গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজে রজতজয়ন্তী ও পুনর্মিলনী উদযাপন

হারিয়ে যাওয়া সোনালি দিনগুলোর মধুর স্মৃতি হৃদয়ে আলোড়ন তোলে সব সময়। এই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর স্মৃতি রোমস্থন আর পুরানো বন্ধুদের সান্নিধ্য লাভের নিমিত্তে একাকার হয়ে যায় গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস। 

গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রানের উচ্ছাসে কলেজ ক্যাম্পাসে স্থাপিত হয় কারুকার্য সমৃদ্ধ একটি শহীদ মিনার। নবনির্মিত এই শহীদ মিনার পরিচয় বহন করবে কলেজের রজতজয়ন্তী উদযাপন ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দের স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে। নানা আয়োজন আর স্মৃতি চারণের মাধ্যম হিসেবে সর্বদাই শহীদ মিনার কলেজের শিক্ষক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও রজতজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদকে জাগ্রত করবে। শহীদ মিনার প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত নিয়ে যাবে কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্নে।

গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও রজতজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদ এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান মালার সভাপতি মো. ফজলুল হকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও যথার্থ নেতৃত্বের ফলাফল হিসেবে রজতজয়ন্তীর স্মৃতিটি চিরদিন বহাল নবনির্মিত শহীদ মিনার। যে শহীদ মিনারটি নিজের রুপ ও লাবণ্য আধুনিকতা ও দৃষ্টিনন্দনে সিলেট শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশাপাশি ইতিমধ্যেই নিজের স্থান করে নিয়েছে। 

গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের রজতজয়ন্তী উদযাপন ও শিক্ষার্থীদের মিলনমেলার দিনটিকে চিরদিনের জন্য স্মরণীয় ও স্মৃতিবহুল করার সুকৌশল আজ সিলেট জুড়ে প্রসংশিত হচ্ছে। কলেজ মাঠে নবনির্মিত শহীদ মিনারটি নান্দনিকতা ও আধুনিকতার সংমিশ্রণে স্থাপত্যশৈলী কারুকাজে পরিপূর্ণ।

সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের পাশাপাশি গোয়াইনঘাট-মাতরতল বাজারের উদ্দেশ্যে আসা মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নেয় দৃষ্টি নন্দন এই শহীদ মিনার। বিগত দিনগুলোর মধুর স্মৃতিকে অনাগত প্রজন্মের কাছে সমর্পন করার সুকৌশল মাত্র। শহীদ মিনারটি যুগেরপরযুগ গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের রজতজয়ন্তী ও পুনর্মিলনীর স্মৃতিবহ করার প্রত্যাশায় মূখ্য ভূমিকা রাখবে এটাই উদযাপন পর্ষদের প্রত্যাশা। সাম্য, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন চির জাগরুক রাখার প্রত্যয়ে হাজার হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থীর এই প্রয়াস বাস্তবায়নে ব্যায় হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। 

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপির সার্বিক দিক নির্দেশনায়, রজতজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদ ও কলেজের প্রক্তন শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় নবনির্মিত শহীদ মিনারটি নিয়ে যাবে ১৯৯৪ সালের কলেজ প্রতিষ্ঠার গোড়ায়। স্মরণ কলেজের নবীন ও প্রবীন শিক্ষার্থীদের প্রিয় প্রাঙ্গনে কাটানো সেই দিনগুলোর কথা। শহীদ মিনারটি প্রজন্মের কাছে ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরবে তার ইতিকথা।

৫২ সালে বাঙালী জাতি মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে তাজা তাজা বীরেরা শহীদ ভাইদের লাল রক্ত পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার স্রোত ধারায় বহমান। মায়ের ভাষা জন্য শহীদ হওয়া রফিক, জব্বার, বরকতরা নেই। তবে তাদের রক্তে রঞ্জিত হওয়া পিচ ঢালা সেই রাজপথ এখনও আছে। মায়ের ভাষা রক্ষায় জীবন দানকারী সেই সব শহীদ ভাইদের স্মরন ও গোয়াইনঘাট কলেজের রজতজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদ এবং প্রক্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে গড়ে উঠা শহীদ মিনার। ১৯৫২র মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বার বার আসছে। আসবে আজীবনভর। বাঙ্গালি জাতিস্বত্তা যতদিন থাকবে এই ভূমে। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি সরকারের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ রজতজয়ন্তী উদযাপন ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনীর অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দ শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

গোয়াইনঘাট কলেজে দৃষ্টিনন্দন এই শহীদ মিনার প্রতিষ্টায় অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক মূল কারিগর হিসেবে মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে কর্মরত মানুষ গড়ার এই কারিগর গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের প্রতিটি উন্নয়ন পরিক্রমায় রেখে যাচ্ছেন এক অনন্য অবদান। আবেগ, ভালোবাসা ও কলেজের পুরানো স্মৃতিকে অটুট রাখার প্রয়াসে ক্যাম্পাসে এই দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার।

গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক বলেন, ১৯৫২সালে রক্তাক্ত পটভূমি বাঙালি জাতির হৃদয়ে থাকবে আজীবনভর। মাতৃভাষার জন্য পৃথিবীতে একমাত্র বাঙালিরাই বুকের তাজা লাল রক্ত দিয়েছেন।

আত্মদানকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সেই সন্তানদের স্মৃতি রক্ষার পাশাপাশি গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের রজতজয়ন্তী উদযাপন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী দিনটিকে প্রজন্মের কাছে জাগ্রত রাখার প্রয়াসে গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা। শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালবাসা আর সম্মানের নিদর্শন কলেজ ক্যাম্পসের এই শহীদ মিনার।

উত্তর সিলেটের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্মিত দৃষ্টি নন্দন শহীদ মিনারটি যেন কলেজ ক্যাম্পাসকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। ফলে জনপ্রতিনিধি,সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগনসহ দেশ-বিদেশ থেকে আগুন্তক পর্যটকদের নজর কাড়ছে এই শহীদ মিনার।