ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৪৯

রেললাইন বেঁকে যাওয়া : করণীয় কী?

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২৩  

লোকো মাস্টার মতিন সাহেবের চাকরি জীবন প্রায় শেষ, আর বছরখানেক পরেই তিনি অবসরে যাবেন। তার এই দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি রেলের অনেক চড়াই–উতরাই, ভালো-মন্দের সাক্ষী। তিনি জোর গলায় বলতে পারেন, কয়েক বছরে সরকার যেভাবে রেলকে আর উন্নত করতে চাইছে তা আগে দেখা যায়নি।

একদিকে যেমন নতুন রেললাইন সংযোগ হচ্ছে অন্যদিকে আধুনিকায়নও হচ্ছে। যেমন কক্সবাজারে ২০২৩ সালেই রেল যোগাযোগ চালু হবে আর তাছাড়া ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে শতভাগ টিকেট অনলাইনে করে মানুষের দুর্ভোগ কমানোর যে চেষ্টা ছিল তা সত্যি প্রশংসনীয়।

এত কিছুর মাঝেও কয়েক দিন মতিন সাহেব একটা ব্যাপারে খুব অস্বস্তিতে আছেন। কিছুদিন আগে দেশের কয়েকটা জায়গায় ট্রেন লাইন বেঁকে গিয়েছে এবং এটার জন্য দুর্ঘটনা যেমন হয়েছে তেমনি অন্য সব চালকদের মতো তিনি নিজেও খুব ভয় পেয়েছেন।

আজকাল ট্রেন চালাতে গিয়ে তিনি খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকেন কারণ ২০২৩ সালের এপ্রিল-মে মাসে যে পরিমাণ গরম পড়েছে তাতে করে কোনো জায়গায় রেললাইন যদি একটু বেঁকে গিয়ে থাকে তাহলে তিনি কীভাবে বুঝবেন? অসংখ্য মানুষ গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তার কাঁধে।

সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে এবং তখন এই সমস্যা আরও প্রকট হবে। প্রকৃতির ওপর তো আর কারও হাত নেই এটা তিনি ভালোই বোঝেন। এই সমস্যা পুরো পৃথিবীর, তাই তারা কীভাবে সমস্যা সমাধান করছে সেটা যদি আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা একটু অনুসরণ করতো তাহলে হয়তো রেললাইন বেঁকে যাওয়া থামানো যেত।

রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়টির ভূমিকা রয়েছে সেটা হলো রেলের প্রতি মিটারে ওজন। আমাদের দেশে বিভিন্ন ওজনের রেল সেকশন পাওয়া যায়, তবে বর্তমানে সব নতুন লাইনে ৯০ পাউন্ড/মিটার ওজনের রেললাইন ব্যবহার করা হচ্ছে।

মতিন সাহেব ইঞ্জিনিয়ার নন তার কাজ ট্রেন চালানো কিন্তু যেহেতু তাকেই দায়িত্ব নিয়ে এতগুলো মানুষ নিরাপদে পৌঁছে দিতে হয় তাই তিনি কয়েকদিন এটা নিয়ে কিছুটা জানার চেষ্টা করছেন, কয়েকজনের সাথে কথাও বলেছেন। তিনি এখন একটা ধারণা পেয়েছেন যে, কেন রেললাইন বেঁকে যায় আর কীভাবে চাইলে এই সমস্যা এড়ানো যায়।

রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়টির ভূমিকা রয়েছে সেটা হলো রেলের প্রতি মিটারে ওজন। আমাদের দেশে বিভিন্ন ওজনের রেল সেকশন পাওয়া যায়, তবে বর্তমানে সব নতুন লাইনে ৯০ পাউন্ড/মিটার ওজনের রেললাইন ব্যবহার করা হচ্ছে। যেসব রেললাইনে এখনো কম ওজনের রেল রয়েছে, যেমন ৭৫ পাউন্ড/মিটার বা তার চেয়ে কম, সেগুলোয় বেঁকে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। তাই কম ওজনের রেল সেকশন আস্তে আস্তে পুনঃস্থাপন করা দরকার।

দ্বিতীয়ত, আগে দুইটা রেল সেকশনের, যার এক একটি লম্বায় ছিল ৪২ ফুট, তাদের মাঝে এক্সপানশন গ্যাপ দেওয়া হতো। আজকাল কয়েকটি রেল সেকশনকে একত্রে ওয়েল্ডিং করে লম্বা লাইন তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে লাইনের দৈর্ঘ্য অনেক বেড়ে যায় ও গরমে লাইন বেঁকে যায় দ্রুত। তাই খেয়াল রাখা দরকার যাতে অনেক বেশি লাইন ওয়েল্ডিং করে সেকশন লম্বা না করে ফেলি।

এছাড়া এই ধরনের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত এক্সপানশন গ্যাপ না থাকায় আবহাওয়াজনিত তাপ ও ট্রেন চলাচলের ফলে ঘর্ষণের ফলে উৎপাদিত তাপ একত্রে লাইনের বৃদ্ধি ঘটায়। যদি এক্সপানশন গ্যাপ না থাকে বা কম থাকে বা গ্যাপের মাঝে পাথর ঢুকে যায় তখন লাইন বেঁকে যায়। তাই প্রতিনিয়ত এই গ্যাপগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত।

তবে তাপ বাড়লে লাইনের দৈর্ঘ্য বাড়বে আর তখন দুই লাইনের মাঝে গ্যাপ দিতে হবে এটা কিছুটা পুরোনো ধারণা, কারণ আজকাল অনেক ধরনের থার্মাল প্রটেক্টর রয়েছে, যা লাইনের সাথে সংযুক্ত করে দ্রুত তাপ কমানো হয়। এই ধরনের থার্মাল প্রটেক্টর আমাদের দেশে ব্যবহার হলেও সেগুলো মানসম্মত কি না সেটা দেখা জরুরি।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে, রেললাইন বেঁকে যাওয়া রোধ করতে দুটো অপরিহার্য উপাদান রয়েছে তার একটা হলো রেল স্লিপার ও পাথর বা ব্যালাস্ট। রেল স্লিপারের উপাদান ও ঘনত্ব ঠিক রাখা রেল বেঁকে যাওয়া প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

সাধারণত তিন উপাদানের স্লিপার ব্যবহার করা হয় যেমন কাঠ, কংক্রিট ও লোহা। উল্লেখ্য যে, কংক্রিট ও লোহার স্লিপার ব্যবহার করে রেললাইনের উৎপাদিত তাপ দ্রুত ট্রান্সফার করা সম্ভব। এছাড়া তাপে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে, লাইনের সাথে স্লিপারের সংযোগ দুর্বল থাকা। এক্ষেত্রে হুক বা স্পাইকের অবস্থা নিয়মিত পরিদর্শন করা উচিত এবং স্পাইক লাগানোর সময় দুই পাশে আড়াআড়ি করে লাগাতে হবে।

এছাড়া স্লিপারকে লাইনের সাথে লম্বালম্বিভাবে না রেখে প্রয়োজনভেদে কিছুটা কৌণিকভাবেও স্থাপন করা যেতে পারে। এতে করে সংযোগের দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়। এখানে উল্লেখ্য যে, রেললাইনের সাথে স্লিপার, ফিস প্লেটের সংযোগস্থল বেশি টাইট করে লাগানো উচিত নয়।

পৃথিবীর অনেক দেশে গরমের সময় রেললাইনের ওপরে সাদা রঙ করা হয় তাপ কমানোর জন্য। এক্ষেত্রে, বেঁকে যাওয়া প্রবণ অংশে পানি যুক্ত ইমালশন পেইন্ট ব্যবহার করা যায় এবং এই পদ্ধতিতে রেললাইনের তাপমাত্রা প্রায় ৫ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি পর্যন্ত কমানো সম্ভব।

আমাদের দেশে রেল পথে পাথরের পরিমাণ পর্যাপ্ত নয় এবং ফাউন্ডেশন দুর্বল। এই ধরনের স্থানে রেল চলাচলের ফলে লাইন বেঁকে যেতে পারে। আর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে, রেললাইনের ওপরে স্থানীয়ভাবে পাতা বা কচুরিপানা দিয়ে ভিজিয়ে রেখেও দ্রুত সাময়িকভাবে তাপ কমানো সম্ভব।

রেললাইনের বেঁকে যাওয়া বন্ধে আমরা বেশকিছু পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারি কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়মিত মনিটরিং ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, বিশেষ করে রেল ও স্লিপারের মান ও সংযোগ পদ্ধতি।

এছাড়া আমাদের দেশে রেল পথে পাথরের পরিমাণ পর্যাপ্ত নয় এবং ফাউন্ডেশন দুর্বল। এই ধরনের স্থানে রেল চলাচলের ফলে লাইন বেঁকে যেতে পারে। আর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে, রেললাইনের ওপরে স্থানীয়ভাবে পাতা বা কচুরিপানা দিয়ে ভিজিয়ে রেখেও দ্রুত সাময়িকভাবে তাপ কমানো সম্ভব।

লোকো মাস্টার মতিন মনে মনে সবগুলো পয়েন্ট একবার আউড়ে নিলেন কারণ তার ইচ্ছা একদিন সুযোগ পেলে তিনি এটা বড় স্যারকে বলবেন। তার এখন একটা বিষয় ভেবে কিছুটা অবাক লাগছে যে, তিনি ইঞ্জিনিয়ার না হয়েও যদি এই ব্যাপারগুলো জানার চেষ্টা করতে পারেন তাহলে এই যে, এত এত ইঞ্জিনিয়ার আছে রেল ডিপার্টমেন্টে তারা কেন এই বিষয়গুলো আরও বিজ্ঞানসম্মতভাবে উপস্থাপন করছে না। শুধুমাত্র রেললাইনের পরিমাণ বাড়ালেই তো হবে না এটাকে নিরাপদ করাও জরুরি।

লোকো মাস্টার মতিন এই রেললাইনের ওপরে তার জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। তিনি যখন ট্রেন চালনা করেন তখন সমান্তরাল চলমান দুইটি রেললাইন তাকে গন্তব্যে নিয়ে যায়। তিনি জানেন, রেললাইন যতদিন সমান্তরালে থাকবে ততদিন নিরাপদ।

রেল আগাচ্ছে, মতিন সাহেবের ইচ্ছে চাকরি শেষ হওয়ার আগে একবার অন্তত কক্সবাজারে প্রথম ট্রেন নিয়ে যাবেন। তিনি জানেন, আস্তে আস্তে রেল আরও ছড়িয়ে পড়বে এই দেশে। তিনি হয়তো থাকবেন না কিন্তু তিনি চান, লাইনগুলো যেন আমরা সবসময় সমান্তরালেই রাখি, কখনো বাঁকা হতে না দেই।

কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ ।। সহকারী অধ্যাপক (অন-লিভ), এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট, বুয়েট; সার্ভিলেন্স কো-অর্ডিনেটর, বিআইজিআরএস
 

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার