দক্ষিণ সুরমা কলেজে খুন হওয়া রাহাতের পরিবারের পাশে প্রধানমন্ত্রী

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা কলেজ গেটে নৃশংসভাবে খুন হওয়া কলেজছাত্র আরিফুল ইসলাম রাহাতের (১৮) পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিশেষ আর্থিক সহায়তার চেক আজ শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাহাতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সকাল সকাল ১০টায় পুরান তেতলি গ্রামে রাহাতের বাড়িতে তার পিতা সুরমান আলী প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া চেকটি গ্রহণ করেন।

চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ ও এসএমপি'র উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. সোহেল রেজা (পিপিএম) এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২১ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টায় দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের মূল ফটকের একটু ভেতরে ছুরিকাঘাতে খুন হন পুরান তেতলি গ্রামের সুরমান মিয়ার ছেলে ও কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আরিফুল ইসলাম রাহাত। তাকে উপুর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় একই কলেজের বহিষ্কৃত ছাত্র ও ছাত্রলীগের কর্মী সামসুদ্দোহা সাদি ও তার সহযোগীরা।

আরিফুল ইসলাম রাহাতের হত্যার ঘটনার পরপরই ঘাতক হিসেবে সামনে আসে সামসুদ্দোহা সাদির নাম। ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে রাহাত তার চাচাতো ভাই আশরাফুল ইসলাম রাফির সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। পথে সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা করতে তিনি কলেজে যান।

কলেজ থেকে বের হওয়ার পথে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ঘটনার সময় রাহাতের সঙ্গে থাকা চাচাতো ভাই রাফির ভাষ্যে হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত হন সাদি। তবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে দ্রুতই সটকে পড়েন হত্যাকারীরা।
 
এ ঘটনায় পরদিন শুক্রবার রাতে রাহাতের চাচা শফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় সাদিসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি হিসেবে নামোল্লেখ করা হয় সিলাম পশ্চিমপাড়া গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে তানভির এবং আহমদপুর গ্রামের মৃত গৌছ মিয়ার ছেলে সানির।

রাহাতকে ছুরিকাঘাতের পরপরই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার একটি স্থানীয় বাজারে আশ্রয় নেন সাদি ও তার সহযোগীরা। তখনও তিনি জানেন না রাহাত মারা গেছেন। দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সাদির অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ওই বাজারে উপস্থিত হয়।

খুনের দিন বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে সাদির মুঠোফোনে একটি কল আসে। হত্যার ঘটনায় সাদির দিকে অভিযোগের তীর উঠে আসায় সিলেটের স্থানীয় এক সাংবাদিক সাদির বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার মুঠোফোনে কল দেন। ২৭ সেকেন্ডের ওই ফোনালাপেই প্রথমবারের মতো সাদি জানতে পারেন রাহাত মারা গেছেন।

এর পরপরই কল কেটে ফোন বন্ধ করে পালিয়ে যান কিলার সাদি। ফলে পুলিশ সাদির কাছাকাছি এসেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন প্রধান অভিযুক্ত সামসুদ্দোহা সাদি। পালিয়ে চলে যান কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ফিলিপনগর ইউনিয়নে। পাশেই ছিলো ভারতীয় সীমান্ত, মাঝখানে একটি নদী।

সীমানা পেরিয়ে ভারতে পালানোর সব পরিকল্পনা সেরে নিয়েছিলেন সাদি। কিন্তু তার সকল পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। খুনদের ৩ দিন পর গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সামসুদ্দোহা সাদিকে গ্রেফতার করে লিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

অপরদিকে, এ মামলায় আরও দুই আসামি- সাদি’র দুই বন্ধু তানভীর ও সানি পরবর্তীতে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। হত্যামামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। গ্রেফতার তিন আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।