• শনিবার   ০১ এপ্রিল ২০২৩ ||

  • চৈত্র ১৭ ১৪২৯

  • || ০৯ রমজান ১৪৪৪

সর্বশেষ:
সিলেটে বাবা-মা হত্যায় ছেলের মৃত্যুদণ্ড সিলেট পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হবেন শেখ হাসিনা, ব্লুমবার্গের ইঙ্গিত দক্ষিণ সুরমায় বিষপানে ছাত্রীর মৃত্যু সিলেট জালালাবাদ গ্যাসের নতুন এমডি মনজুর আহমদ সুনামগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড মাধবপুরে স্বামীর মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে স্ত্রীর মৃত্যু
১৯

‘নিজেকে মনে হচ্ছিল দোলনায় দোলা শিশু’

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

ঘুমন্ত নগরীতে হঠাৎ দানবীয় কম্পন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুঁড়িয়ে গেছে শয়ে শয়ে বাড়িঘর। তুরস্কের সীমান্তবর্তী শহর গাজিয়ানতেপ থেকে সিরিয়ার আলেপ্পো হয়ে হামা পর্যন্ত দীর্ঘ ৬০ কিমি. এলাকার সব শহরই যেন এক একটা মৃত্যুদ্বীপ। চারদিকে ধ্বংসযজ্ঞ, লাশের ওপরে লাশ। বাতাসে স্বজন হারানোর আর্তনাদ। কেউ ভয়ে-আতঙ্কে পালাচ্ছে। গাড়ি নিয়ে ছুটছে নিরাপদ গন্তব্যে। কেউবা নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রাস্তায়। অনেকে আবার একটুর জন্য বেঁচে ফিরেছেন। মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ভাগ্যজোরে বেঁচে ফেরা সেসব তুর্কি ও সিরীয়রা জানিয়েছেন তাদের ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের গা শিউরে ওঠা বাস্তবতা।

তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের এরডেম রয়টার্সকে বলেন, ‘তীব্র ঝাঁকুনি। নিজেকে মনে হচ্ছিল কোলে থাকা একটি শিশু। যাকে ইচ্ছামতো দোলানো হচ্ছে। আমি আমার জীবদ্দশার ৪০ বছরেও এমন ভয়াবহ কিছু দেখিনি। আমাদের শহরের বোধহয় একটি লোকও এখন বাড়িতে নেই। রাস্তাই তাদের গন্তব্য। কেউ গাড়ি চালিয়ে খোলা জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। কেউ রাস্তায়ই বসে আছে গাড়ির ভেতরে।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের বাসিন্দা সামের রয়টার্সকে বলেন, ‘বাড়ির দেওয়াল থেকে শখের চিত্রশিল্পটি পড়ে যায়। আমি খুব ভয় পেয়ে জেগে উঠি। এ যেন আমার জন্য এক দুঃস্বপ্ন।’ স্থানীয়রা জানান, তারা ভূমিকম্প টের পান ভোরে। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের বাসিন্দা সামের রয়টার্সকে জানান, ভূমিকম্পের সময় বাড়ির দেওয়াল থেকে পেইন্টিং খসে পড়ছিল।

‘আমরা নিশ্চিত ছিলাম, মরে যাব সবাই’ : তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আদানার বাসিন্দা নিলুফার আসলান বিবিসিকে জানায়, তার পরিবার নিশ্চিত ছিল তারা ভূমিকম্পে মারা যাবে। পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্ট ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল। তার পরিবার ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরিবারের সদস্যরা একে অপরকে একত্রে জড়ো হতে বলেছিল, যাতে মৃত্যু হলে সবাই একসঙ্গেই মরতে পারে।

ভূমিকম্প থেমে যাওয়ার পর আসলান বাইরে পালিয়ে যায়। বলেন, ‘আমি আমার সঙ্গে কিছু নিতে পারিনি এক জোড়া স্যান্ডেল ছাড়া। এমন তাণ্ডব জীবনে আর দেখিনি। চোখের সামনেই পাশের একটি বিল্ডিং ধসে পড়েছে।’

‘ঠান্ডা আবহাওয়া আর আফটার শক এখন নতুন ভয়’ : মালাটিয়ার অভিবাসী ২৫ বছর বয়সি ওজগুল কোনাকসি বিবিসির কাছে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। রাতে তিনি এবং তার ভাই সোফায় ঘুমাচ্ছিলেন। হঠাৎ কম্পন শুরু হলে তারা তাদের তিন বছর বয়সি ভাতিজাকে নিয়ে কোনো রকম বিল্ডিং ত্যাগ করেন। বেঁচে ফিরলেও পরবর্তী মৃদু কম্পন (আফটার শক) ও ঠান্ডা আবহাওয়া নিয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘পুনরুদ্ধার কার্যক্রম চলছে। প্রচণ্ড ঠান্ডা, তুষারপাতেও মানুষজন রাস্তায় অবস্থান করছে। কী করা উচিত, তা নিয়ে সন্দিহান সবাই। পরবর্তী মৃদু কম্পনে এই মাত্র চোখের সামনে একটি বিল্ডিংয়ের জানালা ধসে পড়েছে।’ তিনি জানান, ভূমিকম্পে তাদের বিল্ডিং মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশপাশের ৫টি বিল্ডিং ধসে পড়েছে।

‘মনে হচ্ছিল এই কম্পন আর থামবে না’ : তুরস্কের সাংবাদিক ইয়াদ কুর্দি দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপের বাসিন্দা। সোমবার ভোরে ভূমিকম্পের ভয়াবহ বর্ণনা দেন সিএনএনকে। বলেন, মনে হচ্ছিল এই কম্পন আর শেষ হবে না। যখন ভূমিকম্প শেষ হলো, তখন আমরা পরনের কাপড় পরেই কয়েক ইঞ্চি তুষারপাতে রাস্তায় নেমে পড়ি। বৃষ্টিতে আমার ৩০ মিনিট বাইরে থাকার পর ঘরে গিয়ে শীতের কাপড় আর বুট জুতা নিয়ে আসি।

সিএনএনের আবহাওয়াবিদ কারেন ম্যাগিনিস বলেন, ভূমিকম্পটি কয়েক লাখ মানুষকে প্রভাবিত করেছে। আবহাওয়া ঠান্ডা, বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর প্রভাব আপনার জীবনে আর পরিবারের ওপরও পড়বে। অঞ্চলগুলোয় ফসল উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে। এই প্রভাব সপ্তাহ বা মাস অবধিও গড়াতে পারে।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার