ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৪৮৫

চট্টগ্রাম বন্দরে দেড়গুন কনটেইনার হ্যান্ডলিং

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০১৮  

দেশের বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই সম্পন্ন হয় এ বন্দর দিয়ে। মাসখানেক আগেও বন্দর জেটিতে ভেড়ানোর জন্য বহির্নোঙরে প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকত ১৬-১৭টি কনটেইনারবাহী জাহাজ। সেখানে বন্দরে এখন ভিন্ন চিত্র। বহির্নোঙরে অপেক্ষায় থাকে মাত্র একটি-দুটি কনটেইনার জাহাজ। অনেক ক্ষেত্রেই আবার ফাঁকা জেটি!

বন্দর সূত্রে জানা যায়, বন্দরে ইকুইপমেন্ট বহরে সদ্য যোগ হওয়া ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেন একসঙ্গে কাজ শুরু করেছে। এতে দেড়গুণেরও বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। যা চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে ৩০ শতাংশ বাড়তি। ফলে পণ্য ওঠা-নামার কাজে তৈরি হয়েছে গতিশীলতা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এখন ৭২ ঘণ্টার স্থলে ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে জাহাজ জেটি ছাড়ছে। হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ২১৮১ টিইইউএস কনটেইনার। যা গড়েছে নতুন রেকর্ড। কি গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলোতে পুরোদমে কাজ শুরু হলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে আরো গতিশীলতা তৈরি হবে বলে আশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট ২৮ লাখ ৮ হাজার ৫৫৪ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্পন্ন হয়েছে। যা বন্দর বিশেষজ্ঞদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি।

বন্দরের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বব্যাপী কনটেইনারের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এর ধারাবাহিকতায় বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারীদের হিসাব নিকাশ পাল্টে গেছে। বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

গেল কয়েক বছরের ইতিহাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্রমাগত বাড়তে থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্ছ্বসিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাপনায় দেখা দেয় নানামুখী উদ্বেগ।

এর প্রেক্ষিতে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্ট কি গ্যান্ট্রি ক্রেন কেনার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ।

২০০৮ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া পাঁচটি জেটি সম্বলিত বন্দর টার্মিনালে দশটি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন দেয়া হলে বছরে ১৫ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব বলেও বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট ছিল। অথচ কি গ্যান্ট্রি ক্রেনের অভাবে গত দশ বছর ধরে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাওয়া যায়নি। অবশেষে গত আগস্ট-অক্টোবর মাসে বন্দরের ইকুইপমেন্ট বহরে যোগ হয় ছয়টি পরল মাউন্টেড কি গ্যান্ট্রি ক্রেন। এগুলো এনসিটি-৪ ও ৫ নম্বর জেটিতে স্থাপন করা হয়। এতে ব্যয় হয় ৩শ’ ৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। চীনের কোম্পানি সাংহাই জেনহুয়া হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেড (জেডপিএমসি) এই ছয়টি ক্রেন সরবরাহ করে। ক্রয় কাজে চীনা এই কোম্পানির লোকাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে সাইফ পাওয়ার টেক।

এদিকে গত বেশ কয়েকদিন ধরে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে কি গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে গিয়ারলেস ভ্যাসেল হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে। সচরাচর একটি জাহাজে দুটি ক্রেন দেয়া হলেও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে একটি জাহাজে তিনটি ক্রেন দিয়ে কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়। এতে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কার্যক্রমে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে।

এনসিটি-৪ নম্বর জেটিতে বার্থিং নেয়া গিয়ারলেস ভ্যাসেল ‘এমভি কেরোলিনা ট্রেডার্স’ জাহাজের ২১৮১ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় বন্দর ত্যাগ করেছে। এর মধ্যে জাহাজটি থেকে আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই সব কনটেইনার খালাস করে রফতানি পণ্য বোঝাই কনটেইনারগুলো তুলে দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ইতিহাসে এত কম সময়ে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের আর কোনো রেকর্ড নেই বলে জানিয়েছেন বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, জাহাজের ক্রেন দিয়ে আমদানি-রফতানি কনেটেইনার হ্যান্ডলিং করে জাহাজটি নোঙর তুলতে কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগতো। এতে বন্দরের উৎপাদনশীলতা প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ওমর ফারুক আরো বলেন, দুটি ক্রেন দিয়ে আগে ঘণ্টায় যে পরিমাণ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যেতো, এখন তিনটি ক্রেন দিয়ে তার দেড়গুণেরও বেশি কনেটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাচ্ছে। আগে ১৮ বঙ হ্যান্ডলিং করা গেলেও এখন অনায়াসে ২৭ বঙ করা যাচ্ছে। যা বন্দরের সার্বিক উৎপাদনশীলতায় বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, গ্যান্ট্রি ক্রেন চালু হওয়ায় জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো নামানোর কাজ দ্রুত হচ্ছে। আমরা সবগুলো কি গ্যান্ট্রি ক্রেন চালু করেছি। আগে একটি জাহাজে দুটি ক্রেন দিয়ে কনটেইনার খালাস করা হতো। আমরা কিছুটা পরিবর্তন করে একটি জাহাজে একই সঙ্গে তিনটি ক্রেন দিয়েছি। এতে উৎপাদন অনেক বেড়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘এমভি কেরোলিনা ট্রেডার্স’ জাহাজের ২১৮১ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় বন্দর ছেড়ে গেছে। জাহাজটি বহির্নোঙরে আসার সঙ্গে সঙ্গে এনসিটি-৪ নম্বর জেটিতে বার্থিং দেয়া হয়েছিল। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাহাজটি বন্দর ত্যাগ করে চলে গেছে। এতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে শুধু নতুন গতিরই সৃষ্টি হয়নি, বিশ্বের শিপিং সেক্টরেও বন্দরের নতুন ইমেজ তৈরি হবে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, নতুন ইকুইপমেন্টগুলো চালানোর ক্ষেত্রে আমাদের অপারেটরদের এখনো কিছু জড়তা আছে। দু’চার দিনের মধ্যে এ জড়তা চলে গেলে উৎপাদনশীলতা আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০০৫ সালে চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন স্থাপন করা হলেও গত ১৩ বছরেও আর কোনো কি গ্যান্ট্রি ক্রেন সংগ্রহ করা হয়নি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের।

ক্রয়কৃত ওই গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলো সাইফ পাওয়ারটেক চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালে ব্যবহৃত হলেও বন্দরের অন্যান্য বার্থে জাহাজের ক্রেন দিয়েই কনটেইনার খালাস করা হতো। এতে করে গিয়ারলেস ভ্যাসেল (ক্রেন নেই এমন জাহাজ) আসলে তা শুধু চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালে হ্যান্ডলিং করা হতো। এতে গিয়ার ভ্যাসেলগুলো (ক্রেন আছে এমন জাহাজ) অন্যান্য বার্থে বার্থিং দিতে হতো। সবকিছু মিলে পর্যাপ্ত কি গ্যান্ট্রি ক্রেন না থাকায় কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে আমদানিকারকদেরও বাড়তি খরচ বহনসহ নানামুখী সংকটে পড়তে হয়। ফলে বাড়তি ভাড়া দিয়ে সংগ্রহ করতে হয় গিয়ার ভ্যাসেল। বিশ্বের শিপিং সেক্টরে গিয়ারলেস ভ্যাসেলের ভাড়া অনেক কম হলেও বন্দরের ক্রেন না থাকায় তা আমদানিকারকেরা চট্টগ্রামের জন্য আনতে পারতেন না। বেশি ভাড়া দিয়ে জাহাজের ক্রেন আছে এমন জাহাজ ভাড়া করতে হতো।

অপরদিকে ৫শ’ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হলেও শুধু ইকুইপমেন্টের অভাবে বছরের পর বছর এই টার্মিনাল অলস পড়ে থাকে।

জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসাল্টিংয়ের গবেষণা বলছে, ২০৩৬ সালে ২০ ফুট দীর্ঘ ৫৬ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে হবে চট্টগ্রাম বন্দরকে। প্রতি বছর চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসাবে এনে এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তারা। এ প্রেক্ষিতে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আনতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে ভাবার কোনো বিকল্প নেই।

জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর সদরঘাটে ২০১৩ সাল থেকে লাইটার জেটি নির্মিত হয়। বিভিন্ন জটিলতায় আগে কর্মরত বন্দর চেয়ারম্যানরা কেউই এসব জেটি চালু করতে পারেননি। বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আজিজ যোগদানের পর আমদানি পণ্য খালাসে গতি আনতে নতুন পাঁচটি লাইটার জেটি চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেন। বহির্নোঙরে জাহাজের জট কমিয়ে দ্রুত পণ্য খালাস এবং বন্দরের জেটির ওপর চাপ কমানোই ছিলো এর উদ্দেশ্য।

চট্টগ্রাম বন্দরের ১২৯ বছরের ইতিহাসে যে চারটি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন এসেছে, সেখানে এখন একসঙ্গে আনা হয়েছে ছয়টি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন। ফলে গতি এসেছে বন্দর কার্যক্রমে। এর রয়েছে বৃহৎ অর্থনৈতিক দিক, যা দেশের প্রবৃদ্ধিতেও অসামান্য অবদান রাখবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার