আপনি করোনায় বেঁচে থাকবেন কিনা সিদ্ধান্ত আপনার

তিন মাসের বেশি হয়ে গেল মহামারী আকারে করোনা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। সামাল দেওয়া প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে গেছে। সারা পৃথিবীতে এই তিন মাসে মৃত্যুর সংখ্যা পায় সাড়ে মতিন লাখ। এ সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কেউ বলতে পারছে না।

আমাদের দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হবার পর ২৫ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ গ্রামের পথে রওনা হয় কোন স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই। এটা সংক্রমনের ১ম পর্যায় ছিল। মানুষের মধ্যে সচেতনতার বিন্দুমাত্র বালাই ছিল না। আস্তে আস্তে সাধারণ ছুটির সময় বাড়ানো হতে থাকে। পরবর্তীতে বেতন দেয়ার কথা বলে হুট করেই গার্মেন্টস খুলে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে বাধ্য হয়েই তাদেরকে ঢাকামুখী হতে হয়, কিন্তু এর পরপরই আবার গার্মেন্টস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

সংক্রমণের শুরুতে গ্রামে আক্রান্ত র সংখ্যা কম থাকলেও জোরালো লকডাউন না থাকায়, লোকজনের অসচেতনতায়, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার ফলে বেড়ে যায় আক্রান্তের সংখ্যা। এ দায় কার!

আমাদের নিজেদের অসচেতনতা, মূর্খতাই অনেকটা দায়ী এর জন্য। পুরো বিশ্ব আজ থমকে আছে। করোনার হটস্পট (Hotspot) বলা হচ্ছে এখন দক্ষিণ আমেরিকাকে। এর পরই জায়গা নিল ব্রাজিল। চিলি, পেরুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তীব্রভাবে। রাশিয়ার অবস্থাও খুব খারাপ। বিশ্বের পরাক্রমশালী দেশগুলো বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যদেশ আমেরিকা, রাশিয়া, বৃটেন, ফ্রান্স ও চীনের অবস্থাই বেশী খারাপ। এর মধ্যে চীন কিছুটা সামলে নিয়েছে। ইতালি, স্পেন এর অবস্থা এখনও আতঙ্কজনক।

বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ৫৪ লাখের বেশি। মারা গিয়েছে ৩ লাখ ৫৪ হাজারের ও বেশি। দক্ষিন সুদানে ১০ মন্ত্রী করোনায় সংক্রমিত। আক্রান্তের দিক থেকে বাংলাদেশ ২৫ তম যা গত পরশুদিন ছিল ২৭ তম। পরীক্ষা এবং সংক্রমনের হার এর দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ। ২৩ মে মৃতের সংখ্যা ছিল ৪৫২ জন যা ২২ তারিখে ছিল ৪৩২ জন, অর্থ্যাৎ ২০ জন বাড়লো। আজ ২৪ মে তারিখে মৃতের সংখ্যা ৪৮০ জন।

পরিস্থিতির অবনতি যে ঘটছে সেটা সকলেই বুঝতে পারছেন। ঈদ উপলক্ষে শহর থেকে লোকজন গ্রামে ফিরছেন সাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই। বাস, ট্রেন, লন্চ বন্ধ থাকলেও কাঁঠালবাড়ি -শিমুলিয়া ফেরিঘাটে লক্ষ্য করা যায় উপচেপড়া ভিড়। তুলনামূলকভাবে দৌলতদিয়া -পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যাত্রীদের চাপ কম ছিল। মানুষজন প্রানের ঝুঁকি নিয়েই নিজ গ্রামের দিকে পা বাড়াচ্ছে। লোকজনগুলো কর্মহীনভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছিল। সরকারী ত্রান-সাহায্যে, অন্যোন্যদের উপহার পেয়ে কতদিনই বা চলবে। কয়জনই বা এ সাহায্যের আওতাভুক্ত।

আগামীকাল ঈদ। এ সময়ে ঈদের নামাজে যাবেন অনেকেই। দয়া করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, মাস্ক পরে, বাড়ি থেকে ওযু করে যান। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আলাপ করুন, আলিঙ্গন থেকে বিরত থাকুন। বাচ্চাদের প্রতি খেয়াল রাখুন যাতে তারা হাত পরিষ্কার রাখে এবং বাড়ির বাইরে না যায়। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। পানি, তরল খাবার বেশি করে খান। মনকে প্রফুল্ল রাখে এমন কাজ করুন।ঘরে থেকে হালকা ব্যায়াম করুন। সুস্থ থাকুন, সতর্ক হোন।

সচেতনতাই পারবে আপনাকে এবং আপনার আপনজনদের টিকিয়ে, বাঁচিয়ে রাখতে।