করছেন গবেষকরা।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) কর্তৃক ২০১৫ সালে প্রকাশিত লাল তালিকা বইয়ে বাংলাদেশে চশমাপরা হনুমানের বর্তমান সংখ্যা উল্লেখ না করলেও বলা হয়, এই প্রজাতির সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং মহাবিপন্ন প্রাণি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অন্যদিকে ২০০৮ সাল থেকেই চশমাপরা হনুমান পৃথিবীব্যাপী বিপন্ন প্রাণি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে আইইউসিএন।

অন্যদিকে দেশে চশমাপরা হনুমানের সংখ্যা নির্ণয়ে আগে কখনোই মাঠ পর্যায়ে বিজ্ঞানভিত্তিক জরিপ চালানো হয়নি, তাই সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বাংলাদেশের কোনো বনে বর্তমানে কি পরিমাণ চশমাপরা হনুমান টিকে আছে সে তথ্য সঠিকভাবে নিরূপণের জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। সিলেটে বিভাগে (মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ) এর অবস্থা ভাল থাকায় এখানেই প্রথম জরিপ চালানো হয়। তবে এসব বনেও আগের মত চশমাপরা হনুমান দেখা যায় না। নানা কারণেই এরা বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. হাবিবুন নাহার বলেন, চশমাপরা হনুমানের মাথা ও শরীরের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৫৩ সেমি এবং লেজের দৈর্ঘ্য ৭৬ সেমি। চশমাপরা হনুমান কমে যাওয়ার প্রধান কারণ বনভূমি উজাড় হওয়া। যার ফলে প্রাণিদের বাসস্থান এবং খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বনের ভেতর রাস্তা তৈরি করে এবং গাছ কেটে বনকে বিভিন্ন ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে- বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন নেওয়া। এর ফলে সব ধরনের প্রাণির ক্ষতি হচ্ছে। ২০১৬ সালে লাউয়াছড়া ও সাতছড়িতে ৪টি চশমাপরা হনুমান মারা গেছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। এখনই এদের রক্ষায় গুরুত্ব না দিলে একসময় এরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

চশমাপরা হনুমান কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে গবেষক তানভীর আহমেদ জানান, বিষয়টি মানবকেন্দ্রিক ও বেশ জটিল। বনভূমির পরিমাণ তো কমেছেই, সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও প্রাকৃতিক ফলজ বন কেটে কাঠের গাছ লাগানো হয়েছে। যার ফলে ওই এলাকার প্রাণিদের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে এবং তারা বনের বাইরে খাদ্যের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসছে। অবৈধভাবে সংরক্ষিত বন থেকে নিয়মিত বাঁশ ও জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করা হয়। সেই সঙ্গে মৌলভীবাজারের আদমপুর, পাথারিয়া এবং সাগরনাল বনে অবৈধ শিকার ও বাণিজ্যের কারণে এ হনুমানের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।

চশমাপরা হনুমান প্রকৃতির জন্য খুবই উপকারী জানিয়ে তিনি বলেন, এদের খাদ্যের ৪৭ শতাংশ বিভিন্ন গাছের পাতা এবং ১৪ শতাংশ ফল ও বীজ। খাদ্য গ্রহণ শেষে ফলের বীজ বনের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যা মূলত বনকে নতুন জীবন দান করে। তাই এ হনুমান বিপন্ন হলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বনায়নের জন্য মারাত্মক হুমকি হবে।

এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্য প্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) আবদুল ওয়াদুদ জানান,  বনের ভেতরের রাস্তাঘাট নিয়ে আমরা এরই মধ্যে সড়ক ও জনপথসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছি। সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। এত সতর্কার মধ্যেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে চোরাকারবারিরা যে সক্রিয় নেই তা বলা যাবেনা, তবে আমরা আমাদের স্বল্প জনবল নিয়েও আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার