ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৬৬

অর্থনীতিতে সুবাতাস, তবে...

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

হঠাৎ গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে একটা গেল গেল রব উঠেছিল। অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে- এমনসব কথায় রীতিমত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। বিদেশে বসে কিছু লোক, সেই আতঙ্কের আগুনে বাতাস দিয়েছে। ব্যাংকে টাকা নেই, ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে- এমন গুজবে ব্যাংক থেকে মানুষ টাকা তুলে নিচ্ছিল। শেয়ারবাজার তলানিতে গিয়ে ফ্লোর প্রাইসে আটকে গিয়েছিল।

ডলারের বাজারে অস্থিরতা, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি আর মুদ্রাস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষের দিশেহারা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই চাপটা এখনও আছে। নাক ভাসিয়ে টিকে আছে মানুষ। তবে যে সঙ্কটের কথা বলা হচ্ছিল, তার পুরোটা গুজব নয়, বরং অনেকটাই সত্যি। কিছু মানুষ অর্থনৈতিক সঙ্কটকে পুঁজি করে আরো আতঙ্ক ছড়িয়ে পানি ঘোলা করতে চেয়েছে, যাতে সুযোগমত মাছ শিকার করা যায়।


তবে শুধু বাংলাদেশ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতেই একটা প্রবল সঙ্কট চলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে বিশ্ব অর্থনীতি এক মন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। বাংলাদেশও বৈশ্বিক প্রবণতার বাইরে নয়। সাফল্যের সাথে করোনা মোকাবেলার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই চলছিল, তখনই যুদ্ধ এসে সে লড়াই থামিয়ে দেয়। ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে- অবস্থাটা অত নাজুক না হলেও, অর্থনীতি পেছনের দিকেই যাচ্ছিল। সবক্ষেত্রেই উত্থানটা অনেক কঠিন, পতনটা খুব সহজ। আর পতন যখন হয় তখন স্নোবল অ্যাফেক্টে আশপাশের অনেককিছু নিয়ে পড়ে। গুজব আর আতঙ্ক ছড়ায় দ্রুত। তাই তো ব্যাংকে টাকা নেই, এই গুজবে ধ্বস নামে শেয়ারবাজারে। তবে সরকারকে একটা ধন্যবাদ দিতেই হয়, অর্থনৈতিক সঙ্কটের বাস্তবতাকে তারা অস্বীকার করেননি, লুকিয়ে রাখেননি, কমিয়ে দেখাননি। বরং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার জনগণকে সতর্ক করেন, সাশ্রয়ী হতে বলেন, উৎপাদন বাড়াতে বলেন। এছাড়া আসলে আর কোনো উপায় নেই। সরকার প্রধান মুখে বলেই বসে থাকেননি। সাশ্রয়ের জন্য নানারকম নির্দেশনা দেয়া হয়, অফিস সময় পরিবর্তন করা হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো হয়, কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ ছাড় বন্ধ রাখা হয়, সরকারি কর্মচারিদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখা হয়, আমদানির রাশ টেনে ধরা হয়। পতন প্রবল হলে, এসব উদ্যোগ আসলে বালির বাঁধ। তবে সরকারের সব চেষ্টা ভেসে যায়নি। আমার ধারণা পতনের প্রাবল্যটা আটকানো গেছে। হাহাকারটা আর নেই, গেল গেল রবও আর শোনা যাচ্ছে না।

২০২১ সালের বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উঠেছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। গত বছরের মাঝামাঝি ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামলেই গেল গেল রব উঠেছিল। কমতে কমতে রিজার্ভ এখন ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। তারপরও আমি আশার আলো দেখছি।


কেন দেখছি, সে কথায় পরে আসছি। তার আগে উত্থান-পতনের গল্পটা একটু দেখে আসি। রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামা নিয়ে যারা শঙ্কিত, তাদের জন্য বলি, ২০০১ সালে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল এক বিলিয়ন ডলার। ঠিকই পড়েছেন– মাত্র এক বিলিয়ন ডলার।

২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের আমলে রিজার্ভ ছিল গড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখনও রিজার্ভ ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার। এরপর আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ভাবনা এবং সঠিক নীতি ও পরিকল্পনার সুবাদে রিজার্ভ বাড়তে থাকে। ৮ বিলিয়নকে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে তুলতে সরকারের লেগেছে ১২ বছর। আর ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩২ বিলিয়নে নামতে লেগেছে মাত্র দেড় বছর। আগেই যেমনটি বলেছি, উত্থান কষ্টকর হলেও, পতন হয় দ্রুতগতিতে। এই মুহুূূর্তে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৩২.৬৯ বিলিয়ন ডলার। আপনাদের আশ্বস্ত করার জন্য একটা তথ্য দেই- এই মুহূর্তে পাকিস্তানের রিজার্ভ ৩ বিলিয়ন ডলার, আর শ্রীলঙ্কার ২ বিলিয়ন।

পাকিস্তানের ৩ আর শ্রীলঙ্কার ২ বিলিয়ন ডলারের পাশে বাংলাদেশের প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভকে বেশ স্বস্তিদায়কই মনে হওয়ার কথা। কিন্তু ৪৮ থেকে নেমে ৩২ এর ঘরে এসেছে বলেই আমরা এখন ভয় পাচ্ছি। ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাওয়ার পর যেমন হাহাকার শুরু হয়েছিল, ৩০ বিলিয়নের নিচে নামলেও আবার প্যানিক অ্যাটাক হবে। তবে আমার ধারণা আপাতত পতন থেমেছে। রিজার্ভের মূল উৎস দুটি- রপ্তানি আর রেমিট্যান্স। আশার কথা এই দুই খাতেই ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মিলেছে। সাবধানতায় আমদানি ব্যয় কমানোর সুফলও মিলছে। আমদানি আর রপ্তানি ব্যয়ের ফারাকটাও কমে আসছে। এই সাফল্যটা ধরে রাখতে পারলে রিজার্ভ হয়তো আর কমবে না।

 

তবে সবচেয়ে বেশি আশা দেখছি আইএমএফ'এর ঋণে। সঙ্কটের আভাস পেয়েই সরকার ১০ বছর পর আইএমএফ'এর কাছে ঋণ চায়। এই ঋণ চাওয়া নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে, তাই হাত পাততে হচ্ছে। প্রথম কথা বাংলাদেশ আইএমএফ'এর কাছে ঋণ চেয়েছে, সহায়তা নয়। ঋণ পেতে যোগ্যতা লাগে। ব্যক্তি হিসেবে আপনি কোনো ব্যাংকে ঋণ চাইলে তারা কিন্তু যাচাই বাছাই করে আপনি পরিশোধে সক্ষম হলেই ঋণ দেবে। দেউলিয়া ব্যক্তিকে যেমন কেউ ঋণ দেয় না, দেউলিয়া দেশকেও দেয় না। দেউলিয়াদের করুণা করা যায়, সাহায্য করা যায়; ঋণ দেয়া যায় না। আর আইএমএফ'এর ঋণ পাওয়া যে কত কঠিন, সেটা সবাই জানেন। আইএমএফ দ্রুততম সময়ে ঋণ আবেদন মঞ্জুর করে প্রথম কিস্তির টাকাও দিয়ে দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আইএমএফ'এর প্রথম কিস্তির দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার যুক্ত হওয়ার পরেই রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ'এর কাছে বাংলাদেশ ঋণ চেয়েছিল ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, আইএমএফ মঞ্জুর করেছে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। অঙ্কটা হয়তো অনেক বড় নয়। তবে আইএমএফ'এর ঋণ মঞ্জুরের সাথে সাথেই একটা ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়েছে। বাংলাদেশ আইএমএফ'এর ঋণ পেয়েছে মানেই বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণিত। অন্য উন্নয়ন সহযোগীরাও এখন বিনা প্রশ্নে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবে। আতঙ্ক কেটে এখন বইবে সুবাতাস।

আপাতত পতন হয়তো ঠেকানো গেছে। তবে আবার অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে অনেক কষ্ট করতে হবে। ঋণ দেয়ার আগে আইএমএফ যেমন যাচাই করেছে, তেমনি কিছু শর্ত (সরকার বলে পরামর্শ) দিয়েছে। ঋণ ঠিকঠাকমত পেতে শর্তগুলো মানতে হবে।

আশার কথা হলো, শর্তগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও টেকসই করবে। অর্থনীতির সুবাতাসটা ধরে রেখে আবার উত্থানের ধারায় ফিরতে হলে দ্রুত কয়েকটি কাজ করতে হবে। প্রথম কথা হলো, দেশব্যাপী সাশ্রয়ের যে চেষ্টা তা অব্যাহত রাখতে হবে, আমদানি ব্যয় কমিয়ে রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। ঋণখেলাপী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে নামতে হবে। আইএমএফ যদিও খেলাপী ঋণ ১০ শতাংশে নামাতে বলেছে। কিন্তু চাইলে সেটা আরো কমানো সম্ভব। গত শনিবার ঢাকায় এক সেমিনারে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেছেন, 'সাধারণ মানুষ ব্যাংকে যে আমানত রাখছেন, তার একটা অংশ নিয়ে যাচ্ছেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। নিয়ে তা ফেরতও দিচ্ছেন না। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যা ব্যাংক খাতে একটা বড় সমস্যা।' একই সেমিনারে আরেক অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘বহু দশক ধরে দেখেছি, কাগজে সই করলেই কি খেলাপি ঋণ কমে যাবে? এটা তো সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক ব্যাপার।'


ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আসল কথাটি বলে দিয়েছেন, আইএমএফ'এর শর্তের কাগজে সই করলেই খেলাপী ঋণ কমবে না। এটা সম্পুর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আজকে সিদ্ধান্ত নিলে এক মাসের মধ্যে খেলাপী হওয়া ১ লাথ ৩৫ হাজার কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব। কয়েকদিন আগে অর্থমন্ত্রী সংসদে ঋণখেলাপীদের তালিকা দিয়েছে। তালিকা ধরে ধরে জিরো টলারেন্সে খেলাপী ঋণ আদায় করতে নামলেই হবে।

ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়ে আপনি দেশে-বিদেশে বাড়ি কিনবেন, বছরে বছরে গাড়ির মডেল বদলাবেন, আয়েসী জীবন-যাপন করবেন, সমাজের উচুতলায় চলাফেরা করবেন; এটা চলতে পারে না। হয় আপনি ব্যাংকের টাকা ফেরত দেবেন, নইলে ব্যাংক আপনাকে জেলে পুড়বে এবং বাড়ি-গাড়ি বিক্রি করে টাকা আদায় করবে। আরেকটা বড় কাজ হলো, রাজস্ব আয় বাড়ানো। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত এই অঞ্চলের সবচেয়ে কম। সুযোগ আছে, এটাকে অনেক এগিয়ে নেয়ার। ১৮ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ ট্যাক্স দেয়, এটা অবিশ্বাস্য। প্রথম কথা হলো, ট্যাক্স সম্পর্কে মানুষের ভীতি দূর করতে হবে। করজাল বড় করতে হবে। একটা দেশের এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় অবলম্বন রাজস্ব আয়। খালি বড় বড় ভবন বানালেই হবে না। রাজস্ব বোর্ডকে সৎ, দক্ষ ও আধুনিক করতে হবে।

মোদ্দা কথা হলো, অর্থনৈতিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। নইলে অর্থনীতিতে যে সুবাতাস বইছে, তা আবার ঝড় হয়ে সব তছনছ করে দিতে পারে।

 

লেখক:প্রভাষ আমিন    
 বার্তাপ্রধান, এটিএন নিউজ।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার