• মঙ্গলবার ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ১৮ ১৪৩০

  • || ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামালের মৃত্যু : পরিবেশমন্ত্রীর শোক যুক্তরাষ্ট্র আরও স্যাংশন দিতে পারে: প্রধানমন্ত্রী দোয়ারাবাজারে ভারতীয় চিনিসহ চোরাকারবারি আটক আসন্ন বিশ্বকাপে যে দলকে চ্যাম্পিয়ন মনে করছেন গাভাস্কার শুরু হলো পঞ্চম সিলেট চলচ্চিত্র উৎসব খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত রোববার: আইনমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা বাঙালির বিশ্ব জয়ের সারথি: ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা
৭৬৭

ঐতিহাসিক আসহাবে কাহাফ: ঘুমন্ত সেই গুহাবাসীদের কাহিনী 

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২২  

২৫০ খৃষ্টাব্দের দিকে বর্তমান জর্দান অঞ্চল দাকিয়ানুস নামের এক রোমান মূর্তিপূজক শাসকের শাসনাধীন ছিল। অঞ্চলটির সকল জনগণকে সে রোমান দেবতাদের পূজা করতে বাধ্য করেছিল। কেউ তার বিরোধিতা করলে, তাকে সে হত্যা করা ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার মর্মন্তুদ শাস্তি প্রদান করতো।

বিশেষ করে হযরত ঈসা (আ.) এর শিক্ষার প্রতি অনুরক্ত মানুষদের ক্ষেত্রে তার মনোভাব ছিল চরম হিংসাত্মক। হযরত ঈসা (আ.) এর অনুসারী কাউকে পেলেই সে তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতো।

এর মধ্যেই সেখানে বসবাসকারী অভিজাত রোমান পরিবারের কিছু যুবক হযরত ঈসা (আ.) এর উপর ঈমান আনে। দাকিয়ানুস বিষয়টি জেনে যায়। কিন্তু তারা অভিজাত রোমান হওয়ায় তাদেরকে সরাসরি হত্যা করতে সে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তখন সে তাদেরকে ডেকে তাদের বিশ্বাস ত্যাগ করতে আদেশ দেয়। তারা তাদের বিশ্বাস ত্যাগ করতে না চাইলে সে তাদেরকে হত্যা করার ঘোষণা দিয়ে বলে, হয় তাদেরকে তাদের বিশ্বাস ত্যাগ করতে হবে না হয় তাদেরকে মৃত্যুকে বেছে নিতে হবে।

তাদেরকে সে এবিষয়ে চিন্তা করার সুযোগ দেয়। তখন নিজেদের ঈমান ও জীবনকে বাঁচাতে এই যুবকরা পালিয়ে এক পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন করে। একটি কুকুরও তাদের সঙ্গে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করে। গুহায় আশ্রয় নেওয়ার পর তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয় এবং তিনশত বছর আল্লাহ তাদেরকে ঘুমের মধ্যেই রাখেন।

কুরআনে আল্লাহ তাদের সেসময়কার অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বলেন,

“তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা ঘুমন্ত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে। তাদের কুকুর ছিল সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। যদি তুমি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়তে।” (সূরা কাহাফ, আয়াত: ১৮) 

পরবর্তীতে তারা ঘুম থেকে উঠে খাবার আনার জন্য গোপনে বাইরে একজনকে পাঠায়। বাইরে আসার পর সে আবিষ্কার করে, তার চারপাশের সকলকিছু পরিবর্তিত হয়ে গেছে। সে জানতে পারে, আগের মূর্তিপূজক শাসক বহুপূর্বেই মৃত্যু বরণ করেছে এবং বর্তমানে থিওডোসিস নামে খ্রিস্টান একজন শাসক অঞ্চলটি শাসন করছে। লোকেরা তাদের কথা জানতে পেরে তাদের কাছ থেকে দুআ নেওয়ার জন্য দলে দলে আসতে থাকে। পরে তারা মৃত্যুবরণ করলে তাদেরকে এই গুহার মধ্যেই দাফন করা হয়। জর্দানের রাজধানী আম্মানের নিকটে আবু আলান্দা নামক স্থানে এই গুহাটি আজও অবস্থিত। বর্তমানে গুহাটি পরিদর্শনে আসে বহু মানুষ।

বাইবেল ও কুরআন উভয় ধর্মগ্রন্থেই এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বাইবেলে তাদেরকে ‘এফসুসের ঘুমন্ত ব্যক্তিরা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অপরদিকে কুরআনে তাদেরকে নিয়ে সম্পূর্ণ একটি সূরা অর্থাৎ সূরা কাহাফ অবতীর্ণ করা হয়েছে। 

গুহাটির প্রবেশ পথের বামে একটি প্রাচীন জলপাই গাছ রয়েছে। পূর্বে গুহাটির উপরে একটি গীর্জা ছিল। বর্তমানে এখানে একটি মসজিদ অবস্থিত।

গুহাটির ভিতরে ঘুমন্ত ব্যক্তিদের পাথরে বাধাই করা কবর রয়েছে। এছাড়া তাদের সঙ্গে আশ্রয় নেওয়া কুকুরটির অবশিষ্ট হাড়গুলো গুহাটির এক কোণে সংরক্ষিত আছে। 

গুহাটিতে মোট কয়জন ব্যক্তি আশ্রয় নিয়েছিলেন, এ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায় না।

কুরআনে এসম্পর্কে বলা হয়েছে,

“তারা বলবে, তারা ছিল তিন জন; তাদের চতুর্থটি তাদের কুকুর। একথাও বলবে, তারা পাঁচ জন। তাদের ছষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর। আরও বলবে, তারা ছিল সাত জন। তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলুন, আমার পালনকর্তা তাদের সংখ্যা ভাল জানেন। তাদের খবর অল্প লোকই জানে। সাধারণ আলোচনা ছাড়া আপনি তাদের সম্পর্কে বিতর্ক করবেন না এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে তাদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ ও করবেন না।” (সূরা কাহাফ, আয়াত: ২২)

জর্দানের এই গুহাটি ছাড়াও বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী তুরস্কের এফিসাসে অবস্থিত একটি গুহাকে আসহাবে কাহাফের গুহা হিসেবে দাবি করা হয়। তথাপি জর্দানের এই গুহাটিই আসহাবে কাহাফের গুহা বলে অধিক পরিচিতি লাভ করেছে।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার