ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৫০

সারাহ ইসলামের অঙ্গদান,মৃত্যুহীন প্রাণ করে গেলে দান

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩  

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বলেছিলেন,“এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ, মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান”। ছোটবেলায় এই কথাটির ভাবসম্প্রসারণ পড়েছিলাম।

পরীক্ষার খাতায় লেখার জন্য বুঝে না বুঝে শিখেছিলাম এ দুটি লাইন। কিন্তু তখনও অনুধাবন করিনি আসলেই মৃত্যুর মাধ্যমে আবার মৃত্যুহীন প্রাণ দান করে কেমন করে? আমি কবি নই, সাহিত্যিকও নই। তাই অন্যের সৃষ্ট ভাবের মাধ্যমেই নিজের ভাবকে প্রকাশ করতে হয়।

 সারাহ’র মায়ের মুখেই জানা গেলো সে ছবি আঁকতে পছন্দ করতো। দারুণ দারুণ সব চিত্র সে রেখে গেছে। তার স্বপ্ন ছিল সে একদিন বড় কিছু হবে। কিন্তু লড়াই সংগ্রাম করে শেষ পর্যন্ত জীবনের কাছে হেরে গেলেও গোটা মানবজাতির জন্য জিতে গেল মেয়েটি

সারাহ ইসলাম নামের একটি ছোট মানুষ। অথচ কত বড় একটি উদাহরণ সৃষ্টি করে রেখে গেল। ব্রেইনে টিউমারসহ মাল্টি অর্গান ডিজিজে আক্রান্ত ছিল সারা। ছোটবেলা থেকেই রোগাক্রান্ত এই ছোট মানুষটির মনের জোর অনেকের জন্য লড়াইয়ের হাতিয়ার হতে পারে।

সারাহ’র মায়ের মুখেই জানা গেলো সে ছবি আঁকতে পছন্দ করতো। দারুণ দারুণ সব চিত্র সে রেখে গেছে। তার স্বপ্ন ছিল সে একদিন বড় কিছু হবে। কিন্তু লড়াই সংগ্রাম করে শেষ পর্যন্ত জীবনের কাছে হেরে গেলেও গোটা মানবজাতির জন্য জিতে গেল মেয়েটি।


ঘটনা হয়তো অন্যান্য দেশের জন্য কিছুই নয় কিন্তু বাংলাদেশের মত সামাজিক বাস্তবতায় একজন নারী যার বয়স এখনও সিদ্ধান্ত নেবার মত জায়গায় যায়নি সে কিনা এমন একটি কাজ করে ফেলতে পারলো? সংবাদটি দেখার পর থেকে ভাবছিলাম প্রতিটি মুহূর্ত সে কেমন করে কাটিয়েছে। যত জানছি তত অবাক হচ্ছি।

কতটা পরিকল্পিত মৃত্যু সে চেয়েছিল আর কতটা কাঙ্খিত করে ফেলা যায় মৃত্যুর মত একটি কঠিন বাস্তবতাকে। সবকিছু ছেড়ে চলে যাবার প্রস্তুতি মানেইতো নিজেকে ভেঙ্গে চুড়ে ফেলা। মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গ, প্রত্যঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন কাজ আছে। আবার প্রতিটি প্রতিটির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িতও বটে।

এইতো জীবনের সার্থকতা। আমরা কত কথা বলি। মানবজনমের সার্থকতা খুঁজতে খুঁজতে কত কবি সাহিত্যিক চলে গেছেন। কত মোটিভেশনাল কথা শুনি। জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো। এর সবইতো মানুষ হিসেবে জন্ম নেয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার। এই যে বেঁচে আছি এরইবা কারণ কী হতে পারে? কেবল বেঁচে থাকার জন্যই যদি বেঁচে থাকা হয় তাহলে আর মানুষ আর অন্যান্য জীবের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

ব্যক্তিগতভাবে আমিও আমার জীবনের স্বার্থকতা খুঁজছিলাম। কী করলে আমার আত্মার তৃপ্তি আসতে পারে সেই গবেষণায় দিনরাত কাটাই আমরা। কারও কাছে অঢেল ধনসম্পদের মালিক হওয়াতেই তৃপ্তি, কারও কাছে যশ, সুনাম বা খ্যাতি অর্জনে তৃপ্তি। কারও কাছে আবার সেবাতেই তৃপ্তি, কেউ বা ধ্যানেই মুক্তি খুঁজে। আর যে মানুষটি জন্মেছেই অসুস্থতা নিয়ে সে মানুষটির আরাধ্য থাকে সুস্থ একটি জীবন। আসলে মানুষের সাধ, সাধ্য আর কর্মের মাঝে সংযোগ করাটাই হচ্ছে সারাজীবনের একটা টার্গেট।

এই যে ২০ বছরের একটা মানুষ এতো বড় একটা ইতিহাস তৈরি করে রেখে গেলো এর থেকে আমাদের শিখার আছে অনেক কিছু। প্রথমেই বলবো সাহস। এইটুকু একজন মানুষ রোগের সাথে লড়াই করে যে ক্লান্ত হয়ে নিস্তেজ হয়ে যাবার কথা কিন্তু না রোগ তাকে নিস্তেজ করতে পারেনি। বরং সে মৃত্যুকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বিজয়ীর হাসি নিয়েই পৃথিবী ছেড়ে গেছে।

 

কিডনি প্রতিস্থাপনের পাশাপাশি তার কর্নিয়াও দেয়া হয়েছে আরও দুজন মানুষকে। কিডনি দুইটি নিয়ে বেঁচে উঠেছে শামীমা আক্তার ও হাসিনা আক্তার নামের আরও দুজন নারী। কর্নিয়া দেয়া হয়েছে সুজন ও ফেরদৌসী আক্তার নামের দুজন ব্যক্তির চোখে। এই যে বিষয়টা, সাদা চোখে হয়তো খুব বড় কোন কাজ নয় কিন্তু গভীরে গিয়ে যদি কেউ সত্যিকারের অর্থে উপলব্ধি করতে চায় তাহলে চিন্তার জগতে অনেক বড় একটি পরিবর্তন নিয়ে আসবে এটা নিশ্চিত।


সবাই চায় কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে। কিন্তু আসলেই কি সেই বেঁচে থাকা সত্যিকার অর্থে বেঁচে থাকা হয়? মানবদেহতো মরে গেলেই অকার্যকর হয় পড়ে। এই অকার্যকর দেহকে সচল করে রেখে যাওয়া যায় আরেকটি দেহে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে। অনেকেই আছে যারা নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সমস্যা নিয়েই বেঁচে থাকে।

নিজ থেকে মরে যাওয়াতো আর সম্ভব নয় কিন্তু সুস্থ অঙ্গ নিয়ে মরে যাওয়া মানুষটির সেই অঙ্গটি যদি চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিস্থাপন করা যায় তাহলেই জীবনের চাকাটা ঘুরে যায়। যার চোখ নেই তার কাছে দুনিয়াটাই অন্ধকার, যার কিডনি নেই তার কাছে বেঁচে থাকা মানেই মরে যাওয়া।

সামান্য অসুস্থতা যেখানে আমাদেরকে কাতর করে তুলে সেখানে গোটা শরীরের ব্যথা নিয়ে সারাহ রেখে গেছে তার অনেক সৃষ্টি। সারাহ’র পরিবারের কথা বলতেই হবে। মেয়েকে সাহস দিয়ে গেছেন প্রতিনিয়ত। এমনিতে কন্যা সন্তান তার উপর অসুস্থ কিন্তু পরিবারের সদস্যরা পাশে থেকেছেন নিয়ম করেই। ফেলে দেয়নি মেয়েটিকে।

যেদিন ফাইনালি জেনে গেলো সারাহ’র জীবনপ্রদীপ নিভে যাবে অচিরেই তখনই ফাইনাল করে ফেললো সে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে অন্যের মাঝে। যেমন কথা তেমন কাজ। মেয়ের মৃত্যুর সাথে সাথেই যে মা সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয় তিনিতো সেরা মা। সেরা মানুষ। মৃত্যু যখন অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায় তখন আর দ্বিধা কেন?

সকল দ্বিধাকে পিছনে ফেলে সারাহ ইসলাম রবীন্দ্রনাথের সেই কথাকেই বাস্তব করে দিয়ে গেল। মরণেই সে মৃত্যুহীন হয়ে রইলো সবার কাছে।

 

লেখক: লীনা পারভীন    
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, কলামিস্ট।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার