ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
৬৫

বাঘের বন্ধু, সিংহের দোস্ত কাতারপ্রবাসী কে এই যুব্ক !

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২  

কাতারে কোলেপিঠে করে ছোট থেকে বড় করেছেন একটা বেঙ্গল টাইগার। আড়াই বছরের দেখভালে তার সঙ্গে ভাবও হয়েছিল ভালো। এখানেই শেষ না, এরপর একটা সিংহশাবককেও আদরে-আপ্যায়নে বড় করেছেন কাজী আলমগীর হোসেন। হিংস্র দুই প্রাণীর সঙ্গে বন্ধুত্বের গল্প শুনলেন সজীব মিয়া

২০১৯ সালের এক বিকেল। ল্যান্ডক্রুজারে মজলিশে (অতিথিশালা) এসে হাজির আমার কফিল (নিয়োগকর্তা)। গাড়ি থেকে নেমেই আমাকে ডাকলেন। কাছে যেতেই গাড়ি থেকে কিছু একটা নামাতে বললেন। লোহার খাঁচাটা নামাতে গিয়ে আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। ভেতরে একটা বাঘের বাচ্চা! টিভি, সিনেমায় বাঘ দেখেছি। মানুষের মুখে বাঘের গল্পও শুনেছি। সেই প্রথম সামনাসামনি বাঘের বাচ্চা দেখা। আমার চোখ–মুখ দেখেই হেসে ফেললেন কফিল, ‘আলমগীর, ভয় পাইছস নাকি?’

কিছু বলার আগেই আমার হাতে ফিডার ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ভয়ের কিছু নেই। দুধ খাওয়া।’ ভয়ে ভয়ে বাঘের বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলাম। মুখে ফিডার ধরতেই দুধ খেতে থাকল।

সেদিন থেকে ওকে নিয়েই কাটতে থাকল আমার দিন।

মজলিশের পেছনে তিন রুমের ঘর তুলে ওর থাকার জায়গা করা হলো। এক রুমে এসিও লাগানো হলো। তিন দিন পরপর ওকে গোসল করাতাম। প্রতিদিন বিকেলে একসঙ্গে খেলতাম। দুধ খেতে খেতে দুষ্টুমি করত। ডাক্তার একবার  টিকা দিচ্ছে, আমি মুখটা ধরে আছি। গায়ে সুচ ফুটতেই কামড় বসিয়ে দিল আমার তর্জনীতে। নখের পাশ দিয়ে দাঁত বসে গেল। গল গল করে রক্ত বেরিয়ে এল। ভাগ্য ভালো পুরো আঙুলটা মুখের ভেতর ঢোকেনি


একসময় দুধ খাওয়া ছেড়ে মুরগির মাংস খাওয়া ধরল। ছোটবেলায় আমাদের যেমন দাঁত পড়ে, একটু বড় হলে বাঘের বাচ্চারও দাঁত পড়ে গেল। নতুন দাঁত উঠলে খাবারের পরিমাণ বেড়ে গেল। আস্ত মুরগিতে খিদে মিটত না। তার সঙ্গে ছাগলের মাংসও সেদ্ধ করে দিতে হতো। এরপর তো কাঁচা মাংসই খেতে শিখে গেল।

আমি আর কফিল ছাড়া কেউ আর তখন ওর সামনে ভিড়তে পারে না। কফিল এলে সাঁতার করাতাম। মজলিশে যারা আসত, বাঘ দেখতে চাইত। কিন্তু কেউ কাছে ঘেঁষতে সাহস পেত না। একবার হুংকার দিলেই দৌড়। মজলিশের লোকজনও সবাই ভয়ে দূরে দূরে থাকত। বেশির ভাগ সময় ওর সঙ্গে থাকতে থাকতে আমার বন্ধুর মতো হয়ে গেল। ওর চোখ দেখেই বুঝতাম মন খারাপ কি না, রাগ করেছে কি না। দুষ্টুমি করছে কি না, সেটাও বুঝতাম।

এমনও রাত গেছে, আমার ভীষণ মন খারাপ হলে ওর কাছে যেতাম, গায়ে হাত বুলিয়ে দিতাম, খেলতাম। আমার মন ভালো হয়ে যেত।

আল্লুকে আর দেখতে যাই না
আমি ওকে ‘আল্লু’ ডাকতাম। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় একটা বাঘের বাচ্চার নাম ‘জো বাইডেন’ রেখেছিল। এটা জেনে আল্লুকে আমি ‘পুতিন’ বলে ডাকতাম। ওর বয়স যখন দুই বছর, একদম বড়সড় বাঘের মতোই শক্তিশালী হয়ে উঠল আল্লু। যদিও আমার কাছে ছোটই মনে হতো। ওর সঙ্গে বিভিন্ন মুহূর্ত ভিডিও করতাম। এসব বন্ধুদের পাঠাতাম। ফেসবুকেও পোস্ট করতাম।

এরই মধ্যে আমার বাবা মারা গেল। নানা কারণে সে সময় দেশে যেতে পারিনি। তবে তখন থেকেই দেশে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকি। কফিলকে বললে তিনি ছুটি দিলেন। কিন্তু আমি দেশে গেলে ‘আল্লু’র দেখাশোনা করবে কে? সিদ্ধান্ত হলো চিড়িয়াখানায় রেখে আসা হবে। তত দিনে আল্লুর সঙ্গী নেওয়ার বয়সও হয়েছে।

সেদিন কী যে খারাপ হলো আমার মন। আর কোনো দিন আল্লুর সঙ্গে দেখা হবে না, ভাবতেও পারছিলাম না। ওর যত্নআত্তি করতে পারব না। আমার কত জামাকাপড় যে ও ছোটবেলায় আঁচড় দিয়ে ছিঁড়েছে, হিসাব নেই। এখানে কাপড়চোপড়ের অনেক দাম। আমাদের দেশে ভ্যানগাড়িতে যে টি–শার্ট ৮০-১০০ টাকা, তার দাম এখানে ৫০০ টাকা। কোনো কাপড় ছিঁড়লে খুব মন খারাপ হতো। আবার দুষ্টুমি করলেই মনটা ভালো হয়ে যেত।

২০২১ সালের জুনে দেশে যাওয়ার আগের দিন আল্লুকে গাড়িতে করে চিড়িয়াখানায় রেখে এলাম। পরে কয়েকবার দেখতে গিয়েছি। আমাকে দেখেই চিনেছে। কিন্তু চিড়িয়াখানায় ওর খুব কষ্ট। তা-ই আর দেখতে যাই না।

ছুটিতে বাড়ি চলে যাওয়ার পর প্রায়ই কফিল আমার খোঁজ নিতেন। জানতে চাইতেন কবে ফিরব। একদিন হোয়াটসঅ্যাপে কিছু ছবি পাঠান। দেখি ফুটফুটে একটা সিংহের বাচ্চা এনেছেন। ‘তোর জন্য সিংহ আনছি,’ বলে আরও কিছু ছবি পাঠান।

বাড়িতে আসার সাত মাস হয়েছে। সিংহ আনার পর কফিল তাগাদা দিলেন। তাঁর সহায়তায় কাতারে ফিরে আসি। মজলিশে ঢুকেই সিংহের বাচ্চার কাছে যাই। ড্যাব ড্যাব চোখে আমাকে দেখে আফ্রিকান সিংহশাবক। বয়স তখন ছয় মাসের মতো। দুধ খায়। প্রথম দিনেই ওর সঙ্গে ভাব হয়ে যায়।

প্রতিদিন দুধ খাওয়াতাম। বিকেলে খেলতাম। একদিন বিকেলে খেলছিলাম। হঠাৎ কী হলো জানি না, আমার মুখে থাবা মারল। মুখটা সরাতে সরাতেও নাকের ডগায় হালকা আঁচড় লাগল। তবে বড় কিছু হয়নি। তিন মাস পরপর ডাক্তার এসে ওর নখ কেটে দিয়ে যায়।

বাঘ পালনের অভিজ্ঞতা খুব কাজে দিয়েছে। দিনে দিনে এখন ওর বয়স প্রায় দেড় বছর। সিংহের মতোই গর্জন করে! স্বাস্থ্যও ভালো হয়েছে। বনে থাকলে তো কষ্ট করে শিকার ধরতে হতো। কিন্তু এখানে  সকালে দেড় কেজি করে মাংস খেতে দিই। পানি ময়লা হলে পাল্টে দিই। সন্ধ্যার আগে বাইরে বের করে দিই। রাত আট কি নয়টার দিকে রাতের  খাবার দিই।

কফিল সিংহটাকে ‘গেতু’ নামে ডাকে। আরবিতে গেতু অর্থ সম্ভবত বড় বিড়াল। ‘আল্লু’র মতো গেতুও আমার বন্ধু হয়ে উঠেছে। সিংহটার কাছেও আমি আর কফিল ছাড়া কেউ যেতে পারে না। কয়েক দিন পরপর দুজনে সাঁতার করাই। আনন্দই লাগে।

মাঝেমধ্যে ভাবি, বাঘ-সিংহ নিয়ে কত গল্প শুনেছি। সুন্দরবনে বাঘে মানুষ খায়। টিভিতে দেখি কী হিংস্রভাবে শিকার ধরে। আর আমি সে-ই বাঘ-সিংহেরই বন্ধু হয়ে গেছি।

চট্টগ্রামের বন্দর কলোনিতে আমরা জন্ম। আমার বয়স যখন চার বছর, তখন আমার মা মারা যায়। বড় বোনটাই আমাকে মানুষ করেছে। আব্বা রিকশা মেকানিক ছিলেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান বলে তেমন পড়াশোনার সুযোগ পাইনি। ছিন্নমূল শিশুদের একটা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। তারপর আমাকে একটা ওয়েল্ডিং কারখানায় কাজে ঢুকিয়ে দেয় আব্বা। অল্প বেতনে কাজ শিখতাম। সারা দিন কাজ করলেও পড়াশোনার খুব ইচ্ছা হতো। স্কুলে তো যেতে পারতাম না, বিকেলে দোকানে গিয়ে পত্রিকা পড়তাম। বইও সংগ্রহ করে পড়েছি। হুমায়ূন আহমেদ, সমরেশ মজুমদার, কাশেম বিন আবুবকরের বই পড়েছি।

২০১১ সালে ওমানে যাওয়ার সুযোগ পেলাম। ড্রিল ওয়ার্কশপে কাজ। সবার চেয়ে ভালো কাজ করতাম। কিন্তু পারিশ্রমিক কম ছিল। পরে বুঝেছি, মালিক আমাকে ঠকিয়েছে। বুঝলে হবে কী, ফেরার উপায় ছিল না। আড়াই লাখ টাকা ধার করে গেছি, চাইলেই তো আর ফিরে আসা যায় না। অনেক পরে দেশে ফিরে যাই।

কিছুদিন বাড়িতে থেকে ২০১৬ সালে কাতারে আসি।

এক নিকটাত্মীয় ভালো একজন কফিলের (নিয়োগকর্তা) হাতে আমাকে তুলে দেন। তাঁর অধীনে ওয়েল্ডার (ঢালাইকার) হিসেবে কাজ করতাম। কারখানায় জানালার গ্রিল, দোকানের শাটার, বড় ফটক, কলাপসিবল গেটসহ নানা কিছু বানিয়েছি। এসব আমি ভালোই বানাতে পারি। কাজের প্রশংসাও করতেন অন্যরা। বেতনও ভালো ছিল। কিন্তু এক বছর পর কফিল মারা গেলে কারখানাটা বন্ধ হয়ে যায়।

কফিলের তিন ছেলে। কারখানায় আমরা যাঁরা কাজ করতাম তাঁদের সবার দায়িত্ব নেন বড় ছেলে। তাঁর অনেক ব্যবসা। রাজার মতো চালচলন। অবশ্য কাতারের মানুষেরা বেশির ভাগই ধনী। তিনি আমাকে নিয়ে যান তাঁর একটা মজলিশে। বিশাল জায়গা নিয়ে খামারবাড়ি। কাতারের আল-শাহানিয়া এলাকায় এমন শত শত খামারবাড়ি দেখেছি। এই খামারবাড়ির এক পাশে উট রাখা হয়েছে। রেসের উট। আরেক পাশে মজলিশ। পেছনে ব্যাডমিন্টন কোর্ট, সুইমিংপুলসহ অবসর কাটানোর নানা ব্যবস্থা। সেখানে পরিচ্ছন্নতা, মেহমানদারির কাজ। দীর্ঘদিন সে কাজই করছি।

তারপর তো বাঘ–সিংহের তত্ত্বাবধায়ক হয়ে গেলাম।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার