ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৫০

ইনডেমনিটি কলঙ্কিত অধ্যায়

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২  

ইনডেমনেটির মতো ঘৃণ্য একটি অধ্যাদেশ খন্দকার মুশতাক আহমদের মাধ্যমে জারি হলেও এর দায় মূলত জিয়াউর রহমানের। মোশতাকের জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বৈধতা দেয়া না হলে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সামরিক আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই ১৫ আগস্টের খুনিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যেত। জিয়াউর রহমানই ব্যবস্থা নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক, ভবিষ্যতে কেউ যাতে ব্যবস্থা না নিতে পারে সে ব্যবস্থা করে দিলেন এবং ঐ সময়ে একটি প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে গেল যে, যেহেতু এটি সংবিধানের অংশ হয়ে গেছে, কাজেই এটি আর পরিবর্তন করা যাবে না।

আমাদের ইতিহাসে কিছু সন-তারিখ আছে, যা অত্যন্ত গৌরব, আনন্দ বা মহত্তম অর্জনের। যেমন ১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ। আবার কিছু সন-তারিখ আছে, যা আমাদের জন্য কলঙ্ক ও লজ্জার। যেমন ১৫ আগস্ট। ৯ জুলাইও তেমন একটি কলঙ্কের দিন। ১৯৭৯ সালের এই দিনে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান সংবিধানকে কলুষিত করেন। তিনি পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে মোশতাকের জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের পাকাপোক্তভাবে দায়মুক্তির ব্যবস্থা করেন। ইতিহাসে এই দিনটি নিঃসন্দেহে একটি কালো দিবস হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ্যায় হচ্ছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। এদিন জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর প্রায় দেড় দশক দেশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সামরিক শাসন চলে। পৃথিবীর কোনো সংবিধানে লেখা নেই যে, খুনিদের বিচার করা যাবে না। অথচ বাংলাদেশে তা ঘটেছিল। যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত লজ্জাজনক কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল।

ন্যায়বিচারপ্রাপ্তি প্রত্যেক মানুষের জন্মগত ও মৌলিক অধিকার। একজন অপরাধীরও ন্যায়বিচার পাবার, আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার আছে। কিন্তু বাংলাদেশের জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পর খুনিদের যাতে বিচার না হয় সেজন্য জারি করা হয়েছিল অবৈধ ও অসাংবিধানিক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। এমনকি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর ২০ বছর পর পর্যন্ত কোনো রাষ্ট্রপতি বা সরকারপ্রধান সেটি বাতিল করেননি। উল্টো নিজেদের সুবিধা নেয়ার জন্য ওই কুখ্যাত অধ্যাদেশটি বহাল রাখেন।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রকারী হিসেবে আবিভূর্ত হন। সে সময় বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। জিয়াউর রহমানের ইচ্ছায় ১৯৭৬ সালের ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি সায়েম জেনারেল জিয়ার কাছে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল সায়েম রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং জিয়া রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সামরিক আইনের অধীনে দেশে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়। ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সামরিক আইন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

ফলে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাকের জারি করা ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশটি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। ফলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পথ সুগম হয়। কিন্তু সে পথ আটকাতেই জিয়া সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মধ্যে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে জুড়ে দিয়ে একে সাংবিধানিক আইনের অন্তর্ভুক্ত করেন।

চতুর শাসক জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনি বৈধতা দেন। সংসদে উত্থাপিত আইনটির নাম ছিল ‘সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯’। এই সংশোধনীর মাধ্যমে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বৈধতা দেয়ায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা পাকাপোক্তভাবে দায়মুক্তি পেয়ে যায়।

পঞ্চম সংশোধনীতে বলা হয়, “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখের (উভয় দিনসহ) মধ্যে প্রণীত সকল ফরমান, ফরমান আদেশ, সামরিক আইন প্রবিধান, সামরিক আইন আদেশ, ও অন্যান্য আইন, উক্ত মেয়াদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত আদেশ, কৃত কাজকর্ম, গৃহীত ব্যবস্থা বা কার্যধারাসমূহ, অথবা প্রণীত, কৃত, বা গৃহীত বলিয়া বিবেচিত আদেশ, কাজকর্ম, ব্যবস্থা বা কার্যধারাসমূহ এতদ্বারা অনুমোদিত ও সমর্থিত হইল এবং ঐ সকল আদেশ, কাজকর্ম, ব্যবস্থা বা কার্যধারাসমূহ বৈধভাবে প্রণীত, কৃত বা গৃহীত হইয়াছে বলিয়া ঘোষিত হইল, এবং তত্সম্পর্কে কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো কারণেই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।”

ইনডেমনেটির মতো ঘৃণ্য একটি অধ্যাদেশ খন্দকার মুশতাক আহমদের মাধ্যমে জারি হলেও এর দায় মূলত জিয়াউর রহমানের। মোশতাকের জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বৈধতা দেয়া না হলে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সামরিক আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই ১৫ আগস্টের খুনিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যেত। জিয়াউর রহমানই ব্যবস্থা নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক, ভবিষ্যতে কেউ যাতে ব্যবস্থা না নিতে পারে সে ব্যবস্থা করে দিলেন এবং ঐ সময়ে একটি প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে গেল যে, যেহেতু এটি সংবিধানের অংশ হয়ে গেছে, কাজেই এটি আর পরিবর্তন করা যাবে না। এই দোহাই দিয়েই জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরও বিচারপতি আবদুস সাত্তার, এইচ এম এরশাদ এবং ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল বা রহিত করেননি। বরং খুনিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। সামরিক স্বৈরাচারদের ভোট ভোট খেলায় খুনিদের এমপিও বানানো হয়েছে।

জিয়াউর রহমানের কারণে সাংবিধানিকভাবে দায়মুক্তি পেয়ে খুনিরা ১৫ আগস্টের হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা প্রকাশ্যেই বলে বেড়াত। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমাদের জাতীয় রাজনীতির ট্রাজেডি হলো, যারা এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করেছিল, মূলত তারাই এই দায়মুক্তি অধ্যাদেশটি করে। আর সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯-এর ক্ষমতাবলে ভবিষ্যতে কেউ যাতে ১৫ আগস্টের খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে পারে, সে ব্যবস্থাটিকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করা হয়েছিল।

সভ্যতা ও মানবতার ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। যা ছিল স্পষ্টতই আইনের শাসনবিরোধী। এই অধ্যাদেশের কারণে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে পারেনি কেউ, বিচার চাইতে পারেননি বাবা-মা, ভাইহারা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বিল বাতিল করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বরের সংসদে পাস হয় মানবতা ও সভ্যতাবিরোধী কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বিল। ঘোচানো হয় ২১ বছরের জাতীয় কলঙ্ক। যার মাধ্যমে বাতিল হয়ে যায় কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ, খুলে যায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ।

এই অধ্যাদেশ জারির পেছনে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কলকাঠি নেড়েছেন। তিনি ইনডেমনিটি আদেশ জারির ঠিক আগেই সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে এবং খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে জেনারেল জিয়া খুনিদের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।

জেনারেল জিয়ার সেই অপরাজনীতিকেই পরবর্তী সময়ে বিএনপির অনুসারীরা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর যেদিন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ রহিত করার জন্য সংসদে আইন পাস হয়, সেদিন বিএনপি ও জামায়াতের সংসদ সদস্যরা সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন। খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি বাতিলের বিরুদ্ধে হরতাল আহ্বান পর্যন্ত করেছিলেন।

ইনডেমনিটি আইন বাতিলকে চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৭ সালে খুনি শাহরিয়ার রশিদ উচ্চ আদালতে যে রিট দায়ের করেছিল সে মামলায় বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব উদ্দীন আহমেদকে নিরপেক্ষ পরামর্শ দেয়ার জন্য আদালতের মিত্র তথা অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তিনি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বৈধ আইন হিসেবে যুক্তি তুলে ধরেন। বিএনপির রাজনীতির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়া যে সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করে যে অন্যায় করেছেন, তার অনুসারীরা এখনও তা উপলব্ধি করে না।

উল্লিখিত ইতিহাসটি নতুন করে বলা প্রয়োজন। কারণ, ইনডেমনিটি আইন বিলুপ্তকরণে শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া কেউই পদক্ষেপ নেয়নি। এদেশে কারা খুনের রাজনীতি প্রবর্তন করেছে, কারা খুনিদের রক্ষার বিধান সংবিধানে যুক্ত করে সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছে, কারা এদেশের রাজনীতিকে কলুষিত করেছে, সেই ইতিহাস জানা দরকার। এটা জানা দরকার গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ ও ভবিষ্যতের স্বার্থে।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা, প্রবন্ধকার।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার