ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
১৭৭৫

পরীক্ষা হোক জ্ঞান অর্জনে সহায়ক

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০১৮  

পরীক্ষা নিয়ে তোলপাড় ও পাসের জন্য কোমলমতি শিশুদের অস্থিরতা সর্বমহলের দৃষ্টি কেড়েছে। শিশুদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘শিক্ষা যেন শিশুর জন্য বোঝা না হয়, যাতে তারা নিজেরা শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে পড়াশোনায় উৎসাহ বোধ করে।’ এ ব্যাপারে স্কুলগুলো ও পরিবারের মধ্যে পরিবেশ সৃষ্টি করার জোর তাগিদ দিয়েছেন তিনি। পরিবেশ সৃষ্টির অন্যতম চ্যালেঞ্জ শিশুদের পরীক্ষা ব্যবস্থা। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে সাধারণ মানুষের সন্তানদের শিক্ষার অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি অনেকটা সম্ভবপর হয়েছে।

তবে বর্তমান সরকার বিগত সময়ের তুলনায় শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটালেও ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষক সংকট, শিক্ষকদের আর্থিক দৈন্য দূরীকরণে সময়ক্ষেপণ, নানা ধরনের পরিবেশগত সংকট, সর্বোপরি দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রতিটি স্তরের শিক্ষার্থীদের গাইড বই নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা সরকারের সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে। বর্তমান ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা নোট ও গাইডবইয়ের সহায়তা নিতে বাধ্য হয়। নোট ও গাইডবই শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষক, অভিভাবকদেরও ‘বন্ধু’ হিসেবে সমাদৃত। বিশেষ করে পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন, শিক্ষকদের শিক্ষাদানবহির্ভূত কাজের চাপ, নানা কারণে পাঠ্যবই সঠিকভাবে পড়াতে না পারা- এসব কিছু মিলে মূল বইকে সবাই অকার্যকর করে ফেলেছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা ভালো ফলের পেছনে ঘুরছেন। সবাই অপেক্ষা করছে সমাপনী পরীক্ষার ফলের ওপর। ভালো ফলের জন্য মন্ত্রী মহোদয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বাহবা নেবেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে সচিব, ডিজি, ডিপিইও, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা, সর্বোপরি শিক্ষার্থী বাহবা নেবে অভিভাবকদের কাছ থেকে।


আহা কী আনন্দ! শিক্ষার্থীর ঘরে ঘরে আনন্দের আভা। বিদ্যালয়গুলোয় শতভাগ পাস ও জিপিএ ৫-এর পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনের হিড়িক পড়ে যায় সর্বত্র। প্রাথমিকে ভালোভাবে পাস করা অনেক শিক্ষার্থীকে বাংলা, ইংরেজি দেখে দেখে পড়তে বলা হলে তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায় না।  শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত যোগ্যতা অর্জন না করেই ভালো ফল করল। এ ভালো ফলের আনন্দ সর্বনাশ ডেকে আনবে আগামী প্রজন্মের জন্য। দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য আর সময়ক্ষেপণ নয়। আমাদের শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন। ‘‘জ্ঞান অর্জন ছাড়া পাসের উৎসব’’ বন্ধ করতে হবে।

আমাদের বাবা-মায়েরা সকালে ঘুম থেকে উঠে কখনও জানতে চান না তাদের সন্তানরা মুক্ত বাতাসে কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করেছে কি-না, টিভিতে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখেছে কি-না, বিকালে খেলাধুলা করেছে কি-না, বিশেষ জাতীয় দিবসে দর্শনীয় স্থানে গিয়েছে কি-না। সহপাঠী ও গুরুজনদের সঙ্গে তাদের আচরণই বা কেমন। তারা শুধু জানতে চান তাদের সন্তানরা স্কুল-কোচিংয়ের পড়া বা হোমওয়ার্ক কি করছে। কোচিং বা গৃহশিক্ষকের কাছে সময়মতো কি পড়ছে। মডেল টেস্ট পরীক্ষার জন্য আর কী কী পড়তে হবে।

জাতীয় পর্যায়ে পরীক্ষা নিয়ে শিশু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ঘাম ঝরানো অবস্থা। পরীক্ষার হলে শিশুরা দেখাদেখি করে লিখছে। কোনো কোনো স্থানে শিক্ষকরা প্রশ্নের উত্তর শিশুদের বলে দিচ্ছেন বা সরবরাহ করছেন। শিশুরা এ ধরণের অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ঘৃণার চোখেই দেখছে। সরকার ও সংশ্লিষ্টরা যদি মনেপ্রাণে দেশকে ভালোবাসে, তবে আগামী প্রজন্মকে রক্ষার জন্য, শিক্ষার জন্য অর্থ ব্যয়কে ভর্তুকি হিসেবে না দেখে প্রচুর অর্থ এক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে। এ পরীক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসার মতো ত্রুটিপূর্ণ। আধুনিক পরীক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যাতে শিশুরা সব ধরনের যোগ্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে কর্মক্ষম সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ পায়। এজন্য শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমার মতে, শুধু লিখিত পরীক্ষার আয়োজন না করে শিক্ষার্থীর আচরণগত পরিবর্তন, রিডিং স্কিল বৃদ্ধির জন্য ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে কাঙ্খিত যোগ্যতা অর্জন করিয়ে নিতে হবে। বর্তমান পরীক্ষা ব্যবস্থায় শিশুর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলার প্রতি মোটেও গুরুত্ব দেয়া হয় না। শিশুকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এ বিষয়গুলো চর্চার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে সৃজনশীল কাজের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।

প্রত্যেক বইয়ের অধ্যায়ভিত্তিক স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রশ্ন পুস্তিকা বিদ্যালয়ে সরবরাহ করতে হবে। শিক্ষক অধ্যায় শেষে ওই প্রশ্ন পুস্তিকা অনুসারে প্রশ্ন মূল্যায়নের আগেই শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করবেন। শিক্ষার্থীরা বাড়িতে প্রশ্ন অনুসারে উত্তর তৈরির অনুশীলন করবে এবং বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট সময়ে এসে শিক্ষকদের সামনে লিখবে, বলবে বা ব্যবহারিক কাজ করে দেখাবে। কোনো কারণে শিক্ষার্থী কাঙ্খিত যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হলে বিশেষ ব্যবস্থাধীনে শিক্ষক তার যোগ্যতা অর্জনে সহযোগিতা করবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময়সূচি শিক্ষার্থীর খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ থাকে না। বিকেল বেলা খেলাধুলা করার জন্য শিশু বান্ধব সময়সূচি প্রয়োজন।  

পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষার বিশাল কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রের যে বিশাল ব্যয় হচ্ছে, তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? এটা ভেবে দেখতে হবে। পরীক্ষায় পাস করাটাই শুধু আনন্দ হলে হবে না, বরং পরীক্ষা হতে হবে শিক্ষার্থীর আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু। যাতে শিশুরা হ্যামিলনের বংশীবাদকের পিছু নেয়ার মতো বিদ্যালয়ের দিকে ছোটে। বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি, সময়সূচি বিদ্যালয়ের ভেতরকার পরিবেশ, শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, শিক্ষকদের শিক্ষাদান ও আচরণ- আমাদের দেশে এর কোনোটিই শিশু শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে শিশু বিকাশের কেন্দ্র হিসেবে যথাযথভাবে তৈরি করতে হবে। সেখানে নাচ, গান, ছবি আঁকা, অভিনয়, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পোস্টার তৈরি, দেয়াল প্রকাশনাসহ সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড  শেখাতে হবে। খেলাধুলাসহ আনন্দঘন পরিবেশে শিশু শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদানের বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সবার আগে শিক্ষক স্বল্পতা দূর করতে হবে। বেতন কাঠামো এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে মেধাবীরা এ পেশায় আসে এবং অন্য পেশায় চলে না যায়। শিক্ষকদের মর্যাদা থাকবে সবচেয়ে বেশি। তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় তাদের আর্থিক দৈন্যে রেখে স্কুলমুখী করানো শুধুই স্লোগানসর্বস্ব ব্যাপার হবে। তাই সব শিক্ষককে প্রথম শ্রেণির মর্যাদাসহ আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। যাতে তারা বাড়তি আয়ের জন্য অন্য কোনো কাজ করতে বাধ্য না হন। ভালো ফল করেও শিক্ষার্থীরা লাভবান হতে পারছে না। বরং শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ ও জাতি। 

জিপিএ ৫-এর বন্যায় ক্ষণস্থায়ীভাবে লাভবান হচ্ছেন শুধু মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। কারণ ফল প্রকাশের দিন সব দোকানের মিষ্টি ফুরিয়ে যায়। এ মিষ্টি খাওয়া ও খাওয়ানোর আনন্দে বিভোর না হয়ে জ্ঞান অর্জনকে আনন্দময় করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।  শিশুর কাঙ্খিত জ্ঞান অর্জনের জন্য বাস্তবভিত্তিক পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। শিক্ষার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করা হলে দেশ ও জাতির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। সংশ্লিষ্টরা কেন কানে তুলা লাগিয়ে ঘুমাচ্ছে? সকলে এ বিষয়টি উপলব্ধি করবেন, এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

লেখক : আহ্বায়ক, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ এবং প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষা।

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার