চিকিৎসকের পাশবিকতা থেকে রক্ষা পেল না নার্স

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক জসীমের বিরুদ্ধে এক নার্সকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীকালে ওই নার্স থানায় অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে সোমবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় এ বিষয়ে মামলা হয়। পরে পুলিশ জসীম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়।

এ দিকে ওই চক্ষু হাসপাতালের মালিককে অফিস কক্ষে আটকে ৭ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগে উপজেলা ছাত্রলীগ আহ্বায়ক মাসুদ করিম রানাসহ ছয়জনের নামে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বড়তাকিয়া চক্ষু হাসপাতাল নামে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ডা. জসিম উদ্দিনের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বাদী হয়ে মিরসরাই থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

চাঁদাবাজির মামলার বাদী জসীমের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন অভিযোগ করেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তুরিণ, ইউছুফ. মাসুদ করিম, আবিবা, সোহেল, হাসান তার স্বামী জসীম উদ্দিনকে জোরপূর্বক হাসপাতালের একটি কক্ষে আটকে রেখে হাসপাতালের অভ্যর্থনা ডেস্কে থাকা এক নার্সকে ত্রিশ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করতে চাপ প্রয়োগ করেন।

চাঁদা দাবির বিষয়ে সাবিনা বলেন, প্রথমে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে প্রায় ৩ ঘণ্টা হাসপাতালের অফিস কক্ষে আটকে রাখে আমার স্বামী জসিম উদ্দিনকে। এরপর তারা এক পর্যায়ে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে সাত লাখ টাকা দিবে জানিয়ে জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে একটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

যদিও হাসপাতালের ওই নার্স মামলায় অভিযোগ করেন, হাসপাতালের মালিক ও ওই হাসপাতালের চিকিৎসক জসীম উদ্দিন গত ৬ আগস্ট তাকে মালিকের কক্ষে ডেকে পাঠান। এ সময় হাসপাতাল প্রায় লোকজন শূন্য ছিল। তিনি মালিকের কক্ষে গেলে জসীম উদ্দিন হঠাৎ কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিয়ে জোরপূর্বক তাকে চুমু দেয় এবং শ্লীলতাহানি করে। সে কক্ষে থেকে দৌড়ে বের হয়ে বিষয়টি তার খালাতো ভাই নুর হাসান ও তার প্রতিবেশী মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ করিমকে জানান।

ঘটনার পর হাসপাতালের মালিক জসীম উদ্দিন সেখান থেকে চট্টগ্রাম শহরে চলে যান। এরপর গত শনিবার (১৩ আগস্ট) তিনি হাসপাতালে ফিরে আসে। জসীম উদ্দিন হাসপাতালে আসার খবর পেয়ে নার্সের খালাতো ভাই নুর হাসান, মাসুদ করিমসহ কয়েকজন গিয়ে জসীম উদ্দিনের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে। কিন্তু সমাধানের ব্যর্থ হলে তারা ওই নার্সকে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার পরামর্শ দেন।

ওই নার্স অভিযোগ করেন, তিনি অভিযোগ নিয়ে থানায় আসার আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. জসীম উদ্দিনের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ করিমসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে চেয়েছিল, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কেউই চাঁদা চায়নি।

এ সময় শ্লীলতাহানির ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওই অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবি তার।

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ করিম অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, হাসপাতালের মেয়েটি শ্লীলতাহানির বিষয়ে তাকে জানালে তিনি কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এখন উল্টো তার বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।

খইয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের হাসপাতাল এলাকার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোপাল চৌধুরী জানান, শ্লীলতাহানির শিকার ওই মেয়েটি তার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। কিন্তু তিনি ঘটনাটি সোমবার রাতে ওই মেয়ের কাছে থেকে জেনেছেন। তখন বিষয়টি নিয়ে এতই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তার আর কিছুই করার ছিল না। তবে হাসপাতালে চাঁদাবাজি অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয় এবং তাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি।

মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেন জানান, বড়তাকিয়া চক্ষু হাসপাতালের একটি ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষই দুইটি মামলা করেছে। শ্লীলতাহানির অভিযোগ হাসপাতাল মালিক জসীম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। দুইটি অভিযোগই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।