টমেটো ফ্লু: সংক্রমণের ভয়টা যখন শিশুদেরই

করোনভাইরাস এবং মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে লড়াইয়ের মাঝেই ভারতে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক যার নাম ‘টমেটো ফ্লু’। এই রোগটি কেরালায় শিশুদের মধ্যে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতের প্রতিবেশি দেশ হওয়ায় নতুন এই রোগ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ আর উৎকণ্ঠা পৃথিবীর আর দু’চারটি দেশের চেয়ে একটু হলেও বেশি।

টমেটো ফ্লু নিয়ে চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল 'দ্য ল্যানসেট'-এর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৬ মে মাসে কেরলার কোল্লামে পাঁচবছরের কম বয়সী এক শিশুর দেহে প্রথম এই ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল। তারপর থেকে ক্রমেই তা বেড়ে চলেছে। জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত নতুন এই ভাইরাসে ভারতের ৮২ শিশুর বেশি আক্রান্ত হয়েছে যেটা বেড়ে এখন পর্যন্ত শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। হাত, পা এবং মুখের রোগ এই টমেটো ফ্লু নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন নানা মহল। 

এখন জেনে নেয়া যাক এই টমেটো ফ্লু কী?

নাম টমেটো ফ্লু নাম হলেও টমেটোর সঙ্গে রোগটির কোনো সম্পর্ক নেই। এটি এক বিরল ভাইরাস ঘটিত রোগ। প্রাথমিক পর্যায়ে এই ভাইরাসে আক্রান্তের শরীরে টমেটোর মতো লাল ফুসকুরি দেখা দেয়। পরবর্তীতে ফুসকুরিগুলোই ফুলে টমেটোর মতো হয়ে যায়, সেখান থেকেই ভাইরাসটির নাম টমেটো ফ্লু রাখা হয়েছে। 

এখনও পর্যন্ত ১-৯ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যেই টমেটো ফ্লু দেখা গিয়েছে। তবে ৫ বছরের কমবয়সী শিশুরা এই ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে এই ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য সাধারণত যথেষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

টমেটো ফ্লু-এর লক্ষণ

টমেটো ফ্লু-এর প্রধান লক্ষণ হলো লাল ফুসকুরি দেখা দেয় এবং সেটা ফেটে গিয়ে তরল পদার্থ বের হয়। এছাড়াও ভাইরাসটির কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো হলো-

- মাত্রাতিরিক্ত জ্বর
- শরীরের নানা জায়গায় ব্যথা
- জয়েন্ট বা গাঁট ফুলে যাওয়া
- ত্বকের জ্বালা
- পানিশূন্যতা
- ক্লান্তি, গলা ব্যাথা, খাবারে অরুচি, পেটব্যথা
- বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া 

দ্য ল্যানসেট বলছে, টমেটো ফ্লু ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজের একটি ধরন হতে পারে। রোগটি শনাক্ত করার নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি নেই। তবে লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকেরা প্রথমে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া এবং জিকা ভাইরাসের পরীক্ষা করাচ্ছেন এবং এগুলার কোনটাও যদি না হয় তখন সেটাকে টমেটো ভাইরাস হিসেবে ধরে নিচ্ছেন।

জানা যাচ্ছে, যেসব এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়েছে সেখানে অতীতে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। 

কীভাবে টমেটো ফ্লু মোকাবিলা করা যায়?

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর মতে, রোগটি ছোঁয়াছে। তাই সহজে একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শিশুর দেহে ফ্লু-এর লক্ষণ দেখা দিলে তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং অবশ্যই এক সপ্তাহ আলাদা রাখতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো রোগীকে প্রচুর পরিমাণে জল এবং অন্যান্য লিক্যুইড সাপ্লিমেন্ট খাওয়াতে হবে যাতে পানিশূন্যতা না হয়। সাথে সঠিক পরিমাণে বিশ্রামও অত্যাবশ্যক।

এছাড়া রোগীর ব্যবহৃত জামা-কাপড়, থালা-বাটি সবকিছু পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই হাতে গ্লাভস পরে নিতে হবে। কেউ যদি রোগীর সংস্পর্শে আসে তাহলে তাকে অবশ্যই হাত সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। আক্রান্ত শিশুর কোনো কিছু ব্যবহার করা যাবে না।

কীভাবে চিকিৎসা

টমেটো ফ্লুর নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই তবে চিকনগুনিয়া, ডেঙ্গুর মতোই এর চিকিৎসা পদ্ধতি। ল্যানসেটের রিপোর্ট অনুযায়ী, গরম পানি স্পঞ্জিং করা, নিভৃতবাস, বিশ্রাম আর প্রচুর জলজাতীয় দ্রব্য খাওয়াই এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা। লক্ষণ বেশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে ওষুধ খাওয়াতে হবে।