ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৫৫

যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩  

ছেলেবেলায় আমার অ্যাজমার সমস্যা ছিল। ভয়ঙ্কর শ্বাসকষ্ট হতো। এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য অ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক, পানি পড়া, দোয়া, তাবিজ- কোনো চেষ্টাই বাদ যায়নি। কোনটাতে কাজ হয়েছে জানি না। এক পর্যায়ে আমি ভালো হয়ে যাই। কিন্তু ঢাকায় আসার কয়েক বছর পর থেকে অ্যাজমা আবার ফিরে এসেছে। এখন আমাকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, ইনহেলার সাথে রাখতে হয়।

একসময় শীতকাল আমার খুব প্রিয় ছিল। এখনও প্রিয়। তবে ঠান্ডাটা সইতে পারি না। শীতের সময় খোলা আকাশের নিচে গেলেই সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্টে কাবু হয়ে যাই। যেতে হলে কান-মাথা ঢেকে যেতে হয়। শুধু খোলা আকাশের নিচে যাওয়া নয়, এই শুকনা মৌসুমটাই আবার খুব কষ্টে কাটে। ঠান্ডা পানিও খেতে পারি না, বরফ তো অনেক দূরের কথা। যদিও আইসক্রিম এবং বরফ আমার খুবই প্রিয়। কিন্তু একদিন বরফ খেলে আমাকে তিনদিন শয্যাশায়ী থাকতে হয়।

 কেউ মারা গেলে আমরা লিখি, শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বেঁচে থাকতে, মৃত্যুর আগে নির্মল বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নেওয়া একজন মানুষের মৌলিকতম চাওয়া। যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। আমরা আশা বাঁচিয়ে রাখতে চাই নির্মল বাতাসে। আর বাতাস ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার, বিশেষ করে রাষ্ট্রের।


বছর দশেক আগে একবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সুযোগ হয়েছিল। আমার লাগেজের একটা বড় অংশ ঠাসা ছিল নানারকম ওষুধে, বিশেষ করে অ্যাজমার ওষুধ। একমাত্র সফরে মোট এক মাস যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম, ঘুরেছিলাম অন্তত ৭টি স্টেট।

কোথাও কোথাও মাইনাস তাপমাত্রায়ও থেকেছি। যুক্তরাষ্ট্রে দেখেছি অধিকাংশ মানুষই আগে বরফ দিয়ে গ্লাস ভর্তি করে, তারপর তাতে পছন্দের পানীয় নেয়। প্রথম দু-একদিন ভয়ে ভয়ে দূরে থাকলেও পরে আমিও ধীরে ধীরে বরফ মেশাতে শুরু করলাম।

তারপর বরফ খাওয়া, মাইনাস তাপমাত্রায় থাকা, তুষারপাতে লুটোপুটি সবই করেছি। কিন্তু আমার ঠান্ডার ওষুধের বাক্স খুলতেই হয়নি। সফরের শেষদিকে নিউইয়র্কে এক বন্ধুর সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেই প্রথমে মজা করে বললেন, এখানেই থেকে যাও। আমেরিকার বাতাস তোমাকে মানিয়ে গেছে।

পরে সিরিয়াস কণ্ঠেও একই কথা বললেন, পার্থক্যটা আসলে বাতাসে। ঢাকার বাতাস দূষিত, আর আমেরিকার বাতাস পরিষ্কার। নির্মল বাতাসে শ্বাস নেওয়ার আনন্দটা পেয়েছি বটে, তবে দেশের বাইরে গিয়ে থেকে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার কখনো নেই বলে, এই দূষিত বাতাসের প্রিয় ঢাকায়ই ফিরে এসেছি। কষ্ট করে শ্বাস নিয়ে এই শহরেই আছি, এখানেই শেষ নিশ্বাসটা নিতে চাই।

বক্ষ্যব্যাধির ডাক্তারের কাছে যখন যাই, তারা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। আমি যখন দাবি করি, খুব ভালো আছি, তখনও তাদের মানদণ্ডে আমি পুরোপুরি ভালো থাকি না। ডাক্তারদের ব্যাখ্যা হলো, ছেলেবেলা থেকে অ্যাজমার কারণে পরিপূর্ণ শ্বাস নেওয়ার আনন্দটা আমি কখনো পাইনি। তাই মোটামুটি শ্বাস নিতে পারলেই নিজেকে অনেক ভালো মনে হয়। একজন পরিপূর্ণ সুস্থ মানুষের বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার আনন্দটা আসলে আমি জানিই না। শুধু আমি নই, ঢাকার অনেক মানুষই নির্মল বাতাসে শ্বাস নেওয়ার আনন্দটা পান না। চারপাশে অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টের প্রচুর রোগী।

এজন্য মূল দায় যে, ঢাকার দূষিত বাতাসের, সেটা জানতে গবেষক হতে হয় না। তবে গবেষকরা বলছেন, ঢাকার বাতাস এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দূষিত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়ুমান যাচাইয়ের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়ালের বায়ুমান সূচক একিউআই অনুযায়ী, গত ১০ জানুয়ারি সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ঢাকায় বায়ুদূষণের গড় মাত্রা ছিল ৪৩৯।

দূষিত বায়ু মানের বিবেচনায় ঢাকার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নেপালের কাঠমান্ডুর দূষণের গড় মাত্রা ছিল ঢাকার অর্ধেকেরও কম-১৯৫। তৃতীয় স্থানে থাকা আফগানিস্তানের কাবুলের গড় মান ১৭৭, পাকিস্তানের লাহোরের বাতাসের মানও ১৭৭ একিউআই।

একসময় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দিল্লির দূষণের মাত্রা সেদিন ছিল ১৭৫। এয়ার ভিজ্যুয়াল বাতাসের মানকে মোট ছয়টি স্কেলে পরিমাপ করে। এগুলো হচ্ছে- গুড, মডারেট, আনহেলদি ফর সেনসেটিভ গ্রুপস, আনহেলদি, ভেরি আনহেলদি এবং হেজার্ডাস। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঢাকার বাতাস হেজার্ডাস মানে ‘বিপজ্জনক’র উপাধি পেয়েছে। এই ঢাকায় শ্বাস নেওয়া মানেই দ্রুতগতিতে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া।

করোনার সময় আমরা মাস্ক ব্যবহার করেছি। ঢাকার বাতাসের যে অবস্থা, তাতে আমাদের আসলে বছরজুড়ে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। আপনি ধূমপায়ী না অধূমপায়ী, আপনি গরিব না ধনী তাতে কিছুই যায় আসে না। ঢাকার বাতাস সবার জন্য সমান দূষিত। যারা ঘরে-বাইরে-অফিসে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাতাসে শ্বাস নিতে পারেন; তারা হয়তো কিছুটা রক্ষা পান।

ঢাকার বাতাস যে দূষিত, সেটা আসলে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া খালি চোখেই দেখা যায়। আসলেই দেখা যায়। সূক্ষ্ম ধূলিকণা নয়, ধুলা আর ধোঁয়ায় আমাদের চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়। দ্রুত বর্ধমান ঢাকার চাহিদা মেটাতে ঢাকার চারপাশ ঘিরে রয়েছে ইটভাটার সারি। সেই ধোঁয়া অবাধে ঢাকার বাতাসকে দূষিত করছে।

ভাঙ্গাচোরা গাড়ির কালো ধোঁয়া আমাদের দৃষ্টিকেই আচ্ছন্ন করে রাখে। আর আছে বিরতিহীন নির্মাণযজ্ঞের সৃষ্ট ধুলা-বর্জ্য। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটির মতো মেগা প্রকল্প তো আছেই, আছে নিত্যদিনের নির্মাণযজ্ঞও। রাস্তার পাশের সবুজ পাতা কালো হয়ে যায় ধুলা আর ধোঁয়ায়।

আমি আসাদ এভিনিউর যে বাসায় থাকি, তার পাশের তিনতলা ভবনটি ভাঙা হচ্ছে। ভোর থেকে শব্দদূষণ তো আছেই, আছে ধুলার মেঘ। সব দরজা-জানালা বন্ধ করেও যার অত্যাচার থেকে বাঁচা যাচ্ছে না।

ঘরজুড়ে ধুলার আস্তরণ পড়ে দিনভর। ভবন নির্মাণে চারপাশ ঢেকে রাখার নিয়ম থাকলেও তা কেউ মানে না। রাস্তার পাশে পানি ছিটানোর ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয় না। ঘর থেকে বেরুলেই আপনি দূষিত বায়ুর কবলে পড়বেন। এমনকি ঘরে থেকেও পুরোপুরি রেহাই পাবেন না।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছর ঢাকায় বায়ুদূষণের কারণে অন্তত ২৫ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। এই হার করোনার চেয়েও বেশি। অথচ করোনা ঠেকাতে আমরা যত বিনিয়োগ করেছি, বায়ুদূষণ নিয়ে আমাদের তত ভাবনা নেই। এটাকে আমরা নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছি। অথচ শ্বাস নেওয়াই আসলে বেঁচে থাকা।

কেউ মারা গেলে আমরা লিখি, শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বেঁচে থাকতে, মৃত্যুর আগে নির্মল বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নেওয়া একজন মানুষের মৌলিকতম চাওয়া। যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। আমরা আশা বাঁচিয়ে রাখতে চাই নির্মল বাতাসে। আর বাতাস ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার, বিশেষ করে রাষ্ট্রের।
২১ জানুয়ারি, ২০২৩

 

লেখক: প্রভাষ আমিন    
বার্তাপ্রধান, এটিএন নিউজ।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার