মোগল পুরাকীর্তি ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙা ঠেকাল পরিবেশ আন্দালন

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার মোগল পুরাকীর্তি ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙা স্থগিত করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি। গতকাল বুধবার সেতুটি ভাঙার সময় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেটের কয়েকজন সদস্য সেখানে গিয়ে বাধা দেন; পরে এলজিইডি কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়।

সেতুটি অক্ষতভাবে সংরক্ষণ এবং ভেঙে ফেলা কিছু অংশ পুনরায় নির্মাণেরও দাবি জানান বাপার সদস্যরা।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, সেতুর বেশ খানিকটা অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। যেহেতু সবাই সেতুটি রক্ষার আহবান জানিয়েছেন তাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আপাতত ভাঙার কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

সেতুটি পরিদর্শন শেষে বাপার সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, সেতুটি রক্ষার বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত সেতুর ভেঙে ফেলা অংশ সংস্কার করে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সেতুটি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।

“মোগল আমলের স্থাপত্য রক্ষায় সেতুটি সংরক্ষণ করা উচিত। প্রয়োজনে পুরোনো সেতুর পাশে নতুন আরেকটি সেতু নির্মাণ করা যেত; কিন্তু তা না করে সরকারি উদ্যোগে ঐতিহ্য ধ্বংসের এমন প্রক্রিয়া দুঃখজনক ও হতাশার।”

এই সেতু ভাঙায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আজ বেলা সাড়ে ১১টায় বাপার প্রতিনিধিদলের সদস্যরা গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাউশা এলাকার দেওরভাগা খালের ওপর নির্মিত দেওয়ানের পুল দেখতে যান। এ সময় সেতু ভাঙার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের তারা সেতুটি ভাঙতে নিষেধ করেন তারা।

প্রতিনিধিদলে সংগঠনটির সহসভাপতি মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী ও সদস্য গোলাম সোবহান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে বাপার সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী জানান, প্রায় ২০০ বছর আগে সিলেটের তৎকালীন দেওয়ানের (রাজস্ব কর্মকর্তা) নির্দেশে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ এলাকার শ্রী চৈতন্যদেবের বাড়িমুখী সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এ সময় লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের দেওরভাগা খালে একটি সেতুও নির্মাণ করা হয়। সেতুটিই ‘দেওয়ানের পুল’ নামে পরিচিত।

সেতু পুনর্নির্মাণ ও প্রশস্তকরণ করতে গিয়ে ছয় দিন আগে পুরোনো সেতুটি ভাঙার কাজ শুরু হয় বলে তিনি জানান।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা যায়, সেতুটি ভারী যানবাহন বহনের ক্ষমতা হারানোর কারণে পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি। পুরোনো সেতুটির দৈর্ঘ্য ছিল ২০ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। একই জায়গায় ৯৯ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩২ ফুট প্রস্থের নতুন সেতু বানানো হবে। এ জন্য ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে সেতুর সংযোগ সড়কটিও প্রশস্ত করা হবে।