ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৫৫

জি–২০ সম্মেলন ও আশা-আশঙ্কার ভূ-রাজনীতি

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৩  

অগ্রসর অর্থনীতি আর উদীয়মান অর্থনীতির ১৯টি দেশ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত অনানুষ্ঠানিক ফোরামের নাম জি–২০। এর ১৮তম শীর্ষ সম্মেলন হবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। নয়া দিল্লিতে।

করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন, আর ইউরোপে চলমান যুদ্ধের কারণে এবারের সম্মেলন স্বভাবতই বিশেষ আগ্রহ জাগাচ্ছে। তার ওপর এবার সম্মেলনের সভাপতিত্ব করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং জি–২০-এর সদস্য না হলেও বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশেষ আমন্ত্রণে এই সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে এবারের জি–২০ সম্মেলন আগামী দিনগুলোর ভূ-রাজনৈতিক পথনকশা নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্ববহ হবে বলেই ধরে নিচ্ছেন সবাই।

নিঃসন্দেহে বিশ্ব অর্থনৈতিক-কূটনীতির জন্য বর্তমান সময় ভীষণ বৈরী। শীর্ষ সম্মেলনের আগেই জি–২০-এর প্রস্তুতিমূলক সভা-মতবিনিময়গুলোয় তার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অগ্রসর, উন্নয়নশীল আর পিছিয়ে থাকা সব অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়লেও ভারতে সম্প্রতি শেষ হওয়া জি–২০ অর্থমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক থেকে এই বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছানোর খবর পাওয়া যায়নি।

সেপ্টেম্বর নাগাদ এই অনৈক্যের পরিস্থিতি খুব বড় রূপ নেয় কি না তা নিয়ে আশঙ্কা করছেন অনেক বিশ্লেষক। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার এই ধরনের বৈশ্বিক সংকটকালে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নীতি-প্রস্তাবনা হাজির করার জন্যই কিন্তু জি–২০-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল।

বিশেষ করে ২০০৮-০৯-এর বিশ্ব আর্থিক সংকট মোকাবিলায় জি-২০ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তাই এবারেও প্রাথমিক পর্যায়ে প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়া নিয়ে হতাশ না হয়ে, নতুন নতুন কৌশল নিয়ে এগোনোর পরিকল্পনা করাই সঠিক হবে।

এই প্রসঙ্গে ২০১৮ সালে কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং জি–২০-এর মূল প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম—পল মার্টিনের একটি বক্তব্য মনে করা যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘... জি–২০-এর লক্ষ্য হলো সকলের জন্য বিশ্বায়নের সুফল নিশ্চিত করা। ... আর বিশ্বের রাষ্ট্রনায়ক আর মন্ত্রীদের যখন একটি বদ্ধ ঘরে একান্তে আলোচনার সুযোগ করে দেওয়া হয় তাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে অমিত ক্ষমতা তৈরি হয় সেই বিষয়ও আমাদের মনে রাখতে হবে।’

আসলেই তাই। তাই জি–২০ থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল আসবে না—এমন আশঙ্কার পাশাপাশি বিশ্বের নেতারা একত্রে বসে একটি সমাধানের পথ খুঁজে বের করবেন এমন আশার জায়গাও আমি দেখি। আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়েই বিশ্ব সংকট সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে এমনটি আশা করা নিশ্চয় অন্যায় হবে না।

আগেই বলেছি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এবার বিশেষ আমন্ত্রণে জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে দিল্লিতে ‘ইনগোরাল লিডারস সেশন’-এ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কালে বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা এবং করোনা মহামারির অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে একটি সুবিচারভিত্তিক ও ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সকলে একযোগে কাজ করার এখনই সময়।’

এবারের জি–২০ সম্মেলনের মূল থিম, ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ (One World, One Family, One Future)’—থেকেও আমরা একই বার্তা পাই।

এবারের জি–২০ সম্মেলনের মূল থিম, ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ (One World, One Family, One Future)’—থেকেও আমরা একই বার্তা পাই। এবার এই সম্মেলনের সভাপতিত্ব করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার সরকার পশ্চিমের দেশগুলোর দিক থেকে ব্যাপক চাপ থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে বৈরিতার পথে হাঁটছে না। আবার একই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকেও জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘এখন যুদ্ধের সময় নয়।’

একদিকে মহামারি আর যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অস্থিরতা থাকলেও অন্যদিকে সকলে মিলে সমস্যা মোকাবিলার এমন আহ্বানও দৃশ্যমান রয়েছে। তবে ভারতের নেওয়া কৌশল কিন্তু বেশ ঝুঁকিপূর্ণও বটে।

রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি সরবরাহের সুবিধা নিয়ে এমনিতেই ভারত পশ্চিমের কাছে খানিকটা প্রশ্নের মুখে রয়েছে। তাই খুবই সাবধানে তাকে কূটনীতির দাবার চাল দিতে হবে। তবে আশার কথা ভারতের রয়েছে খুবই সুদক্ষ একদল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নেগোশিয়েটর। তারা এই ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সময় নিশ্চয় চৌকস দূতিয়ালির কাজ করতে সক্ষম হবেন।

সত্যি বলতে দুই দশকেরও আগে জি–২০-এর শুরুই হয়েছিল বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় ছোট-বড় অর্থনীতির একযোগে কাজ করার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে। গেল শতাব্দীর শেষ দশক থেকেই অনেকগুলো দেশই বিশ্ব অর্থনীতিতে উঠে আসতে শুরু করে ‘ইমার্জিং ইকোনমি’ হিসেবে।

ঐ সময় সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক খাত বিষয়ে বহুজাতিক মঞ্চ হিসেবে ছিল জি-৭, যেখানে প্রতিনিধিত্ব ছিল পশ্চিমের সাতটি উন্নত অর্থনীতির দেশের। তখনই আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোয় তুলনামূলক ছোট অর্থনীতিগুলোর প্রতিনিধিত্ব না থাকা নিয়ে ভাবিত ছিলেন অনেকেই।

এই প্রেক্ষাপটেই এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়। রাশিয়া তার ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সংকটে পড়ে। অন্যদিকে ব্রাজিলেও মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে সংকট ঘনীভূত হতে থাকে। এই সংকট মোকাবিলার নীতি-প্রস্তাবনাগুলো সব পক্ষের আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই যেন দাঁড় করানো যায়—তার জন্যই জন্ম হয় জি–২০-এর।

বড় অর্থনীতির দেশগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো থেকে প্রতিনিধিত্বশীল অর্থনীতির দেশগুলোয়ও জি–২০-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আন্তর্জাতিক ঋণের বিপরীতে চার্জের হার কমিয়ে আনা, দরিদ্র দেশগুলোর জন্য আর্থিক সাহায্য নিশ্চিত করার মতো বেশকিছু উদ্যোগসহ নানামুখী সংস্কারের যে নীতি-প্রস্তাবনাগুলো জি–২০ থেকে উঠে এসেছিল তা অনুসরণ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংকট সমাধানে সফলতা এসেছিল। সারা বিশ্বই এই অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক কূটনীতির সুফল পেয়েছিল।

২০০৮ এবং ২০০৯-এ জি–২০-এর কার্যক্রমের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। মার্কিন হাউজিং মার্কেটে তৈরি হওয়া সংকট তখন বিশ্বায়িত আর্থিক ব্যবস্থাপনার কারণে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আগে মার্কিনিদের তরফ থেকে জি–২০ রাষ্ট্রনায়কদের সম্মেলনে রূপান্তরের যে অনাগ্রহ ছিল তা ওই সময়ে পরিবর্তিত হয়।

ওই সময়ে (২০০৮-এ) বিদায়ি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সভাপতিত্বে আর তার পরের বছর লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পর পর দুটি জি–২০ সম্মেলন বিশ্ব অর্থনীতি বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল।

সাধারণত বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দেখলেই বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো নিজ নিজ অর্থনীতি আলাদাভাবে সুরক্ষা দিতে বিভিন্ন রকম সংরক্ষণবাদি নীতির (Protectionism) আশ্রয় নিতে শুরু করে। কিন্তু বিশ্বায়নের এই যুগে সংরক্ষণবাদ কোনো সমাধান হতে পারে না।

২০০৮-২০০৯ সালে জি–২০-এর কল্যাণেই সংরক্ষণবাদের সম্ভাব্য বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এই প্রসঙ্গে জি–২০-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি লরেন্স সামার্স ২০১৮ সালে বলেছেন, ‘আর্থিক খাতের নিয়ম-নীতির সংস্কার এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় বিষয়ে ওই সময়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো না গেলে, ঐ আর্থিক খাতের সংকটের ভয়াবহতা বহুগুণে তীব্রতর হতে পারতো। ... সেই সময় জি–২০ খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিল।’

কাজেই দেখা যাচ্ছে জি–২০ প্রতিষ্ঠার প্রথম দশকের মধ্যেই অন্তত দুই বার বৃহৎ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে ত্রাতা হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। এই ট্র্যাক রেকর্ডের কারণেই বর্তমানে চলমান সংকটেও সেপ্টেম্বর ২০২৩-এর জি–২০ শীর্ষ বৈঠক থেকে ইতিবাচক ফলাফল আশা করা যায়।

একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের বৈশ্বিক বাস্তবতায় ভারত ‘হোস্ট কান্ট্রি’ হিসেবে তার কূটনৈতিক প্রভাব কতটা খাটাতে সক্ষম হবে তার ওপর বহুলাংশে নির্ভর করবে এই সম্মেলনের সফলতা। বৈশ্বিক অর্থনীতির কেন্দ্র এশিয়ার দিকে সরে আসার প্রেক্ষাপটে জি–২০-তে ভারতের সভাপতিত্ব বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

মনে রাখতে হবে রাশিয়া ভারতের পুরোনো মিত্র এবং এই সংকটের মধ্যেও ভারতে জ্বালানি ও সার সরবরাহে তারা সহায়ক ভূমিকাই রেখেছে। অন্যদিকে পশ্চিমের বাজারও ভারতের জন্য দরকারি। দুয়ের মধ্যে ভারসাম্য করা কেবল চাপ হিসেবে না দেখে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ হিসেবেও বিবেচনা করতে হবে। যেটুকু খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদির সরকার সেই পথই বেছে নিয়েছে।

গণমাধ্যমের খবরে এবং বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনা থেকে জানা যাচ্ছে যে, পশ্চিমা বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে সরে এসে অন্যত্র বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। এই সুযোগে ‘ইমার্জিং ইকোনমি’র দেশগুলোর এমএসএমই খাতে বিনিয়োগ, এসব দেশের কৃষিকে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে আরও বেশি করে যুক্ত করা এবং অগ্রসর অর্থনীতিগুলোর সাথে বাকিদের মধ্যকার দক্ষতার ব্যবধান (skills gap) কমানোর ওপর জোর দেবে মোদি সরকার।

    আন্তর্জাতিক ঋণের বিপরীতে চার্জের হার কমিয়ে আনা, দরিদ্র দেশগুলোর জন্য আর্থিক সাহায্য নিশ্চিত করার মতো বেশকিছু উদ্যোগসহ নানামুখী সংস্কারের যে নীতি-প্রস্তাবনাগুলো জি–২০ থেকে উঠে এসেছিল তা অনুসরণ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংকট সমাধানে সফলতা এসেছিল।

একই সঙ্গে করোনার ধাক্কার পর পুনরুদ্ধারে মনোযোগের কারণে এসডিজি অর্জনের পথ থেকে যে বিচ্যুতি ঘটেছে সেই ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার ওপরও বিশ্ব-নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে চাইবেন নরেন্দ্র মোদি।

অন্যদিকে ভারতসহ অন্য ‘ইমার্জিং ইকোনমি’গুলোয় জ্বালানি, আর্থিক সেবা খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের যে ঢেউ লেগেছে তাকে আরও বলশালী করতে বৈশ্বিক অংশীজনদের মধ্যে প্রযুক্তি বিনিময়ের ওপরও জোর থাকবে এবারের সম্মেলনে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন আর নারী উন্নয়নের এজেন্ডাগুলোও আরও বেশি মাত্রায় আনার চেষ্টা করবে ভারত—এমন ধারণা করা যাচ্ছে।

ভারত তার এই কল্যাণমুখী এজেন্ডা নিয়ে একা এগোতে পারবে না। ‘গ্লোবাল সাউথ’ বলে পরিচিত অপরাপর দেশগুলোর সমর্থনও তার দরকার হবে। এখানেই বাংলাদেশের বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। জি–২০ সম্মেলন সামনে রেখে তাই বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছয় দফা প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছেন। 

এগুলো হলো—
১। বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে মানব সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের পথকে সুগম করা,
২। এসডিজির লক্ষ্যগুলোর পাশাপাশি বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য নতুন চিন্তা-ভাবনা শুরু করা,
৩। স্বল্পোন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে থাকা দেশগুলোর জন্য আলাদা তহবিল গঠন,
৪। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বে ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ কমিয়ে এনে নারীসহ সবাইকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ,
৫। রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষাপটে সব মানুষের নিজ দেশে একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের অধিকারের প্রতি আরও বেশি সংবেদনশীলতা,
৬। প্রতিবেশী দেশ, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী, ব্যক্তিখাত, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, এবং অন্যান্য অংশীজনদের সাথে নিয়ে ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।

বিশ্বায়নের এই যুগে একবিংশ শতাব্দীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ পেরিয়ে এই কথা নিশ্চিত করেই বলা যায় পারস্পরিক সংঘর্ষ কিংবা সংরক্ষণবাদিতা নয়, গোটা মানব সভ্যতার টেকসই কল্যাণ আসবে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সংবেদনশীলতা থেকেই। ঠিক এই কথা আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন জাতিসংঘে ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪-এ তার ঐতিহাসিক বক্তৃতায়।

সেদিন তিনি আশাবাদী উচ্চারণে বলেছিলেন, ‘... আমাদের পথ হইতেছে জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও যৌথ প্রচেষ্টা। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সম্পদ ও প্রযুক্তিবিদ্যার শরিকানা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা হ্রাস করিবে এবং আমাদের কর্মকাণ্ডও সহজতর করিবে, ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই। নতুন বিশ্বের অভ্যুদয় ঘটিতেছে।” বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘নতুন বিশ্ব’র দিকে একটি সার্থক পদক্ষেপ হোক এবারের জি–২০ সম্মেলন- এই প্রত্যাশায়।

ড. আতিউর রহমান ।। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
 

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার