ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
২৫১

বালাগঞ্জের ব্যতিক্রম গ্রাম চান্দাইরপাড়া

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

ওলিকুল শিরোমনি হযরত শাহজালালের (রাহ.) অন্যতম সফরসঙ্গী মিয়া চান্দাই (রাহ.) ও মিয়া রাস্তি’র (রাহ.) নামে নামকরণ করে ১৯৩৪ সালে গ্রামবাসীরা একটা ঈদগাহ নির্মাণ করেন। ঈদগাহের পাশেই স্থাপিত হয় একটি মক্তব। এরপর একে-একে সেখানে গড়ে ওঠে হাফিজিয়া মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় ও কিন্ডার গার্টেন স্কুল। একটির সাথে আরেকটির দেয়াল ঘেঁষা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্থাপনের পর থেকে বিস্তীর্ণ জনপদে শিক্ষার দ্যুতি ছড়াচ্ছে। এক কথায় বাংলার চিরায়ত সবুজের বুকে প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে ‘একখন্ড আলো’। নির্দিষ্ট সীমানায় চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান যে কারোর-ই নজর কাড়বে।

গ্রামের শান্ত পরিবেশে আঁকাবাঁকা মেঠোপথ দিয়ে গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে পিচঢালা সড়কের দু’পাশে সারি-সারি বাড়ি আর বৃক্ষের রাজত্ব। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের চান্দাইরপাড়া গ্রামের এমন অপরূপ মাধুর্য্যে আবহমান গ্রাম বাংলার মনকাড়া রূপ সৌন্দর্যের চিত্র ফুটে ওঠেছে।  গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে গড়ে ওঠা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন মফস্বলে ‘আলোর বাতিঘর’। এ গ্রামটি এলাকার মানুষের কাছে ‘শিক্ষাপল্লী’ নামে অত্যধিক পরিচিতি লাভ করেছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই গ্রামের অধিবাসীদের পূর্বসূরিরা প্রতিদিনই জীবন যুদ্ধে লড়তেন। মাটির সঙ্গে লড়ে সোনা ফলাতেন। শ্রমে-ঘামে চলত জীবন সংসারের চাকা। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে যখন সব কিছু বদলে যাচ্ছিল তখন গ্রামীণ জনপদের মানুষগুলো তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ আর জীবন- জীবিকা নিয়ে ভাবলেন। এই ভাবনার শেষ নেই। শুধু বংশ পরম্পরায় পৈত্রিক পেশার উত্তরসূরি হলেই কী হবে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। সে জন্য হতে হবে শিক্ষিত। সন্তানদের স্কুল-কলেজে পাঠিয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সন্তানদের দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তর করতে হবে। সেই প্রত্যয় নিয়ে প্রবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামে একে-একে গড়ে তোলা হয় চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বেচ্ছায় এলাকাবাসীর ভূমিদান,  প্রবাসীদের সহযোগীতা ও পরবর্তী সময়ে সরকারি পৃষ্টপোষকতায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রযাত্রা এলাকার সুনাম কুড়াচ্ছে।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ১৯৭৯ সালের পহেলা জানুয়ারি ঈদগাহের পূর্ব দিকে চান্দাইরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। ১৫৩ শতক ভ‚মির উপর নির্মিত বিদ্যালয়ে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ৪টি ভবন রয়েছে। যদিও শিক্ষার্থীর অনুপাতে পর্যাপ্ত ভবনের অভাব রয়েছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা সাড়ে ৬শ, ১৫ জন শিক্ষকের মধ্যে ১১ জন এমপিওভুক্ত।

বিদ্যালয়ের সভাপতি বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বোয়ালজুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিক্ষানুরাগী আনহার মিয়া জানালেন- বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায় এলাকার মানুষের অবদান অনস্বীকার্য। যারা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছিলেন তাদের মধ্যে আজ অনেকেই বেঁচে নেই। সর্বোপরি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিদ্যালয়টির অগ্রযাত্রায় এলাকাবাসীর সহযোগীতা এবং ওই এলাকার প্রবাসীদের দান-অবদান রয়েছে।

বিদ্যালয়টিকে উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় উন্নিতকরণ করা হলে এ অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনে যুযোপযোগী ভ‚মিকা রাখবে। পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির যুগে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান- বিজ্ঞানেও পারদর্শী করে তুলতে বিদ্যালয়ে ভোকেশনাল শাখা চালু করার বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশীল চন্দ্র নাথ বলেন, বিদ্যালয়ে আরো ভবনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পর্যাপ্ত ভবন না থাকায় শ্রেণি কক্ষ সংকটে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শাখা পৃথকীকরণ করা যাচ্ছে না। এলাকার কয়েকজন প্রবাসী ভবন করে দেয়ার বিষয়ে তারা আমাদেরকে আশ্বস্থ করেছেন। 

উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে অবস্থিত চান্দাইরপাড়া সুন্নিয়া হাফিজিয়া ফাজিল মাদরাসা। ১৯৮০ সালে হিফজ বিভাগ দিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া এই মাদরাসার ২শ শতক ভ‚মির উপরে ৭টি ভবন রয়েছে। দাখিল, আলিম ও ফাজিল শাখায় প্রায় ৬শত শিক্ষার্থীর পাঠদান করাচ্ছেন ২১জন শিক্ষক। এর মধ্যে ১৬জন এমপিওভুক্ত হিসেবে আছেন। মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৬ সালে দাখিল শাখা চালুর পর ৮৭সালে দাখিল শাখা এমপিওভুক্তকরণ করা হয়। এরপর ২০০৭সালে আলিম ও ২০১৭ সালে ফাজিল শাখা চালু করা হয়। প্রায় ৬০লক্ষ টাকা ব্যয়ে মাদরাসা ভবন ঘেঁষা দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মূলভবনের সামনে থাকা পুকুরটি মাদসারার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।

মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মো. ছরওয়ারে জাহান বলেন এমপিওভুক্তকরণের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও অজানা কারণে আলিম শাখা এমপিভুক্ত করা হয়নি। আলিম ও ফাজিল শাখা এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বাৎসরিক প্রায় ১২ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এছাড়া ৩শ শিক্ষার্থীর ধারণ ক্ষমতার একটি ছাত্রাবাস করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। মাদরাসার উন্নয়নে যে কেউ আগ্রহী হয়ে এক লক্ষ টাকার অনুদান দিলে তিনি আজীবন দাতা সদস্য হওয়ার সুযোগ পাবেন।

উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদরাসার মধ্যস্থানে অবস্থিত গ্রামের প্রাচীন শিক্ষা বিদ্যাপীঠ চান্দাইরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ের ভ‚মির পরিমাণ ৪৫ শতক। ২৩০জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাচ্ছেন ৫জন শিক্ষক। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রউফ জানালেন- ‘২০১৬, ১৭ ও ১৮ সালের পিইসি পরীক্ষায় বিদ্যালয়টি শতভাগ ফলাফল অর্জন করে। এর মধ্যে ১৬ সালে ৮টি এ প্লাসসহ ট্যালেন্টপুলে ৩টি ও ১টি সাধারণ বৃত্তি লাভ করে। ২০১৮সালে ৩টি এ প্লাসসহ ট্যালেন্টপুলে ১টি ও সাধারণ ১টি বৃত্তি লাভ করে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকে এবং বিদ্যালয়ের ঠিক সামনে রয়েছে রেঁনেসা কিন্ডারগার্টেন স্কুল। কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল আব্দুল হাফিজ জুয়েল জানালেন-২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে নার্সারি থেকে ৫ম ৬টি শ্রেণিতে প্রায় শতাধিক শিশু অধ্যয়ন করছে। ফলাফলের হারও সন্তোষজনক।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একাধিক শিক্ষার্থী সাথে কথা হয়। তারা বলে- আমাদের ভালই লাগে। স্যারদের কথা মত আমরা সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এক সাথে যাওয়া-আসা করি। টিফিনের ছুটির সময় সবাই মিলে খেলাধুলা ও আনন্দ করি।
চান্দাইরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ শিক্ষার্থী সামসুল ইসলাম ও সুয়েব আহমদ বলেন, পাশাপাশি চারটি প্রতিষ্ঠান থাকায় মনে হতো না এটা কোনো গ্রাম এলাকার স্কুল তাই নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল থাকতাম।

প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শিক্ষকরা বলেন- আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো পাশাপাশি থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। তারা মিলেমিশে দলবেঁধে আসা-যাওয়া করে আমাদেরও ভাল লাগে। যোহরের নামাজের সময় চারটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা একই মসজিদে নামাজ আদায় করেন। এতে আমাদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনটুকু অটুট রয়েছে। পাশাপাশি আমরা জাতীয় দিবসগুলোর কর্মসূচি একসাথে পালন করি। এক সাথে সবাই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাই। আমরাও শিক্ষকরাও মনে সবাই যেন একই প্রতিষ্ঠানের সহকর্মী।
 

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার