শুরুতেই সিলেটে লোডশেডিংয়ের শিডিউল বিপর্যয়

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে টালমাটাল অবস্থা গোটা বিশ্বের। ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পর বাংলাদেশও এর উত্তাপ অনুভব করতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আশংকায় সরকার সতর্ক। তাই এখন থেকেই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং।

মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির শুরুতেই কিন্তু সিলেটে শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তাও সামান্য না। মারাত্মক!
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মঙ্গলবারের পর তারা পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে নতুন করে লোডশেডিংয়ের সময় নির্ধারণ হতে পারে।

ভবিষ্যতে যাতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সংকটে না পড়ে সেজন্য মঙ্গলবার থেকে সরকার অনেকগুলো পদক্ষেপ কার্যকর করতে শুরু করেছে। তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো, রাত ৮টার পর মার্কেট বিপণীবিতান দোকানকোটা বন্ধ রাখা, এলাকাভিত্তিক এক থেকে দুই ঘন্টা লোডশেডিং, সরকারি- বেসরকারি দফতরে এসি ব্যবহার না করা- ইত্যাদি।

মঙ্গলবার রাত ৮টার পর থেকে সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় জেলা প্রশাসন মার্কেট দোকান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধে অভিযান শুরু করেছে। প্রথম দিনে কেবল সতর্ক করে দেয়া হলেও আগামীতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা আদায়ের কথা ঘোষণা করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এদিকে মঙ্গলবার থেকেই সরকার দেশের বিভিন্ন এলাকায় এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করতে শুরু করেছে। তবে সিলেট মহানগরীতে এই লোডশেডিং সরকারের শিডিউল অনুযায়ী হচ্ছেনা। বরং শিডিউলের বাইরেও প্রচুর সময় লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা সইতে হয়েছে নগরবাসীকে।

যেমন, নগরীর অন্যতম অভিজাত এলাকা উপশহরের কথাই ধরুন। এ এলাকায় সরকারি শিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং শুরু হওয়ার কথা রাত সাড়ে ১০টায়। অথচ সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকেই বিদ্যুৎ চলে গিয়ে ভয়ঙ্কর অন্ধকারে ডুবে যায় উপশহর এলাকা।

আবার নগরীর ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই এলাকায় দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত অন্তত ৭ থেকে ৮ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করেছে। প্রতিবার অন্তত ১০ থেকে ৪০ মিনিট সাপ্লাই এলাকা বিদ্যুৎহীন ছিল।

সিলেট মহানগরীর অন্যান্য এলাকায়ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি শিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং হচ্ছেনা। বরং শিডিউলের বাইরে এমনভাবে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে যে, মনে হচ্ছে এখাতে চরম অচলাবস্থা শুরু হয়েছে।

এ অবস্থায় সচেতন নাগরিকবৃন্দ কিংকর্তব্যবিমুঢ়। তাদের কথা হচ্ছে, এমনটাই যদি হবে তাহলে এমন ঘোষণা দিয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের ঢাক-ঢোলইবা পেটানোর কি দরকার ছিল?

এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের বড় কর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের অনেকেই সন্তোষজনক জবাব দিতে পারছেন না।

উপশহর এলাকার একাধিক বাসিন্দা রাত সাড়ে ১০টার বদলে সন্ধ্যা ৭টায় লোডশেডিং শুরুর কারণ জানতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস ই আরেফিনের সাথে যোগাযোগ করেছেন। বারবার কল দিয়ে অনেকে ব্যর্থ হলেও কেউ কেউ কথা বলেছেন। তবে তার কাছ থেকে তেমন সন্তোষজনক কোন জবাব পান নি তারা। সিলেট প্রতিদিনে কল দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছেন অনেক নাগরিক।

রাত ১০টার পরিবর্তে উপশহরে সন্ধ্যা ৭টাতেই লোডশেডিং শুরুর কারণ জানতে চাইলে কেউ কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।  

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, আসলে আমরা শিডিউল ঠিক রাখতে পারছিনা। সেটা ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি প্রথম দিনে। আর এই এক দু’ ঘন্টার লোডশেডিংয়ে খুব একটা উপকার হবে কিনা তাও এখনো নিশ্চিত নই আমরা। তবে আজ প্রথম দিনের বিস্তারিত হিসাবে নিকেষ শেষে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পুরো বিষয়ে রিপোর্ট পাঠানো হবে এবং আশা করছি সে অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

সরকার নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং চলবে, না তার সময় আরও বাড়ানো হবে- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মঙ্গলবারের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ শেষে সেটা বুঝা যাবে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।